রবিবার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৮:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
হাড়িভাঙ্গা আম ও সবজি সংরক্ষণের জন্য দেশের প্রথম হিমাগার হবে মিঠাপুকুরে-রংপুরে কৃষি মন্ত্রী চিতলমারীতে নবগঠিত স্কুল কমিটির পক্ষে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন মেয়র প্রার্থী আলাউদ্দিনের তিলোত্তমা পৌরসভা গড়ার অঙ্গীকার শ্রীমঙ্গলে একদিনে অজগর, বেত আঁচড়া সাপ ও চিল পাখি উদ্ধার করেছে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সেবা ফাউন্ডেশন পাহাড় ধ্বসে কক্সবাজারে ৩ দিনে ১২ জনের মৃত্যু সীতাকুন্ডে পথে-প্রান্তরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কদমফুল চাঁদা না পেয়ে কবরস্থান ভাঙচু বই মানুষকে আলোকময় জগতে পৌঁছতে সহায়তা করে: অধ্যাপক ড. সুকান্ত ভট্টাচার্য নকলা প্রেসক্লাব পরিবারের ঈদ পুনর্মিলনী সোহাগদলে বিএনপি নেতার টিন বিতরণ

বরিশালে দালালদের কাছে পণবন্দি লঞ্চ যাত্রীরা!

শামীম আহমেদ বরিশাল প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় বুধবার, ৯ জুন, ২০২১

