মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

শেরপুরে সফলতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন শিল্পপতি ইদ্রিস মিয়া

জাহিদুল খান সৌরভ শেরপুর :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১

শেরপুর তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের অন্যতম প্রধান শিল্পপতি, দানবীর শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক আলহাজ্ব মো: ইদ্রিস মিয়া সবক্ষেত্রে তিলে তিলে নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন একজন সফল মানুষ হিসেবে। জিরো থেকে শুরু করে তিনি ওঠেছিলেন সফলতার উচ্চ আসনে। যিনি শুধু আমাদেরই নয় ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। সবমহলের প্রিয় এ মানুষটি হঠাৎ করেই ১২ এপ্রিল আমাদের ছেড়ে চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তার এ বিদায়ে হাজার হাজার মানুষ কেঁদেছেন এবং কাঁদছেন তাদের প্রিয় এ মানুষটির জন্য। ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলাধীন শেরপুর পৌরসভার অন্তর্গত ঢাকলহাটী কামারিয়া গ্রামে ইদ্রিস মিয়া এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৫০ সালের ১০ ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তাহার পিতার নাম- মরহুম আলহাজ্ব বাবর আলী, মাতার নাম – মরহুমা মালেতন নেছা। ছয় ভাই বোনের মধ্যে তিনি বাব মার তৃতীয় সন্তান ছিলেন। শেরপুর শহরে ৩০নং রসিদা বিড়ি ফ্যাক্টরী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাহার জীবনের অগ্রযাত্রা শুরু হয়।ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি ছিলেন শিল্পমনা। কাজ এবং কর্মীকে তিনি মনে প্রাণে ভালবাসতেন। ১৯৬২ সালে বিড়ি শিল্প বিষয়ে শিক্ষা লাভের জন্য স্থানীয় শ্রী জ্ঞানেন্দ্র মোহন দত্ত এর বিড়ি ফ্যাক্টরীতে চাকরি নেন। তিনি উক্ত ফ্যাক্টরীতে ৪/৫ বছর চাকুরী করে পূনঃরায় গ্রামের বাড়ীতে পৈত্রিক কৃষি কাজে আতœনিয়োগ করেন। কৃষি কাজেও তিনি যথেষ্ঠ দক্ষতা ও সফলতা লাভ করে বাবার সন্তষ্টি অর্জন করেন। ১৯৭১ সালের শুরুতেই ভাইদের সাথে পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে ঝগড়া হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে জনাব মোঃ ইদ্রিস মিয়া আহত হন। এ ঘটনার পরদিন সকাল বেলায় নাস্তা খেয়ে বাড়ী হতে মাত্র ২ আনা পয়সা নিয়ে পায়ে হেটে জামালপুর চলে যান। সেখানে তিনি আবার অন্য একটি বিড়ির ফ্যাক্টীতে চাকুরী নেন। কিছু দিন চাকরী করার পর তার সততা ও দক্ষতা দেখে মধুপুর থানার অন্তর্গত শুলাকুড়ি বিড়ি ফ্যাক্টরী মালিক তাকে ম্যানেজার পদে চাকুরী দেন। ইতিমধ্যে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। ফলে তিনি আব্রা বাড়ীতে চলে যান। উল্লেখ্য যে শ্রী জ্ঞানেন্দ্র মোহন দত্ত এর বিড়ি ফ্যাক্টীতে চাকুরী করাকালীন একদিন ভুলে জনাব ইদ্রিস মিয়াকে ফ্যাক্টরীর কর্মকর্তা তাকে সোয়া এক আনা পয়সা বেশী দেন। তিনি বাড়ি গিয়ে দেখে তার কাছে এ পয়সা বেশী এসেছে। পরদিন সকালেই