গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ি বাসস্ট্যান্ডে প্রতিদিন ভোরে দুই শতাধিক দিনমজুর শ্রমিক আসে কাজের খোঁজে। লকডাউন থাকায় কাজ নেই তবুও প্রতীক্ষা, যদি কেউ ডেকে কাজে নিয়ে যায়।
প্রতিদিন সকালে কোদাল আর টুকরি নিয়ে প্রতীক্ষায় থাকেন তারা। পথচারীরা তাদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ঘিরে ধরছেন কাজ পাওয়ার আশায়। শ্রমিক নিতে আসা লোকজন ঘণ্টা বা দিনের হিসাবে দরদাম করে মজুরি ঠিক করেন। অভিজ্ঞতা আর কাজের ওপর ভিত্তি করে দৈনিক সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে কাজই পাচ্ছেন না তারা। কাজের আশায় বসে থেকে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।
কোনাবাড়ি আনসার মার্কেটের সামনে বসে ছিলেন জহুরুল ইসলাম (৫৫)। বাড়ি বগুড়ার ধুপচাচিয়া এলাকায়। এখানে কোনাবাড়ির কাদের মার্কেট এলাকায় বসবাস। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে তিনি প্রায় প্রতিদিন সকালে এই বাসস্ট্যান্ডে আসেন কাজের জন্য। কাজও জুটতো প্রতিদিনই কিন্তু লকডাউনের কারণে এখন আর কাজ নেই।
এ প্রসঙ্গে কথা বলতেই কেঁদে ফেললেন কাজের অপেক্ষায় থাকা আয়েশা খাতুন (৩৭)। তিনি বলেন, ঘরে ৪ জন সন্তান অথচ ঘরে খাবার নেই। গত ৪-৫ দিন ধরে প্রতিদিন সকাল ৬ টায় এসে ৩-৪ ঘন্টা বসে থেকে বাড়ি ফিরে যাই। কাজ নাই, তাই ঘরে খাবারও নাই। জমানো কিছু টাকা ছিলো সেগুলি এখন খাচ্ছি।
সিদ্দিক মিয়া (৪৮) । বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া, এখানে থাকেন আমবাগের এক কলোনিতে। কাজ না পেয়ে তিনিও হতাশ। বললেন, এখন গ্রামে ধানকাটা লাগছে। গ্রামে গেলে কয়দিন কাজ করতে পারতাম কিন্তু লকডাউনের কারণে গাড়ি চলে না, তাই এখানে সকাল হতে বসে থাকি যদি কাজ পাই। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসেন দুলাল জানান- খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য কিছু বরাদ্দ দেওয়া যায় কিনা, এ কথা মেয়রকে জানানো হয়েছে। গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, দিন আনে দিন খায় এমন মানুষদের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো বরাদ্দ দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করা হয়নি। তবে পরবর্তীতে লকডাউনের সময় বৃদ্ধি করা হলে তখন হয়তো বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করা হবে।