রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিন জ্বলছে: সমাধান কোন পথে উলিপুরে ভেঙ্গে পড়া ব্রিজ সংস্কার হয়নি যানচলাচল ও যাতায়াত দুর্ভোগ চরমে শিক্ষার্থীদের কৃষি কাজে সম্পৃক্ত করতে এপির অভিনব উদ্যোগ নাগরিক টিভির জেলা প্রতিনিধির ওপর হামলা আসামী গ্রেপ্তারের দাবীতে মঠবাড়িয়ায় মানববন্ধন দাউদকান্দিতে সর্বজনীন পেনশন স্কীম বিষয়ক অবহিতকরণ ও স্পট রেজিস্ট্রেশন উদ্বোধন কালীগঞ্জে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা রাঙ্গামাটি কাপ্তাই হ্রদের মৎস্য সম্পদ রক্ষা করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান পদে দশ জনের মনােনয়ন দাখিল রায়পুরায় চোলাই মদ ও গাঁজাসহ গ্রেপ্তার দুইজন কালবৈশাখী ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে ঢেউটিন দিয়ে সহায়তা করেন কৃষিমন্ত্রী কন্যা উম্মে ফারজানা

রোজার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা

উম্মেহানি বিনতে আবদুর রহমান:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১

রমজান পুণ্যার্জনের মাস, পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র হওয়ার মাস এবং আত্মিক উন্নতি সাধনের মাস। সুনানে নাসাঈ এর ৮৯৯১ নং হাদিসের শেষে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এ মাসের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকবে, সে যেন সমস্ত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত থাকল।’ আত্মিক উন্নতির পাশাপাশি রোজা বিভিন্ন প্রকার ব্যাধি থেকে দেহের ভারসাম্য বজায় রাখে। ইউরিক এসিডের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে নানা প্রকার নার্ভ সংক্রান্ত রোগ বৃদ্ধি পায়, রোজা রোগ বর্ধক অনেক জীবাণু ধ্বংস করে। পূর্ণ এক মাস রোজার ফলে জিহ্বা ও লালা গ্রন্থি বিশ্রাম পায় এবং সতেজ হয়। সারা দিন রোজার মাধ্যমে এক লম্বা বিরতির পর ইফতারের সময় যখন খাদ্যদ্রব্য চিবানো হয় তখন লালাগ্রন্থি থেকে এক প্রকার রস নির্গত হয় যা খাদ্যদ্রব্য গলধঃকরণ ও হজম করতে সাহায্য করে। রোজার ফলে দিনের বেলায় অগ্নাশয় থেকে হজমের রস নির্গত হওয়া বন্ধ থাকে ফলে বহুমূত্র রোগ উপশম হয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণে রোজার উপকারিতা সম্পর্কে যা বলেছেন গবেষকরা- ১.বিশ্বখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী নাস্টবারনার বলেন, ‘ফুসফুসের কাশি, কঠিন কাশি, সর্দি এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা কয়েক দিনের রোজার কারণেই নিরাময় হয়। ২.স্বাস্থ্যবিজ্ঞানী ডা: আব্রাহাম জে হেনরি রোজা সম্পর্কে বলেছেন, ‘রোজা হলো পরমহিতৈষী ওষুধ বিশেষ। কারণ রোজা পালনের ফলে বাতরোগ, বহুমূত্র, অজীর্ণ, হৃদরোগ ও রক্তচাপজনিত ব্যাধিতে মানুষ কম আক্রান্ত হয়।’ ৩. ডা: আইজাক জেনিংস বলেছেন, ‘যারা আলস্য ও গোঁড়ামির কারণে এবং অতিভোজনের কারণে নিজেদের সংরক্ষিত জীবনীশক্তিকে ভারাক্রান্ত করে ধীরে ধীরে আত্মহত্যার দিকে এগিয়ে যায়, রোজা তাদেরকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করে। ৪. ডাক্তার দেওয়ান এ কে এম আব্দুর রহিম বলেছেন, ‘মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র সর্বাধিক উজ্জীবিত হয় রোজা পালনের কারণে’।
১৯৫৮-১৯৬৫ সালে রমজানে রোজা রাখার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালিত হয় ঢাকা ও রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ থেকে, তাতে সুনির্দিষ্টভাবে নিম্নোক্ত স্বাস্থ্যগত তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, পাকস্থলীর মাত্রাতিরিক্ত অম্লরস রমজান মাসে মাসব্যাপী রোজা পালনের কারণে হাইপো এবং হাইপার ক্লোরিড্রিয়া পরিবর্তিত হয়ে স্বাভাবিক এসিডিটি আইসোক্লোরিড্রিয়াতে পরিণত হয়। রোজা রাখার কারণে পাকস্থলীতে অম্লরসের পরিমাণ কমে যায় (রাতে আহারের পর রোজা রাখা অবস্থায় খুব সকালে খালি পেটে স্বাভাবিকভাবেই গ্যাস্ট্রিক