বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকারের কোনও সমন্বয়, পরিকল্পনা, রোডম্যাপ নেই। এই যে ৭ দিনের লকডাউন দিয়েছে, তার পরে কী হবে?’ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘হাউ ডু দে প্ল্যান টু ফিট দ্যাট কমন পিপলস। যারা দিন আনে দিন খায় তাদের খাওয়ার তারা কী ব্যবস্থা করছেন। এই লোকগুলোকে তো ঘরে রাখতে পারবেন না। যার পেটে ভাত নেই তাকে লকডাউন, করোনা দিয়ে কী করবেন। সে তো চিন্তা করতে পারবে না। এই সংখ্যা কিন্তু অনেক।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ব্যাপারটা তো সহজ নয়, ‘নিঃসন্দেহে অত্যন্ত কঠিন। এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। তারপরে আপনার এ দেশটা ড্যান্সলি পপুলেটেড এরিয়া, ১৮ কোটি মানুষ এখানে। এখানে তো আলাউদ্দিনের চেরাগ কারও হাতে নেই যে মুহূর্তে ঠিক করে ফেলবেন। আমরা একটা দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে এবং অতীতে আমরা সরকারে ছিলাম সেই হিসেবে বলতে চাই, এখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। আপনারা প্রত্যেকটা এলাকাতে জাতীয় কমিটি তৈরি করেন। সমস্ত রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক সংগঠন, এনজিও, বিশেষজ্ঞ- তাদের নিয়ে কমিটি তৈরি করেন। দে উইল সুপারভাইজ যে, ঠিকমতো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে কিনা। বাংলাদেশে তো ইতিহাস আছে ভাই, আমরা বন্যার সময়ে কীভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করেছি, আমরা কীভাবে সাইক্লোন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেছি। সব সময় কিন্তু আমরা অতীতে এসব মোকাবিলা করেছি। সেভাবেই যদি আপনি জনগণকে সম্পৃক্ত না করেন তাহলে তো তারা সুফল পাবে না।’ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখানে কী হচ্ছে? জনগণকে সরকার সম্পৃক্ত করতে চায় না একটা মাত্র কারণে যে তারা লুটপাট করবে, টাকা চুরি করে নিয়ে যাবে।
বিএনপি লকডাউনের বিরোধিতা করছে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা লকডাউনের বিরোধিতা করছি না। তারা লকডাউন নাম হিসেবে ব্যবহার করছে। এখন পর্যন্ত আমরা দেখছি যে, অকার্যকর একটা শাটডাউন করছে। হাজার হাজার লোকজন বেরুচ্ছে, হাজার হাজার লোক বাজারে যাচ্ছে। দেখুন কতটা স্ববিরোধীটা। আবার শিল্প-কলকারখানা খোলা রেখেছে। কোনও পরিকল্পনাই নেই। সবাইকে সম্পৃক্ত করার দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ গণবিচ্ছিন্ন সরকার লকডাউনের নামে একটা অকার্যকর শাটডাউন জাতির ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। এখানে না লকডাউন না শাটডাউন। আপনি পত্রিকাতে দেখছেন নিউ মার্কেট এলাকায় হাজার হাজার মানুষ, ফেরিতে দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ- এগুলো হচ্ছে তাদের লকডাউনের নমুনা। এখানে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে দিন আনে দিন খায় মানুষজন। এটা সরকারের দায়িত্ব এই মানুষগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করা। যেটা সরকার করতে ব্যর্থ হয়েছে সম্পূর্ণভাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এবার সম্ভবত দক্ষিণ আফ্রিকার যে ভেরিয়েন্ট, সেই ভেরিয়েন্ট ঢুকে পড়েছে। এই ভাইরাস প্রচ-ভাবে সংক্রামক। এটাতে মৃতের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। তাই ঘটতে যাচ্ছে এখন। গতকাল ৮৩ জন মারা গেছেন। টেস্ট তো হচ্ছে না। একটা অভিজ্ঞতার কথা বলছি, আমার বাসায় যারা কাজ করেন তাদের টেস্ট করানোর জন্য আমি গত তিনদিন ধরে চেষ্টা করছি। তারা প্রতিদিন উত্তরায় একটা সেন্টারে যায়। প্রত্যেক দিন বলে ফরম নাই, করা যাবে না। শেষে আজকে ভোর ৬টায় পাঠিয়েছি। সেখানে দেখা গেছে একজনের সিরিয়াল ৫০ নাম্বার। বাকিরা সিরিয়াল পায়নি। ওই সেন্টারে দেড়শ’র বেশি হয় নাই টেস্ট। অর্থাৎ এখানে বড় একটা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে সরকার। জনগণকে বিভ্রান্ত করছে, বুঝাচ্ছে। টেস্ট হচ্ছে না। টেস্টের সুবিধাও কিন্তু সারাদেশে নেই। ২০টি জেলায় কোনও সুবিধাই নেই। তাদের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে টেস্ট করতে হয়।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে ফখরুল বলেন, এই সরকারের সময়ে যে ধরনের লাগামহীন দুর্নীতি চলছে, মূলত তারই ধারাবাহিকতায় সরকারের সুবিধাভোগী দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী চক্রের হাতে দৈনন্দিন ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনাও জিম্মি হয়ে আছে। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণে বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূরীকরণের কোনও বিকল্প নেই।
হেফাজত নেতাকর্মীদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্যে হেফাজতের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনেক মামলা করেছে এবং কিছু লোককে গ্রেফতারও করেছে। আমাদের প্রশ্নটা হচ্ছে অন্য জায়গায়। আমরা হেফাজতের পক্ষে কথা বলছি না। আজকে কথা বলার অধিকার সকলের আছে। কথা বলার স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, এটাকে বন্ধ করে সরকার ক্ষমতায় বসে আছে। ২৬ মার্চ তাদের (সরকার) প্রোভোকেশন ছিল সবচেয়ে বেশি। সেই প্রোভোকেশন সব জায়গায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাদের প্রোভোকেশন ছিল। তারা তৈরি করেছে সিচুয়েশনটা। আর সেটা করে এখন তারা বিরোধী দলের ওপর চড়াও হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করেছে। সালথায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।