করোনার কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোমল মতি শিক্ষার্থীরা বর্তমানে তাদের পাঠ্য পুস্তকের সাথে সম্পর্ক কমে গেছে, আসক্ত হয়ে পড়ছে মোবাইল ফোনে। আবার অনেকে খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে বিভিন্ন ধরনের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। এতে বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ। তৈরি হচ্ছে কিশোর গ্যাং। শুধু শহরের ছেলে মেয়েরাই নয় করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শহরের সাথে সমানভাবে তাল মিলিয়ে গ্রাম বা পল্লী অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়ছে।অনলাইন ক্লাসের নামে শিশু থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ঝুঁকে পড়ছে মোবাইল আসক্তে। আবার অনেকের পড়াশোনায় ছেড়ে বেকার সময় কাটাচ্ছে। এতে মানসিক ভারসাম্যহীনতার মধ্যে পড়ছে তারা। শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে পঙ্গু করে ফেলেছেন করোনা ভাইরাস। দেখা যায়, গ্রামে কারো বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে পাড়া মহল্লার ছেলেরা দল বেঁধে সেই বাড়ির পাশে বসে সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে খেলা করছে। আবার অনেককে বাজারেও দেখা যায় মোবাইল নিয়ে কি যেন করছে। এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে উপজেলার সোমভাগ ইউনিয়নের চাপিল গ্রামে। করোনার শুরুতে পড়াশোনার একটু চাপ থাকলেও এখন কিছুই নেই। নেই পাঠ্য বইয়ের সাথে কোন সম্পর্ক। চাপিল গ্রামের মাঝে রয়েছে একটি বাজার। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে শুরু টানা দুপুর পর্যন্ত মোবাইল নিয়ে বাজারে ১০/১২ জন করে একসাথে বসে বিভিন্ন গেমস খেলায় মেতে থাকে। আবার দুপুর গড়িয়ে বিকেল পড়তে না পড়তেই শুরু হয়ে যায় একই কাজে। বর্তমানে পাবজি, ফ্রি ফায়ার গেমস এ তারা বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। দেখা যায়, উপজেলার দেপাশাই, কালামপুর, বালিয়া, নওগাঁও, কাওয়ালীপাড়া, জয়পুরা এলাকায়। শুধু তাই নয় পুরো উপজেলায় চলছে একই কাজ। শুরুতে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য পরিবারকে চাপ দিয়ে মোবাইল কেনা হলেও বর্তমানে তা আর হচ্ছে না। ধামরাইতে করোনার শুরুতে অনলাইনে ক্লাস চালু করেছিল অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিন্তু এখন আর তা নাই। প্রায় প্রতিষ্ঠানই অনলাইন ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছে। উপজেলার পৌর শহরে খেলা ধুলা করার যথেষ্ট জায়গা না থাকায় বেশির ভাগ ছেলে মেয়েরাই বাসায় বসে সময় পার করছে। ফলে তারা সারাক্ষণ টিভি, মোবাইল বা অনেকে ল্যাপটব নিয়ে সময় পার করছে। পরিচিত হচ্ছে নতুন নতুন গেমস এর সাথে। শরিফুল ইসলাম নামে এক অভিভাবক বলেন, তিনি প্রতি দিন সকালে অফিসে যাই আর ফিরে আসি সেই সন্ধ্যায়।কোন কোন দিন রাতও হয়।বাসায় ছেলেকে ঠিক মতো সময় দিতে পারি না।প্রাইভেট টিউটর আসে। তিনি একটু সময় দেয়।সেই সময় ছাড়া আর কোন সময় আমার ছেলে বই ধরে না। সে কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। আবার খেলাধুলার জন্য কোন জায়গাও নেই।একেবারে একগুঁয়ে হয়ে পড়ছে।সারাদিন মোবাইল আর টিভিই যেন ভরসা। কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বলেন, বেশি সময় মোবাইল বা ল্যাপটব নিয়ে পরে থাকলে তারা মানসিক ভারসাম্য হয়ে পড়বে।এতে বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে রুচিহীনতা, মোবাইল ফোন দির্ঘ সময় দেখলে দৃষ্টি শক্তির সমস্যাও হতে পারে। সাইফুল ইসলাম নামে এক স্কুল শিক্ষক বলেন, করোনার কারণে একদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ অন্যদিকে দরিদ্র পরিবারের প্রচুর শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্কুল পড়ুয়া অনেকেই পড়াশোনা বাদ দিয়ে বিভিন্ন কল-কারখানায় গিয়ে কাজ করছে। যা উপার্জন করছে তাই দিয়ে দরিদ্র পিতা মাতাকে সহায়তা করার চেষ্টা করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক অভিভাবক বলেন, এক বছরের উপরে হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ছেলে মেয়েরা মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। খেলাধুলার তেমন সুযোগ পায় না। কিছুদিন পর পর ডাক্তার দেখাতে হয়। ছেলে ঠিক মতো খায় না। অরুচিতে ভোগছে। আর পড়াশোনা তো নাই বললেই চলে। এভাবে আরো কিছু দিন চলতে থাকলে শিক্ষার্থীরা ঝড়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকবে। অনেকে নেশায় জড়িত হয়ে পড়েছে। প্রথমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেভাবে অনলাইন ক্লাস চালু রেখেছিল তা থাকলেও ভালো হতো।