এসিড নিঃসরণের মাত্রা সর্বনি¤œ হয়ে থাকে) রমজান মাসের রোজা অতিমাত্রায় এসিডিটি নিঃসরণে সহায়তা করে; যা পেপটিক আলসার সৃষ্টিকারী উপাদানগুলোর অন্যতম’। গবেষণায় দেখা গেছে, রোজাদার ব্যক্তি ধূমপান না করার কারণে ফুসফুস রোগমুক্ত থাকে। পেপটিক আলসারের রোগীরা রোজা রাখলে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি রোগীদের জন্যও রোজা উপকারী। রোজার অন্যতম সুস্পষ্ট ফলাফল হলো স্থূলতা হ্রাস করা; সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে লিভারের এনজাইমগুলো কোলেস্টেরল এবং চর্বি দ্রুত ভেঙে ফেলে এবং এসিডে রূপান্তরিত করে, যা তাপে পরিণত হয়Ñ অবশেষে বিপাকক্রিয়া দ্রুত ঘটে। স্বাভাবিকভাবেই, রোজা রাখার ফলে ক্ষুধাও হ্রাস পায় যা দেহে ক্ষুধার হরমোনের মাত্রা হ্রাস করে। ফলে অল্প খেলেই ক্ষুধা নিবৃত্ত হয়। রোজায় শরীরের বিপাকক্রিয়া বৃদ্ধি পায়, খাবার দ্রুত হজম হয় এবং দ্রুততম সময়ে পেশির বৃদ্ধি হয়। দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় শ্বেত রক্তকণিকার ভূমিকা অপরিসীম। রোজায় পুরনো ও ক্ষতিগ্রস্ত শ্বেত রক্তকণিকাগুলো রিসাইক্লিং পদ্ধতিতে পুনরুজ্জীবিত হয় এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আগের চেয়েও বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। রোজা রাখার ফলে শরীর হয় নিরোগ ও স্বাস্থ্যকর।
এ সময় শরীরে লবণ গ্রহণের পরিমাণ হ্রাস পায়। অন্য দিকে প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত লবণ বের হয়ে যায়। ফলে দেহে লবণের পরিমাণে ভারসাম্য স্থাপিত হয় যা শরীরের রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। রোজার সময় আমাদের হৃৎপি- অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সচল ও স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। রক্তের কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি রক্তনালী ও হৃদপেশির উন্নয়ন ঘটে।
রোজার সময় মানুষ যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি সংযম ও মানসিক স্থিরতা লাভ করে। খাদ্যে সংযমের ফলে চিনি, লবণ ও ক্যালোরি গ্রহণ কমে যাওয়ার ফলে শারীরিক অবসাদ কমে যায়। এতে মানসিক সুস্থতা অর্জিত হয় বলে ধারণা করা হয়। রোজার সামগ্রিক প্রভাব আমাদের মস্তিষ্কের ওপরেও পরে। শারীরিক ব্যায়ামে যেরকম সুফল পাওয়া যায়, রোজায় মস্তিষ্কে একই রকম ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে সারাদিন মস্তিষ্ক সুস্থ ও চনমনে থাকে। রোজা রাখলে রক্তে শর্করা স্থিতিশীল হয় যার ফলস্বরূপ টাইপ ২ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা রাখার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং অ্যান্টি এজিং প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। মাঝে মধ্যে রোজা থাকলে এমনিতেও অটোফেজি প্রক্রিয়ায় আমাদের দেহের অপ্রয়োজনীয় ও নষ্ট কোষগুলো ধ্বংস হয়ে যায় এবং পুরনো কোষের স্থলে পুনরায় নতুন স্বাস্থ্যকর কোষ ও টিস্যু তৈরি হয়। আর পুরো এক মাস রোজা রাখলে এই প্রক্রিয়া আরো ভালোভাবে সম্পন্ন হতে পারে। দেহ নতুন কোলাজেন তৈরি করে, ত্বক আরো উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর হয়ে ওঠে। খোদাভীতি অর্জনের পাশাপাশি রোজার স্বাস্থ্যগত উপকারিতার পবিত্র কুরআন নাজিলের এ মাসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা এবং মহান আল্লাহর ইবাদতের মধ্য দিয়ে মুসলমানরা তাদের তাকওয়ার পরীক্ষা দিয়ে থাকেন। পরম করুণাময় মহান আল্লাহ তায়ালার আদেশ-নিষেধ মেনে চলে পবিত্র এ মাসে মহান আল্লাহর আরো নিকটবর্তী হন সারা বিশ্বের মুমিন মুসলিমগণ। আগে রোজাকে শুধু ধর্মীয় আচার পালন বলে মনে করা হলেও বর্তমানে সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন ও একমত হয়েছেন যে রোজার স্বাস্থ্যগত গুরুত্বও অপরিসীম। লেখিকা : শিক্ষার্থী, আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com