হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হচ্ছে জানিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ম-লীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেছেন, নিজস্ব শক্তি দিয়েই হেফাজতের অপরাজনীতিকে দমন করবে সরকার। সম্প্রতি হেফাজত নেতাদের গ্রেফতার ও সরকারের অবস্থান নিয়ে মতামত জানতে চাইলে এ কথা বলেন তিনি।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের আয়োজনে যোগ দিতে গত ২৬ মার্চ ঢাকা সফরে আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সফরের বিরোধিতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ-হরতাল করে হেফাজত যা এক পর্যায়ে সহিংসতায় রূপ নেয়। এই সহিংসতায় ঝরে ১৮ জনের প্রাণ।
এসব ঘটনায় দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় হেফাজত নেতাদের গ্রেফতার করতে শুরু করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামিদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। গ্রেফতারদের মধ্যে হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকও রয়েছেন।
জানতে চাইলে বর্ষিয়ান রাজনীতিক আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ। তারা ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসেবে জানেন। কিন্তু ধর্মের নামে হেফাজত অধর্মের কাজ করছে। মানুষ অবাক হয়েছে তাদের কর্মকা- দেখে। ধর্মকে ব্যবহার করে তারা যা করছে, তা জুলুম। তারা দাবি-দাওয়ার নামে সরকার পতনের ষড়যন্ত্র করছে। এটি তো কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সরকার তার নিজস্ব গতিতে এই শক্তিকে মোকাবিলা করছে। কোনো আপস নয়। কোনো সমঝোতা নয়। এবার নিজস্ব শক্তি দিয়েই হেফাজতের অপরাজনীতিকে দমন করবে সরকার।
রাজনৈতিকভাবেই হেফাজতকে শক্তি যোগানো হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত হেফাজতকে ব্যবহার করছে সরকার পতনের কৌশল হিসেবে। তারা আওয়ামীবিরোধী মনোভাব থেকেই হেফাজতকে সমর্থন যুগিয়েছে। এটি তাদের রাজনীতির দৈন্যদশা বলি মনে করি। বিএনপি-জামায়াতের ফাঁদে পা দিয়ে হেফাজতও সরকারের পতন চায়। তারা ইসলামের হেফাজতের নামে সরকারের বিরোধিতা করছে। বিএনপি হেফাজতকে উসকে দিয়েছে পরিকল্পিতভাবে। এটি তো আমরা বরদাশত করব না।
২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনার পর সরকার হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতা করেছে বলে অভিযোগ আছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আমু বলেন, এই অভিযোগ অসত্য। হেফাজতের সঙ্গে সরকার কোনো সমাঝোতা করেনি। কওমি মাদরাসার বিশাল একটি জনগোষ্ঠী পিছিয়ে ছিল। এমন একটি জনগোষ্ঠীকে পিছিয়ে রেখে জাতির কল্যাণ আসতে পারে না। সরকার এই বিবেচনায় কওমি শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি ছিল একটি শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক শিক্ষার মঞ্চে আনার চেষ্টা।
এই স্বীকৃতিই হেফাজতকে বাড়তি শক্তি দিয়েছে বলে অনেকের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আমু বলেন, ‘শাপলা চত্বরের যে তা-ব তা কিন্তু আগের ঘটনা। সে শক্তি ভেঙে দেয়া হয়েছে।’
হেফাজতের নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হচ্ছে। কোনো আপস নয়। কোনো সমঝোতা নয়। এবার নিজস্ব শক্তি দিয়েই হেফাজতের অপরাজনীতিকে দমন করবে সরকার। আপসের জন্য সরকার হেফাজত নেতাদের গ্রেফতার করছে না।’