রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

স্বাগতম হে মাহে রমজান

সৈয়দ নজরুল ইসলাম:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০২১

আমরা সমাজ জীবনে এবং ব্যক্তি জীবনে বেশ কটি মাসের প্রথম দিন উদযাপন করে থাকি। ওই দিনগুলো উদযাপনের জন্য পূর্ব প্রস্তুতিও থাকে। কিন্তু রমজানকে স্বাগত জানোনোর জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে খুব একটা দেখা যায় না। অথচ ওই সব দিনগুলোর চেয়ে রমজান যে মূল্যবান ও মর্যাদাপূর্ণ তা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। মহান রাব্বুল আলামিন রমজান মাসেই নাজিল করেছেন কোরআন, যাতে করে মানুষ ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ শাস্তি ও পুরস্কারের পার্থক্য নিরূপণ করতে পারে। যাতে রয়েছে হেদায়েত প্রাপ্তির আহ্বান (সূরা বাকারা-১৮৫)। এখন প্রশ্ন হতে পারে মানবজাতির কল্যাণ/হেদায়েতের সঙ্গে রমজানের সম্পর্ক কী? প্রথমত হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টির সেরাজীব হচ্ছে মানুষ, স্রষ্টা যাদের সৃষ্টি করেছেন তাদের কাছে তাঁর কিছু পাওনা আছে। তাঁরই প্রাপ্যতা কীভাবে সৃষ্টিকুল আদায় করবে তার নির্দেশনাসহ মানুষ কীভাবে তার ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সমাজ জীবন, রাষ্ট্র জীবন পরিচালনা করবে তার বিশদ বিবরণ তাদের দায়বদ্ধতা এবং অবাধ্যতার কঠোর থেকে কঠোরতর শাস্তি ও আনুগত্যশীলদের পুরস্কার/নেয়ামত প্রাপ্তির ঘোষণা কোরআন পাকে বিশদভাবে তিনি বর্ণনা করেছেন। যাতে করে মানুষ কণ্টকাকীর্ণ পথ পরিহার করে মসৃণ সুন্দর পথে চলতে পারে।
হারামকে পরিহার করে হালালকে গ্রহণ এবং শাস্তিকে ভয় করে শান্তির আলয়কে গ্রহণ করতে পারে। আর রমজান মাসকে কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে বেছে নিয়েছেন এই কারণে যে, রমজানে মানুষ আল্লাহকে বেশি করে ভয় করে। পৃথিবীর সব নেয়ামত তুচ্ছ মনে করে মানুষ সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সব পানাহার এবং তার জৈবিক চাহিদার লোভ পূরণ থেকে বিরত থাকে। এ মাসে একজন রোজাদার ব্যক্তিকে কেউ শত লোভ দেখিয়েও আহার করাতে পারবে না এমনকি রোজাদার ব্যক্তির কণ্ঠনালি শুকিয়ে মৃত্যুর ঘণ্টা বেজে উঠলেও সে হুঁশ থাকতে ইফতারির সময় না হওয়া পর্যন্ত একফোঁটা পানিও পান করবে না।
পৃথিবীর সব কাজের তদারকি আছে, আছে পাহারাদারও কিন্তু রোজার ক্ষেত্রে রোজাদারের পিছনে কোনো পাহারাদার নেই এখানে সে নিজেই নিজের পাহারাদার। এটাই হচ্ছে আল্লাহ ভীতির সেরা নিদর্শন। কাজেই এই মাসকে তিনি প্রত্যেক মানুষের জীবনে বার বার এনে দিয়ে তাদের স্মরণ করিয়ে দেন যাতে করে বেশি বেশি কোরআন পাঠ করে তারাবির নামাজে কোরআনের বাণীসমূহ প্রতি বছর পড়ার ও বুঝার সুযোগ পেয়ে অতীতের কৃত কর্মের ভুলত্রুটি শুধরে নিয়ে তওবা করতে পারে।
রমজানকে আশীর্বাদ স্বরূপ মেনে নিয়ে আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত গ্রহণে আগ্রহী হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে আমরা রোজাদাররা মিথ্যাচার, গিবত ও চোগলখোরি প্রভৃতি থেকে বিরত থাকব। নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা এবং মিথ্যা কর্ম পরিত্যাগ না করে, তার পানাহার পরিত্যাগ আল্লাহর কোনো দরকার নাই’ (বুখারি-মুসলিম)।
হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ বলেন ‘সওম বা রোজা আমারই জন্যে, আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব’। রোজা জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষার ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হবে। কাজেই রমজান মাসের রোজা আমাদের জন্য আল্লাহর বড় নেয়ামত স্বরূপ এসেছে। আদম সন্তান বলতেই পাপী তবে সেই ব্যক্তি উত্তম পাপী যে কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়। সেই ব্যক্তিই উত্তম যে ক্ষমা চেয়ে অনাচার-পাপাচারের পথে পুনরায় অগ্রসর না হয়। আদম সন্তান হিসেবে আমাদের মধ্যেও ভালো কাজ মন্দকাজের সংমিশ্রণ আছে। এ জন্য মহান রাব্বুল আলামিন আমাদের জন্য তার ক্ষমার দ্বার বহুভাবে উন্মুক্ত করে রেখেছেন। তন্মধ্যে রমজান মাসের রোজা অন্যতম। তিনি রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধকে মৃগনাভীর সুগন্ধি হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। তাই আমরা এ মুখে এ মাসে বেশি বেশি তওবা করি আমাদের কবিরাহ গুনাহর জন্য।
রমজানের রোজা দ্বারা অতীতের কৃত গুনাহ মাফ লাইলাতুল কদরের রাতে এবাদত-বন্দেগি দ্বারা হাজার মাসের ইবাদত করার ফজিলত অর্জন করে মিজানে আমল নামা ওজনের প্রাক্কালে নেকির পাল্লা ভারি হওয়ার সুযোগ লাভ বা আল্লাহপাকের অনুগ্রহ লাভ করতে পারি। রমজানের এত অসংখ্য নেয়ামত আসা সত্যেও যারা উপেক্ষা করবে তাদের জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। যার পরিণতি জাহান্নামের আগুন যার তীব্রতা পৃথিবীর আগুনের চেয়ে সত্তর গুণ বেশি। কাজেই আমরা যখন সবাই কর্ণ-চক্ষু দ্বারা আল্লাহর বিধানাবলি শুনতে ও দেখতে পেরেছি এবং তা অনুধাবন করার যথেষ্ট জ্ঞানও আছে তাই আল্লাহর বাণী, ‘এ জীবনের চেয়ে আখিরাতের জীবন অনেক শ্রেষ্ঠ এবং চিরস্থায়ী’ (সূরা আল আলা)। এ জীবনের জন্য কাজ করি ও আমল করি। আমরা তওবা করে পরিচ্ছন্ন হই। আমরা যে যে পেশায় নিয়োজিত থাকি না কেন রমজান এসেছে রমজানের পবিত্রতা অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে রক্ষা করব। আমরা মিথ্যাচার করব না, লাভের আশায় অতিরিক্ত মূল্যে মানব দেহে ক্ষতি হয় এমন উপাদান মিশ্রিত করে খাদ্য বিক্রয় করব না। রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের কর্মে নিয়োজিত যারা আছি তারা সমস্যা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে বিচারকের ভূমিকা পালন করব। স্পিড মানি নামে উদ্ভূত শব্দ পরিহার করে হালাল উপার্জন দিয়ে হারাম থেকে বাঁচব, এ মাসের বন্দেগির সামর্থ্য পেয়ে আল্লাহর বড় রহমত জাহান্নামের আগুন থেকে রেহাই চাইব। আল্লাহ্ সুবহানুতায়ালা আমাদের সবাইকে রমজান মাসের রোজা পালনের সামর্থ্য দিয়ে এর পবিত্রতা রক্ষার তওফিক দিন। আমিন। লেখক : ইসলামী গবেষক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com