বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

খালেদা জিয়া প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির শিকার : মির্জা ফখরুল

ইকবাল হোসেন:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ মে, ২০২১

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে সরকার অনুমতি না দেওয়ায় তাঁরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া সরকারের ‘প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি’র শিকার।
গত রোববার বিকেলে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার জন্য পরিবারের আবেদন নাকচ করে দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আইনমন্ত্রী এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার আলোকে খালেদা জিয়ার সাজা ও দ-াদেশ আগেই স্থগিত করে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির একই ধারা অনুযায়ী, দ্বিতীয়বার তাঁকে অনুরূপ সুযোগ দিয়ে বিদেশে যেতে দেওয়ার সুযোগ নেই। এরপরই রাতে বিএনপির পক্ষ থেকে এই প্রতিক্রিয়া এলো। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে দেখতে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে বসুন্ধরার গেটে গণমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
ওয়ান-ইলেভেনের ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দিতেই সরকার এই সিদ্ধান্ত দিয়েছে- এমন অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করানোর সম্মতি না দেওয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। শুধু মানবিক কারণে নয়, রাজনৈতিক কারণেও অনুমতি দেওয়া জরুরি ছিল। কারণ, খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। স্বাধীনতা থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর যে অবদান তা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই। দুর্ভাগ্য, সরকার তাদের প্রতিহিংসামূলক রাজনীতি চরিতার্থ করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
‘উদ্দেশ্য হলো, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া’: বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘যে ধারাতে সাজা স্থগিত করেছে। ওই ধারাতে বিদেশে যেতে এবং দ- মওকুফ করার সুযোগ আইনে রয়েছে। তাঁরা বলেছেন, কোনো নজির নেই। সরকার অসংখ্য নজির সৃষ্টি করেছে। তাঁরা ফাঁসির আসামিকে বাইরে পাঠিয়ে দিতে পারেন, মাফ করে দিতে পারেন। কিন্তু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতার জন্য কোনো মানবতা, শিষ্ঠাচার ও মূল্যবোধ তাদের কাজ করে না। খালেদা জিয়া রাজনীতির শিকার হচ্ছেন। এখানেও পার্টির তরফ থেকে তাঁর বিদেশ চিকিৎসার আবেদন জানাই।’
সরকারের সিদ্ধান্তে বিএনপি হতাশ এবং ক্ষুব্ধ বলেও উল্লেখ করেন দলের মহাসচিব। তিনি আরও বলেন, ‘একটা মিথ্যা মামলা সাজিয়ে তাঁকে (খালেদা জিয়া) যে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। এটা ওয়ান-ইলেভেন থেকে শুরু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় তাঁকে এবং তাঁর দলের সব শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। দেশে প্রায় ৩৫ লাখ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে পুরো দলকেই রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চক্রান্ত চলছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবচেয়ে বড় চক্রান্ত চলছে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। কারণ, তিনি হচ্ছেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। এই দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের প্রতীক। ফ্যাসিস্ট সরকার, ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে লড়াই-আন্দোলন শুরু করেছেন। গত নির্বাচনের আগে মিথ্যা মামলায় তাঁকে অন্তরীণ করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত তাঁর সুচিকিৎসা করা হয়নি।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বহুবার সরকারকে বলেছি। স্থায়ী কমিটির সদস্যরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একাধিকবার গিয়েছি তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য। কারাগার থেকে পিজি হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হলেও তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। এবং যখন দেশ করোনা আক্রান্ত হয়েছে তখন পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাজা স্থগিত করে বাসায় থাকার সুযোগ দিয়েছে। এটা তাঁর জন্য বেশি উপকার হয়নি।’
খালেদা জিয়ার সবশেষ স্বাস্থ্যের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজ আমি তাঁকে দূর থেকে দেখে এসেছি। আগের থেকে ভালো মনে হলো। অক্সিজেন ছাড়াই শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন। ফুসফুসে টিউব লাগানো আছে। উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে এভারকেয়ারে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখানকার চিকিৎসকরাই বলেছেন, এই চিকিৎসা তাঁর জন্য যথেষ্ট নয়। করোনাপরবর্তী যে জটিলতা দেখা দিচ্ছে, তাতে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। কারণ তাঁর পুরানো রোগ ও বয়সের কারণে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে।’
গত ১১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার করোনা শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে চিকিৎসা শুরু হয়। করোনায় আক্রান্তের ১৪ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর দ্বিতীয়বার খালেদা জিয়ার করোনা টেস্ট করা হয়। কিন্তু আবারও ফলাফল পজিটিভ আসে। এরপর ২৭ এপ্রিল রাতে তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়।
শ্বাসকষ্টজনিত কারণে গত সোমবার খালেদা জিয়াকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। এখনো তিনি সেখানেই আছেন। এর মধ্যেই পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়। এটি আইন মন্ত্রণালয় হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যায়।
যা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী: স্বষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অনুযায়ী তাদের (খালেদা জিয়ার পরিবারের) মতামত মঞ্জুর করতে পারছি না।’ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আইন অনুযায়ী যতটুকু করণীয় ততটুকু করেছি। কিন্তু আইনের বাইরে গিয়ে আমরা কিছু করতে পারি না।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com