রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৯ অপরাহ্ন

সতীর্থের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে! নিঃশব্দে ফজরের নামাজ পড়লেন কান্তে

স্পোর্টস ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২ জুন, ২০২১

সবচেয়ে লাজুক ও অমায়িক স্বভাবের খেলোয়াড় কে- এমন প্রশ্ন করা হলে সবার আগে যার নাম বলা হবে তিনি হলেন চেলসির ফরাসি মিডফিল্ডার এনগোলো কান্তে। কান্তে ধার্মিক মানুষ। নিয়মিতই সাধারণ মানুষদের সাথে মসজিদে নামাজ পড়েন। এমনকি সতীর্থের ঘুমের যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য কান্তে ফজরের নামাজও পড়েন নিঃশব্দে।

এই ফুটবল মহাবিশ্বের সবচেয়ে লাজুক ও অন্যতম সাদা মনের মানুষটি ঝামেলায় পড়া এক সতীর্থকে এক মাস নিজের বাসায় থাকতে দিয়েছিলেন। উইগান অ্যাথলেটিকের হয়ে খেলা ফরাসি ডিফেন্ডার সেড্রিক কিপর পিএসজি থেকে যখন লেস্টারে যোগ দিন তার এক বছর পর ফরাসি ক্লাব কাঁ থেকে ইংল্যান্ডে আসেন কান্তে। তখন অ্যাপার্টমেন্টে কিছু ঝামেলার কারণে বেশ যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। তখন তার ভাইসহ তাকে কান্তে এক মাস নিজের অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে দেন। তিনি বলেছেন, কান্তের এমন মহানুভবতায় আমি অভিভূত। তার কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি গর্বিত যে কান্তের মতো কারো সাথে আমার এ জীবনে দেখা হয়েছে। ফুটবল জগতে তার চেয়ে ভদ্র ও নিরহংকারী কেউ নেই বলে বিশ্বাস আমার।
এ তো গেল সেড্রিকের গল্প এভার আসা যাক বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত জলিলের গল্পে -সেন্ট প্যানক্রাসে ইউরোস্টারের ট্রেন মিস করেছিলেন কান্তে, এরপর কিংস ক্রসের কাছের এক মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন তিনি। একই মসজিদে নামাজ পড়ছিলেন লিভারপুল সমর্থক বদলুর রহমান জলিল এবং তার বন্ধুরা। নামাজ শেষে কান্তেকে তার বাড়িতে দাওয়াত দেন জলিল, কান্তেও রাজি হয়ে যান হাসিমুখেই।
এরপর জলিলের বাসায় ফিফা খেলা, রাতের খাবার খাওয়ার পর কান্তে বিবিসির ম্যাচ অফ দ্য ডে প্রোগ্রামও দেখেছিলেন তাদের সাথে। এত বড় মাপের ফুটবলার হয়েও কান্তের বিনয় ছুঁয়ে গিয়েছিল জলিলকে, ‘আমরা তার সাথে অনেক ছবি তুলেছিলাম ওই দিন। একবারের জন্যও বিরক্তবোধ করেননি কান্তে, উল্টো আমাদের সাথে বন্ধুর মতোই মিশেছিলেন। নিজেকে কখনোই অন্যদের চেয়ে উঁচুমাপের কেউ হিসেবে দাবি করেননি তিনি। আমরা লিভারপুল, আর্সেনাল সমর্থক হলেও কান্তের অনেক বড় ভক্ত। তিনি আমাদের মতো মুসলিমদের জন্য বিশাল এক অনুপ্রেরণা।’এন’গোলো কান্তেকে নিজ মেয়ের বিয়েতে দাওয়াত দিয়েছিলেন ব্রিটিশ ব্যবসায়ী ফ্র্যাঙ্ক খালিদ। ব্যস্ততার কারণে আসতে না পারার কথাই জানিয়েছিলেন কান্তে। কিন্তু খালিদ হয়তো তখনো ভাবেননি, ইনজুরিতে পড়ায় কিছুটা অবসর সময় পাওয়া কান্তে ঠিকই চলে আসবেন তার অনুষ্ঠানে। শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। সবাইকে অবাক করে খালিদের মেয়ের বিয়েতে এসেছিলেন কান্তে। টুইটারে কান্তের সাথে ছবি পোস্ট করে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন খালিদ, ‘কান্তে একজন অসাধারণ মানুষ। আমার রেস্তোঁরায় এক বন্ধুর মাধ্যমে পরিচিত হয়েছিলাম আমরা। আমার পরিবার এবং আমার সাথে কান্তের সখ্যতা দারুণ। গত বছরের এপ্রিলে আমার ট্রিপল বাইপাস সার্জারির পরপরই সে খোঁজখবর নিয়েছিল। আমার মেয়ে হেনার বিয়েতে তাকে দাওয়াত দিয়েছিলাম, কিন্তু ফ্রান্স জাতীয় দলের খেলা থাকায় সে আসতে পারবে না বলে জানিয়েছিল। কিন্তু ইনজুরিতে পড়ায় ফ্রেঞ্চদের হয়ে এই সপ্তাহে তার খেলা হচ্ছে না। এর পরপরই সে আমাকে আসার কথা জানায়।’ কান্তের ধৈর্যেরও প্রশংসা করেছেন খালিদ, ‘কান্তে আমার দেখা অন্যতম বিনয়ী মানুষ। বিয়েতে আসার পর থেকে শেষ পর্যন্ত ছিল সে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করার পর সবার সাথেই সেলফি তুলেছে সে, অটোগ্রাফও দিয়েছে অনেককে’।
শেষ করছি প্রিয় নবীজির মহান বাণী দিয়ে -রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সবসময় রাগ ও ক্রোধ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিতেন। তিনি মানুষকে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি নম্র-বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উচ্চাসনে আসীন করেন আর যে অহংকারী হয়, আল্লাহ তাকে অপদস্থ করেন।’ (মিশকাত)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com