মানুষের দারে দারে ও উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর থেকে দপ্তরে ঘুরে ঘুরে এত করা কচ্ছি যে, হ্যামি মরিনি, হ্যামি বাঁচাই আছি। কিন্তু কেউ হামার কতা শোনিচ্ছে না। সবাই কচ্ছে কাগজ পত্রে তুমি মারা গেছ। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ৭৪ বছর বয়সী বৃদ্ধ আব্দুস সাত্তার ফকির এভাবেই নিজের আক্ষেপের কথা বলছিলেন। আব্দুস সাত্তার জীবিত আছেন, কিন্তু সর্বশেষ ভোটার তালিকা হালনাগাদ তথ্যে তাঁর নাম দেখানো হয়েছে মৃত। আর মরে যাওয়ার কারণেই হয়তো বন্ধ হয়ে গেছে তার বয়স্ক ভাতার টাকা। কিন্তু আসলে সে মরেনি দিব্যি এখনোও চলাফেরা করছে তিনি। আব্দুস সাত্তার বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের দুর্গাপুর গ্রামের মৃত লিলচাঁন ফকিরের ছেলে। জানা যায়, দিনমজুর আব্দুস সাত্তার ফকির বয়স্ক ভাতার টাকা পেয়ে কিছুটা হলেও সংসারের অভাব দূর হয়। কিন্তু হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় তার বয়স্ক ভাতা। ভাতার টাকা বন্ধ হওয়ায় প্রথমে ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ভাতার বিষয়ে খোঁজ নিতে যান তিনি। সেখানে তার নাম না থাকায় খোঁজ নিতে স্থানীয় উপজেলা নির্বাচন অফিসে যায় তিনি। এরপর আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়। সবশেষে উপজেলা নির্বাচন অফিসে যাওয়ার পর আব্দুস সাত্তার ফকির জানতে পারেন, কাগজপত্রে তাকে ‘মৃত’ দেখানো হয়েছে। তবে কীভাবে জীবিত থেকেও ‘মৃত’ হলেন এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য বা ব্যাখ্যা তাকে কেউ দিতে পারেনি। এ ব্যাপাওে আব্দুস সাত্তার জানান, আমি একজন দিন মজুর অসহায় ব্যক্তি। আমার ভিটে মাটি বলতে তেমন কিছু নেই। সামান্য এক টুকরা জমিতে বাড়ি ঘর নির্মাণ করে বসবাস করছি। আমার এক ছেলে ও ৪ মেয়ে। বিগত প্রায় দেড় বছর পূর্বে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারের পেছনে ঘুরে ঘুরে বয়স্ক ভাতার কার্ড হয়েছিল। ইতিমধ্যে ৪ দফা বয়স্ক ভাতার টাকাও পেয়েছেন তিনি। কিন্তু বিপত্তি ঘটে প্রায় ৭ মাস আগে। হঠাৎ ভাতার টাকা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি কিছুই টের পাননি তখন। ভেবেছিলেন হয়তো সরকারই ভাতা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে আরোও জানান, ‘ভোট না হয় না দিলাম। কিন্তু করোনা টিকা না নিয়ে মরতে হবে আমার!’ সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী সহ সবাইকে বিনামূল্যে করোনা টিকা নেওয়ার নির্দেশনা দিলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন আব্দুস সাত্তার ফকির। মনে খুব আগ্রহ নিয়েই টিকার প্রথম ডোজ নিতে একাধিকবার তথ্য আপলোডের চেষ্টা করেও ব্যার্থ হন তিনি। পরবর্তীতে সে আদমদীঘি উপজেলা নির্বাচন অফিসে যান। আব্দুস সাত্তার ফকির তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর দিলে নির্বাচন অফিস থেকে জানানো হয়, তিনি মৃত। শেষ পর্যন্ত তিনি নানা প্রমাণ দেওয়ার পর তাকে আবেদন করতে বলা হয়। সে অনুযায়ী কাগজপত্র সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে আবেদন করেন। এ বিষয়ে ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের সাথে মোবাইল ফোন কথা হলে তিনি জানান, জীবিত আব্দুস সাত্তারকে নির্বাচন তথ্য সংগ্রহকারীরা মৃত দেখিয়েছে তা আমার জানা নাই। তার বয়স্ক ভাতা বন্ধের বিষয়টি সচল করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুর রশিদ বলেন, এটি কাজের ভুল। তথ্য সংগ্রহকারীরা ভুলক্রমে জীবিত আব্দুস সাত্তার ফকিরকে ভোটার তালিকায় এন্ট্রি করার সময় মৃত দেখিয়েছেন। বিষয়টি জানার পর এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করা হয়েছে।