যারা দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য সেই ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকাটা কষ্টকর, বিশেষ করে এই মহামারীর সময় এটা আরও কঠিন। যদি আপনি বা আপনার পরিবারের সদস্য কোন দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, এই রমজান মাসে তার বিশেষ যত্ন নেওয়া অপরিহার্য।
রমজানে আপনার জন্য হেলথ টিপস: ডায়াবেটিস: প্রতিদিন দীর্ঘ সময়ের জন্য না খেয়ে থাকা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই রমজানে যেসব বিষয় মনে রাখতে হবে সেগুলো হল: ● নিয়মিত আপনার রক্তের গ্লুকোজ পরীক্ষা করান। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন আপনার রক্তের গ্লুকোজ লেভেলকে প্রভাবিত করতে পারে তাই আপনার রক্তের গ্লুকোজ লেভেল পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। রক্তের গ্লুকোজ লেভেল মাপলে (নিডল প্রিকের মাধ্যমে) আপনার রোজা ভাংগবে না। ● রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিক রাখতে রোজা রাখার আগে ডাক্তারের সাথে কথা বলে রোজার মধ্যে আপনার ওষুধের সময় এবং পরিমাণ কী হবে সেটা জেনে নিন।
হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ: আপনার রক্তের প্রেশার অর্থাৎ ব্লাডপ্রেশার যখন অনেক বেশি থাকে, সেই অবস্থাটাই হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ। হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ মারাত্মক স্বাস্থ্যগত জটিলতার কারণ হতে পারে এবং হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদি মারাত্মক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। আপনার যদি হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ থেকে থাকে, তাহলে রোজা রাখার সময় নিচের টিপসগুলো মেনে চলুন: ● আপনার ওষুধ সম্পর্কে আপনার ডাক্তারের সাথে আলোচনা করুন এবং রক্তচাপ যেন হটাৎ এবং দ্রুত কমতে না পারে সেজন্য রোজাকালীন সময় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করছেন কিনা তা নিশ্চিত করুন। ● আপনার রক্তচাপ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করুন; আপনার রক্তচাপ যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত রোজা না রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। ● এই মাসে হাই-ফ্যাট যুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো।
হৃদরোগ (সিভিডি): যাদের হার্টে সমস্যা আছে এবং হার্টে সামান্য রোগের প্রভাব আছে এমন বেশিরভাগ রোগীর রমজানে রোজা রাখা নিরাপদ। তবে, হৃদরোগের রোগীদের রোজা রাখার জন্য সঠিক ডায়েট বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মাসে মনে রাখতে হবে এমন ৩ টি কাজের কথা নিচে দেওয়া হল: ● সবসময় সুষম পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন এবং সেহরি বা ইফতারের সময় তৈলাক্ত বা ভাজাপোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। ● কাঁচা লবণ খাওয়ার পরিমাণ যতটা সম্ভব কম রাখুন। ● নিয়মিত হালকা ব্যয়াম যেমন হাঁটাচলা করুন। আর এই মহামারী বা লকডাউনের সময়, বাসার মধ্যে বা ছাদে হাঁটাহাঁটি করার চেষ্টা করুন।
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ (সিকেডি): সাধারণত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের কারণে কিডনিরোগ (সিকেডি) হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো অন্যান্য রোগের কারণেও সিকেডি রোগ হতে পারে এবং পরে এই রোগ আরও বাড়তে পারে, তাই এই রোগগুলো ভালভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। বেশিরভাগ সিকেডি রোগী ভালো মানের সুষম ডায়েট করতে পারবে এবং তাদের পর্যাপ্ত হাইড্রেশনও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আপনার কিডনি রোগ যদি ফাইনাল স্টেজে থাকে বা আপনার নিয়মিত ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়, তবে আপনি কী কী খেতে পারবেন এবং কী পরিমাণ লিকুইড খাবার লাগবে সে বিষয়ে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। রমজানের সময়, সিকেডি রোগীদের শরীরে পানির পরিমাণ কমে যাওয়া এবং ডিহাইড্রেশনের প্রভাব প্রধান উদ্বেগের কারণ হতে পারে, তবে রোজা কিন্তু সিকেডি এর ঝুঁকি বাড়ায় না, বরঞ্চ দীর্ঘকাল ধরে রোজা রাখা বয়স্ক রোগীরা এখনও বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকতে পারেন। রমজানের সময় যে ডায়েটগুলো মনে রাখতে হবে: ● ইফতারের সময় কলা বা রান্না করা পালং শাকের মতো হাই পটাশিয়াম খাবার এড়িয়ে চলুন। ● কলিজা, দুগ্ধ জাতীয় খাবার, ডাল জাতীয় হাই ফসফেট যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। ● হাইড্রেশন বজায় রাখুন তবে ওভারহাইড্রেশন যেন না হয় সেটাও খেয়াল রাখুন।
● প্রস্রাব পর্যবেক্ষণ করুন এবং শরীর কোথাও ফুলে আছে কিনা সেটাও চেক করুন। যদি এমন কিছু হয় তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
সবার আগে সুস্বাস্থ্য সাম্প্রতিক মহামারী সংক্রান্ত রিসার্চে উঠে এসেছে যে; যারা রোজা রাখেন, কোভিড-১৯ এর কারণে তাদের সংক্রমণের হার বা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার হার কম থাকে। ফলাফলস্বরূপ, এমন কোন প্রমাণ নেই যে রোজা রাখার ফলে ইমিউনিটি কমে যায় বা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তবে, যাদের দীর্ঘস্থায়ী রোগ রয়েছে তারা কোভিড-১৯ এর উচ্চ ঝুঁকির গ্রুপে রয়েছেন। মহামারী চলাকালীন সময় রোজা রাখার আগে রোজার ঝুঁকিগুলো বোঝার জন্য প্রথমেই আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিন।
পরামর্শ দিয়েছেন : ডা. সিমিন মজিদ আক্তার, চিফ মেডিকেল অফিসার, প্রাভা হেলথ।