জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হতে না হতেই পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে। স্থানীয় জনগণ হাত দিয়েই সড়কের পিচ ঢালাই কার্পেটিং টেনে তুলছেন। যা নিয়ে এলাকাবাসী, পথচারী এবং ওই সড়কে চলাচলকরা যানবাহন চালকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি জেলার উজিরপুর উপজেলার ব্যস্ততম ও জনগুরুত্বপূর্ণ সানুহার-ধামুড়া সড়কের। স্থানীয়দের অভিযোগ, নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করে সড়ক সংস্কার করায় কাজ শেষ হতে না হতেই ইতোমধ্যে সড়কের কয়েকটি অংশের পিচ ঢালাই (কার্পেটিং) উঠে গেছে। পিচ, পাথর ও বিটুমিনসহ চলমান সংস্কার কাজে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার সানুহার বাসস্ট্যান্ড থেকে ধামুরা বন্দর পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সাড়ে চার কিলোমিটার সড়কের সংস্কারের কাজ চলছে। সড়কের সেনেরহাট বাজার সংলগ্ন এলাকায় ঠিকাদারের লোকজন গাছের পাতা ও ময়লা আর্বজনা পরিস্কার না করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নিয়ম অনুসারে কম্প্রেশার মেশিন দিয়ে সড়ক পরিস্কার করে প্রাইমকোর্ট দিয়ে পিচ ঢালাইয়ের কাজ করার কথা রয়েছে। তা না করে গাছের পাতা ও ময়লার ওপরই চলছে কার্পেটিংয়ের কাজ। সড়কের প্রায় আড়াই কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নিন্মমানের বিটুমিন, বালি, পাথরের মিশ্রনে কাজ করায় যানবাহন চলাচলের সময় চাকার সাথে অনেক জায়গার কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধানে পল্লী সড়ক ও ব্রীজ-কালভার্ট মেরামত করন জিওবি মেইনটেন্যান্স প্রকল্পের আওতায় খানাখন্দে ভরা সাড়ে চার কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য অনুমোদন হয়। উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সানুহার-ধামুরা সড়কের কচুয়া নামকস্থান থেকে ধামুরা বন্দর পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার অংশের সংস্কারের জন্য চলতি বছরের শুরুর দিকে দরপত্র আহবান করা হয়। যার প্রাক্কলিন ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। তবে ১৮ শতাংশ লেসে ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় কাজটির কার্যাদেশ পায় মেসার্স মিজান মীম ও আলিফ ট্রেডার্স (জেবি) নামের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চলতি বছরের শুরু থেকে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে না পারায় শেষসময়ে এসে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে কাজটি সমাপ্তের চেষ্টা করছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কচুয়া গ্রামের নিবির বাড়ৈ ও ইমন হাওলাদারসহ একাধিক বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, সড়কটি সংস্কারে এতোটা নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে যে, কাজ শেষ হতে না হতেই সড়কের অনেক অংশের পিচ ঢালাই উঠে গেছে। হাত দিয়ে টান দিলেই পিচ ঢালাই উঠে যাচ্ছে। নিন্মমানের কাজ করার অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার মাহবুবুর রহমান মিরন সাংবাদিকদের জানান, এ কাজটি বরিশাল জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় মেইনটেন্যান্স’র কাজ। কাজটি স্বয়ং এলজিইডি বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী দেখভাল করেন। প্রতিনিয়ত কাজের মান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। তারপরেও নির্মাণ কাজে কোন ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে ব্যবস্থা নিবেন আমরা সেটা মানতে রাজি। সড়কের কার্পেটিং উঠে যাওয়ার ব্যাপারে ঠিকাদার মিরন অভিযোগ করে বলেন, গত ৯ জুন বিকেলে কচুয়া পল্লী বিদ্যুতের সাব সেন্টার সংলগ্ন এলাকা থেকে কাশিং ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার সড়কের পিচ ঢালাইয়ের কাজ করা হয়। কিন্তু ওইদিন দিবাগত রাতের আঁধারে সড়কের কয়েকটি স্থান থেকে কতিপয় দুর্বৃত্তরা সেই পিচ ঢালাই লোহার রড কিংবা শাবল দিয়ে উঠিয়ে ফেলেছে। পরবর্তীতে আমরা সেটা ঠিক করে দিয়েছি। সংস্কার কাজে কোন প্রকার অনিয়ম হচ্ছে না জানিয়ে উজিরপুর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মীর মাহিদুল ইসলাম বলেন, সড়কটির পুরুত্ব হবে ২৫ মিলি। সে অনুযায়ী সংস্কার কাজ চলছে এবং গুনগত মান এখন পর্যন্ত ঠিক রয়েছে।