ঘুরি ঘুরি বৃষ্টিতে ভিজে মালিকের কাছে গিয়ে ওই অতিরিক্ত পয়সা মালিকের নিকট ফেরৎ দেন তিনি। এতে মালিক তার সততা দেখে মুগ্ধ হন। পরবর্তীতেও তার সততার কথা ভূলেননি মালিক শ্রী জ্ঞানেন্দ্র মোহন দত্ত। তাই তিনি এদেশ ছাড়ার পূর্বে আলহাজ্ব মো: ইদ্রিস মিয়ার প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বিড়ি ফ্যাক্টরী করার পরামর্শ দেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এদেশের বিড়ি শিল্পে অগ্রগামী ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনত্যম হয়ে ওঠেছিলেন। শেরপুর জেলার অন্যতম প্রধান শিল্পপতি ও শিল্প উ˜েদ্যাক্তা আলহাজ্ব মোঃ ইদ্রিস মিয়া প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন ইদ্রিস গ্রুপ অব কোম্পানীজ নামে এক কোম্পানী। উক্ত কোম্পানী বিগত- ১৯৮৫ ইং সালে জয়েন্ট ষ্টক কোম্পানী হতে নিবন্ধিত হইয়া সুদক্ষ পরিচালক মন্ডলী দ্বারা সুনামের সাথে কার্যক্রম পরিচালিত হইয়া আসিতেছে। শেরপুর জেলা সদরের জেলা হাসপাতাল রোড, নারায়নপুর প্রতিষ্ঠানটির মূল অবস্থান। এরপর ১৯৭৩ সালে একটি রাইস মিল ও একটি প্রেস প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারণ করেন। এসবের মুলে তার কঠোর পরিশ্রম ও নিরলস সাধনা ছিলো। তার নিরলস সাধনা ও কঠোর পরিশ্রমে তিনি গড়ে তুলেছেন ১০/১২ টি কোম্পানী। একমাত্র পুত্র গুলজার মোহাম্মদ ইয়াহ্ ইয়া জিহান এর নামে জিহান এন্ড কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। এই কোম্পানীর অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান হচ্ছে (১) তামাক ক্রয় কেন্দ্র, রামগঞ্জ, মন্থনা, হাজিরহাট, রংপুর, (২) তামাক ক্রয় কেন্দ্র গংগাচুড়া, (৩) তামাক ক্রয় কেন্দ্র, রামগঞ্জ, নীলফামারী। উক্ত কোম্পানীর পরিচালক হিসেবে দক্ষতার সহিত তার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন আলহাজ্ব মিসেস রেহানা ইদ্রিস এবং এ প্রজন্মের তরুন শিল্পপতি তার একমাত্র পুত্র জনাব গুলজার মোহাম্মদ ইয়াহ্ ইয়া জিহান। গুলজার মোহাম্মদ ইয়াহ্ ইয়া জিহান বর্তমানে বাবার মৃত্যুর পর ওই কোম্পানীর চেয়ারম্যান হিসেবে বাবার স্থালভিষিক্ত হয়েছেন। শেরপুর জেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে গাড়ো পাহাড়। পাহাড়ী এলাকার লোকজন কর্মের অভাবে দারিদ্রতার অনেক নীচে বাস করে। ফলে পাহাড়ী এলাকার মানুষের কর্ম সংস্থানের জন্য শিল্পপতি ও শিক্ষানুরাগী আলহাজ্ব মোঃ ইদ্রিস মিয়া পাহাড়ে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন জি,এস রাবার প্রকল্প। ৫৪ একরএলাকা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত এ রাবার বাগেনে কর্মসংস্থান হয়েছে শতশত পাহাড়ী মানুষের। শেরপুর জেলা শহরের শেখহাটী নামক স্থানে এক মনোরম পরিবেশে গড়ে তুলেছেন জিহান অটো রাইস মিল¯ লিঃ নামীয় অত্যাধুনিক রাইস মিল। আধুনিক প্রযুক্তির সম্পন্ন উন্নত মানের মেশিন দ্বারা বাছাই পূর্বক নাজির, আতপ, মিনিকেট ইত্যাদি চাউল উৎপাদন হইতেছে ওই মিলে। উক্ত চাউল ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে। বিভিন্ন সংবাদ পত্র টিভি চ্যানেলে উক্ত রাইস মিলের প্রচার কাজ দীর্ঘদিন যাবৎ চলিতেছে। আলহাজ্ব মোঃ ইদ্রিস মিয়া তাঁহার জন্মস্থান ঢাকলহাটী, কামারিয়াতে বৃহদাকার ১০টি পুকুর খননের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন জেবিন ফিস এন্ড ফিডস নামক এক প্রকল্প। উক্ত প্রকল্পের চাষকৃত মাছ সরবরাহ করে শেরপুর জেলা তথা অত্রাঞ্চলের মাছের ঘাটতি পুরনে সহায়ক ভূমি রেখে চলেছে। শিক্ষা বিস্তারেও তার রয়েছে বিরাট অবদান। শিক্ষানুরাগী আলহাজ্ব মোঃ ইদ্রিস মিয়া তাঁহার এলাকার তথা শেরপুরবাসীর ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করার জন্য নিজ অর্থায়নে গড়ে তুলেছেন জিহান প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং তার পিতার নামে আলহাজ্ব বাবার আলী উচ্চ বিদ্যালয়। সেখানে শতশত পরিবারের সন্তান লেখাপড়া করে শিক্ষিত সমাজ গড়ে উঠছে। বর্তমানে বিদ্যালয় দুটির একটি সরকারী প্রাথমিক অপরটি এমপিওভূক্ত হয়েছে। শেরপুর শেখহাটীতে এক মনোরম পরিবেশে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ইদ্রিসিয়া কামিল (এমএ) মাদ্রাসা। যে মাদ্রাসাটি শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের টপ ২০ এ রয়েছে। উচ্চ মেধা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একের পর এক কোম্পানী স্থাপন করতঃ তিনি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন ইদ্রিস গ্রুপ অব কোম্পনীজ লিঃ। রাজধানী ঢাকায় কর্পোরেট অফিস রয়েছে। শৈশবে তিনি ঘরে বসে প্রফেসর শ্রী ফনি ভূষন সাহার সাহায্যে পড়াশুনা করে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এলাকার মানুষের কাছে আলহাজ্ব মোঃ ইদ্রিস মিয়া একজন দানবীর হিসাবে পরিচিত দেশের বহু জেলায় মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির, গীর্জা, ইদগাহ্ মাঠ সহ বিভিন্ন স্থানে লাখ লাখ টাকা অব্যাহত ভাবে দান করে গেছেন তিনি। ব্যবসার ফাঁকে আলহাজ্ব মোঃ ইদ্রিস মিয়া একজন সাংবাদিক। নিরপেক্ষ নতুনযুগ পত্রিকা অনলাইন নিউজ পোর্টাল নতুনযুগডটকমের সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি হিসেবে দায়িত্বও পালন করেছেন। আলহাজ্ব মোঃ ইদ্রিস মিয়া আজীবন মানুষের কাছে একটি উদাহারণ ও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবেন। জীবিত অবস্থায় সাধারণ মানুষ সবসময়ই তাকে ভালবাসতেন এবং তার সুস্থ জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করে থাকতেন। তার অসুস্থতাকালীন বিভিন্ন স্থান ও প্রতিষ্ঠানে জনাব আলহাজ্ব মোঃ ইদ্রিস মিয়ার সুস্থতা কামনা করে মানুষ মনে প্রাণে দোয়া করতেন। তার মৃত্যুর পরও মানুষ তা অব্যহত রেখেছেন। শিল্পপতি ইদ্রিস মিয়া চলে গেছেন, না ফেরার দেশে। কিন্তু রেখে গেছেন তার সাফল্যের কীর্তি। তিনি ভালবাসতেন সব শ্রেণীর মানুষকে। মানুষও তাকে মনের মনি কোঠায় স্থান করে নিয়েছেন। আজীবন তিনি থাকবেন মানুষের একজন ভালবাস স্থানে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com