‘শিশু বক্তা’ হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে গেছেন কারাগারে। অন্যদিকে গাজীপুরে তার মাদ্রাসাটিতে তালা ঝুলছে। মাদানীকে গত বুধবার নেত্রকোনায় তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তারের পর আজ বৃহস্পতিবার তাকে গাজীপুরের গাছা থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। গত ১০ ফেব্রুয়ারি এক ওয়াজ মাহফিলে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার ইলতুৎমিশ সাংবাদিকদের বলেন, ওই মামলায় আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে মাদানীকে। সকাল ১০টার দিকে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যদের প্রহরায় গাজীপুর জেলা কারাগার নেওয়া হয় মাদানীকে। গাজীপুর জেলা কারাগারের সুপার মো. বজলুর রশিদ আকন্দ জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৫ মিনিটে মাদানীকে কারাগারে বুঝে পেয়েছেন তারা।
ইলতুৎমিশ জানান, গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজারের কলমেশ্বর এলাকায় একটি কারখানা চত্বরে গত ১০ফেব্রুয়ারি এক ওয়াজ মাহফিলে সরকারকে কটাক্ষ করে বক্তব্য দিয়েছিলেন মাদানী। ওই ঘটনায় বুধবার দিবাগত রাত সোয়া ২টার দিকে গাছা থানা মামলা হয়েছে। র্যাব-১ এর ডিএডি আব্দুল খালেক বাদী হয়ে ওই মামলা করেন।
এখন কারাগারে পাঠানো হলেও পরে হেফাজতে নিয়ে মাদানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে অবেদন করা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের বিরুদ্ধে গত ২৫ মার্চ বিক্ষোভকালে ঢাকার মতিঝিল এলাকা থেকে মাদানীকে আটক করেছিল পুলিশ। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার মামলায় তাকে আসামি করা হয়নি।
ওই সময় বিক্ষোভ ও হেফাজতে ইসলামের হরতাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল। মাদানীর ওয়াজে সহিংসতার উসকানি ছিল বলে র্যাবের দাবি।
মাদানীর বাড়ি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার লেটিরকান্দা গ্রামে। সেখান থেকেই তাকে আটক করা হয় বলে স্বজনরা জানায়। ইসলামী দলগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় রফিকুলের বয়স ২৫ বছর হলেও আকার-আকৃতির জন্য তাকে ‘শিশু বক্তা’ বলে ডাকেন তার ভক্তরা। গাজীপুর মহানগরের বাড়িয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনে মারকাজুন নূর আল ইসলামিয়া নামে একটি আবাসিক মাদ্রাসা রয়েছে। হাফেজ রফিকুল ইসলাম মাদনী ওই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও পরিচালক। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, মাদ্রাসাটির প্রধান ফটকে ভেতর থেকে দুটি তালা ঝুলছে এবং দিনের বেলাও বাইরের বিদ্যুতের বাতি জ্বলছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেলিম জানান, গত ২৫মার্চ বাড়িয়ালী-নলজানী ঈদগাহ মাঠে ওই মাদ্রাসার হাফেজ ছাত্রদের পাগড়ি প্রদান উপলক্ষে এক ইসলামি মাহফিলে বক্তব্য রেখেছিলেন মাদানী। তার পরদিন থেকে মাদ্রাসাটি বন্ধ।
তিনি জানান, এক বছর আগে কালীগঞ্জের নাগরিক এক প্রবাসীর বাড়ি ভাড়া নিয়ে মাদানী ওই মাদ্রাসাটি চালু করেন। মাদ্রাসাটিতে নুরানী মক্তব, নাযেরা, হিফজ বিভাগ ছাড়াও প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করানো হয়। মাদানী এখানে থেকেই বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে যোগ দেন।