বরিশাল টু ঢাকার সবচেয়ে আরামদায়ক পথ হচ্ছে নৌপথ। দীর্ঘদিন ধরে এই রুটে চলাচল করে আসছে দেশের সবচেয়ে বিলাসবহুল লঞ্চগুলো। কিন্তু এই আরামদায়ক রুটে যাত্রীদের ভোগান্তিুর যেন শেষ নেই! এই রুটে বিলাসবহুল লঞ্চ চলাচল করলেও এসব লঞ্চের টিকিট সোনার হরিণ। বেশিরভাগ লঞ্চ কোম্পানির কাউন্টারেই মিলছে না টিকিট। সব কাউন্টার থেকেই জানানো হচ্ছে, টিকিট নেই। তবে টিকিট পাওয়া যাচ্ছে দালালের কাছে। ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা বেশি দিয়ে তা সংগ্রহ করতে হচ্ছে যাত্রীদের। জানা গেছে, বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে প্রতিদিন ১০টির মতো লঞ্চ চলাচল করছে। লঞ্চ কোম্পনিগুলোর মধ্যে রয়েছে, মানামী, কুয়াকাটা, সুন্দরবন, সুরভী, কীর্তনখোলা, অ্যাডভেঞ্চার, পারাবত, ফারহান। এসব লঞ্চে সিঙ্গেল, ডাবল, ভিভিআইপি, ভিআইপি, সেমি ভিআইপি, শৌখিন ও ফ্যামিলি ক্যাটাগরিতে কয়েক হাজার কেবিন রয়েছে। অতীতে মূলত ঈদের পূর্বেই দেখা যেতো লঞ্চের কেবিন সংকট। রমজান শুরুর পর থেকেই সাধারণ যাত্রী ও তাদের স্বজনরা কেবিনের টিকিট পেতে লঞ্চের অফিস ও কাউন্টারগুলোতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন। ওই সময় তাদের কাছ থেকে স্লিপ জমা রাখা হয়। তবে নির্ধারিত সময়ে তাদের নামে কোনো কেবিন থাকে না বলে অভিযোগ রয়েছে। কেবিনের খাতায় নাম থাকে প্রভাবশালী ব্যক্তির ও মালিকপক্ষের লোকজনের। এ কারণে প্রতিবছর ঈদ মৌসুমে প্রভাবশালী ব্যক্তি অথবা লঞ্চ মালিক পক্ষের লোকজনের মাধ্যমে কেবিন নিতে হয় সাধারণ যাত্রীদের। বাড়ি ফেরার নানা ঝক্কির সঙ্গে যোগ হয় টিকিট পাওয়ার জন্য লবিংয়ের ঝক্কি। আর যাদের প্রভাবশালীদের সঙ্গে পরিচয় নেই, তাদের ভরসা কালোবাজারের দালাল চক্র। যাত্রীরা বলছেন, কাউন্টারগুলোয় টিকিট না পাওয়া গেলেও বরিশাল নদীবন্দরে অতিরিক্ত ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা দিলেই দালালদের কাছে পাওয়া যায় ঈদের মৌসুমে কেবিনের টিকিট। তবে বর্তমানে শুধু ঈদের মৌসুমেই নয়, করোনার এই সময়েও যেন তাদের ঈদের মৌসুম! এতোগুলো লঞ্চের কয়েক হাজার কেবিনের টিকিট কোথায় যাচ্ছে? এই উত্তর খুঁজতে সরেজমিনে গত কয়েকদিন ধরে বরিশাল নগরীর পারাবত, সুন্দরবন, সূরভী, মানামী,কুয়াকাটা, কীর্তনখোলা লঞ্চ কাউন্টারে গিয়ে কোন টিকিট পাওয়া যায় নি। তবে সন্ধ্যার পূর্বে বরিশাল নদী বন্দরে পল্টুনে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলেই যেন টিকিটের ছড়াছড়ি। প্রকাশ্যেই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বিক্রি করা হয় কেবিনের টিকিট। তাহলে এসব টিকিট কোথা থেকে আসলো? অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, লঞ্চের কাউন্টার থেকে অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে টিকিট কালোবাজারি করে থাকেন একটি চক্র। বিভিন্ন লঞ্চের অসাধু কিছু কর্মকর্তার সহযোগীতায় লঞ্চের ‘কলম্যান অথবা খালাসীরা’ এই টিকিট কালোবাজারী করে থাকেন। এছাড়া কোন কোন লঞ্চে স্টাফদের সহযোগীতায় সরাসরী দালালরা ব্লাকে টিকিট বিক্রি করে থাকেন। বরিশাল লঞ্চঘাটে টিকিটের দালালদের লিষ্টে সর্বপ্রথমই আসে লেদুর নাম। লেদু দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল-ঢাকা নৌ রুটের টিকিট কালোবাজারীর সাথে যুক্ত রয়েছেন। কোন কাউন্টারে টিকিট থাকুক আর না থাকুক লেদুর কাছে কেবিনের টিকিট ঠিকই থাকবে। অবৈধভাবে এই ব্লাকে টিকিট বিক্রি করে লেদুর আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। এছাড়া কোন বশির, খোকনও যুক্ত রয়েছে পারাবতের টিকিট ব্লাকিং এর সাথে। নগরীর কেডিসি এলাকার একসময়ের চিহ্নিত বখাটে জুয়েল, তিনি মূলত কুয়াকাটা-২ লঞ্চের টিকিট ব্লাক করে থাকেন। লঞ্চঘাটে এই প্রতিবেদকের কাছে জুয়েল নিজেই স্বীকার করেন তিনি এই ঘাটের বড় একজন টিকিট দালাল। অবাক হচ্ছে যেন বিলাসবহুল কুয়াকাটা-২ লঞ্চের টিকিটও ব্লাক হয়! হ্যা শুধু জুয়েলই নয় জামাল, বারেক, রানা সহ বেশ কয়েকজন কুয়াকাটা-২ এর কেবিনের টিকিট কালোবাজারের সাথে যুক্ত। বিলাসবহুল আরেক লঞ্চ মানামীর টিকিট ব্লাক করে বিক্রি করেন রিপন সহ কয়েকজন। এসব টিকিট ব্লাকাররা দীর্ঘদিন ধরে এই রূটের টিকিট কালোজারের সাথে যুক্ত রয়েছেন। যাত্রীদের ভোগান্তির কথা চিন্তা না করে মূলত এরা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় এই অবৈধ কাজটি করে থাকেন। সবুর হাওলাদার নামে এক যাত্রী জানায়, লঞ্চের কেবিনের টিকিটের জন্য আমি দুই আগেই কয়েকটি লঞ্চের কাউন্টারে যোগাযোগ করেছি, তারা বলেছেন তাদের সব কেবিন বুকিং। কিন্তু আজ (গতকাল) সন্ধ্যায় আমি যখন লঞ্চঘাটে আসি ঠিক তখনই দেখি পারাবত লঞ্চের সামনে কেবিন খালি আছে বলে অনেককেই ডাকাডাকি করছে। আমি পরে ৪শ’ টাকা বেশি দিয়ে একটি কেবিন সংগ্রহ করেছি। মকবুল মোল্লা নামে আরেক যাত্রী বলেন, টিকিট নাই কিন্তু ঠিকই লঞ্চঘাটে দালালদের কাছে টিকিট পাওয়া যায়, এই টিকিটগুলো যদি লঞ্চের কাউন্টার থেকে নিয়ন্ত্রন করা হয় তাহলে অতিরিক্ত মূল দিয়ে কাউকে টিকিট কিনতে হয় না। এই বিষটির দিকে লঞ্চের মালিকদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত, তারা যদি এইদিকে একটু নজর দেয় তাহলে আর যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হতো না।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com