মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:০২ পূর্বাহ্ন

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফের শাহাদাৎ বার্ষিকী

মোঃ আক্কাস রাঙ্গামাটি :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২০ এপ্রিল, ২০২১

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফের শাহাদাৎ বার্ষিকী ২০ এপ্রিল। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তিনি। ২৬শে মার্চ যুদ্ধ শুরু হলে সহকর্মীদের সঙ্গে তিনিও ছুটে আসেন পার্বত্য চট্টগ্রামে। রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট আক্রান্ত হলে শত্রুবাহিনীর তিনটি নৌযান একাই ধ্বংস করেন তিনি। তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙামাটি-মহালছড়ি পানিপথ প্রতিরোধ করার জন্য ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের এক কোম্পানি সৈন্যের সাথে বুড়িঘাটে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। হঠাৎ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো ব্যাটেলিয়নের দুই কোম্পানি সৈন্য, বেশ কয়েকটি স্পীড বোট এবং দুটি লঞ্চে করে বুড়িঘাট দখলের জন্য আক্রমন করে। মর্টার আর ভারী অস্ত্র দিয়ে চালানো আক্রমণে প্রতিহতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন মুন্সি আব্দুর রউফ। হঠাৎ একটি গোলার আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় তার দেহ। স্থানীয় দয়াল কৃষ্ণ চাকমা তার মরদেহ উদ্ধার করে তাকে এই দ্বীপে সমাহিত করেন। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)-এর উদ্যোগে সেই দ্বীপে নির্মিত হয় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি সৌধ। প্রসঙ্গত, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার সালামতপুর গ্রামে ১৯৪৩ সালের ১মে জন্মগ্রহণ করেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ। বাবা মেহেদী হোসেন স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে আব্দুর রউফ ছিলেন সবার বড়। উপজেলার কুমারখালী হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়াবস্থায় তৎকালিন ইপিআর বর্তমানে বিজিবিতে যোগ দেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। রাঙামাটির নানিয়ারচরের বুড়িঘাটের একটি দ্বীপে চির নিদ্রায় শায়িত আছেন বাঙালির অন্যতম এই শ্রেষ্ঠ সন্তান। দুঃখজনক হলেও সত্যি এই অকুতোভয় বীর সৈনিকের শাহাদাত বার্ষিকী রাষ্ট্রীয় ভাবে কখনো পালন হয়নি কিংবা হচ্ছেনা। দেশের সাত বীরশ্রেষ্ঠের এই বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পরম মমতায় শায়িত আছেন হ্রদ-পাহাড়ের পার্বত্য রাঙ্গামাটির বুকে। যা রাঙ্গামাটি তথা তিন পার্বত্যবাসীর জন্য অত্যন্ত গৌরবের। কিন্তু তিন পার্বত্য জেলায় যে একজন বীরশ্রেষ্ঠ শায়িত আছেন সেই গৌরব গাঁথা ইতিহাস জানেনা অনেক শিক্ষার্থী। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানের অবদান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবান্বিত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পার্বত্য রাঙ্গামাটিতে কাজ করে যাচ্ছে “বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ ফাউন্ডেশন”। প্রতি বছর ২০শে এপ্রিল রাঙ্গামাটির প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে যেন এই বীরশ্রেষ্ঠের শাহাদাত বার্ষিকী পালন করা হয় এটিই এই ফাউন্ডেশনের জোরালো দাবি। প্রতিবছরের ন্যায় এ বছর ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ২০শে এপ্রিল দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের সব প্রস্তুতি নিয়ে ছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমনের কারণে এবং বর্তমান লকডাউনে কারনে সব আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। কাপ্তাই লেকের অথৈ নীল পানির মাঝে ছোট্ট একটি দ্বীপে মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি। এর অবস্থান রাঙামাটির নানিয়ারচরের বুড়িঘাটে। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ সমাধি সৌধের কেয়ার টেকার দয়াল কৃষ্ণ চাক্মার ছেলে বিনয় কুমার চাক্মা বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। বাবাকে দেখেছি দেশের একজন বীরশ্রেষ্ঠের কবর দীর্ঘদিন দেখাশুনা করতেন। এখন তার শারিরীক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় আমিই দেখাশুনা করি। এই সমাধি স্থলটা দেখাশুনা করতে পারাই যেন আমার মুক্তিযুদ্ধ। পার্বত্য অঞ্চলের দূর্গম প্রান্তিক এলাকা নানিয়ারচরে দূর্গম বুড়িঘাটে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া এই মহানযোদ্ধাকে পার্বত্য অঞ্চলের ও নানিয়ারচর উপজেলার গর্ব হিসেবে দাবি করেন নানিয়ারচর উপজেলাবাসীর। এদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের নব নির্মিত সবচেয়ে দীর্ঘ সেতুটির নামকরণ ও বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফ করার দাবিও জানান স্থানীয়রা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com