গাজীপুরের শ্রীপুরের বাঁশ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হচ্ছে। উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নে শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে সবচেয়ে বড় বাঁশের হাট বসে। এ হাটে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাঁশ কিনতে আসেন। প্রতি মাসে এখান থেকে প্রায় দেড়-পৌনে দুই কোটি টাকার বাঁশ কেনা-বেচা হয়। জানা গেছে, গাজীপুরের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি বাঁশ চাষের জন্য বেশ উপযোগী হওয়ায় এখানে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ধরনের বাঁশের চাষ হয়। বাঁশ লাগানো ও পরিচর্যায় তেমন কোনো খরচ নেই বললেই চলে। একবার বাঁশের চারা লাগালে চার থেকে পাঁচ বছর পর তা থেকে বাঁশ কাটা যায়। প্রতিটি মাঝারি ঝাড় থেকে বছরে ৫০/৭০টি বাঁশ পাওয়া যায়। শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে প্রায় ১০ বিঘা জায়গায় বসে এই হাট। এখানে প্রতি হাটবার ছাড়াও প্রতিদিনই চলে বাঁশ কেনা-বেচা। কেউ কিনতে ব্যস্ত, কেউ ট্রলারে সাজাতে ব্যস্ত, কেউবা আঁটি বেঁধে নদীতে ভাসাতে কাজ করছেন। প্রতিদিন ভোর থেকে উপজেলা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসতে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের/জাতের বাঁশ। ঢাকা নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ইশ্বরদী, শান্তাহারসহ বিভিন্ন জেলার ক্রেতারা এখানে বাঁশ কিনতে আসেন। বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা সেই বাঁশ নদী পথে জেলার বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যান। তবে কিছু কিছু ব্যাপারিরা সড়ক পথেও বাঁশ আনা-নেওয়া করেন।
এছাড়া বাঁশ পরিবহনের সবচেয়ে জনপ্রিয় বাহন হলো নদীতে ভেলা বানিয়ে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া। ঘর তৈরি, পানের বরজ, সবজি চাষের মাচা, মাছ ধরার সরঞ্জাম, বাঁশের তৈরি নানা ধরনের আসবাব থেকে শুরু করে আধুনিক ডেকোরেটরদের বিভিন্ন কাজে বাঁশের ব্যবহার হয়। ফলে, এসব অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয় হওয়ায় ব্যাপারিরা এখান থেকে বাঁশ কিনে নিজেদের হাটে বিক্রি করে আবার ফিরে আসেন বাঁশ কিনতে। এখানে বাঁশের দাম নাগালের মধ্যে থাকায় ক্রেতারা খুশি। গোসিংগা গ্রামের এই বাঁশের হাটটি এলাকার বেকারদের জন্য করে দিয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। প্রতিদিন অন্তত ১ হাজার দিনমজুর এখানে কাজ করেন। কেউ করেন বাঁশ ট্রলারে উঠানোর কাজ, কেউবা করেন বাঁশের স্তুপ সাজানোর কাজ, আবার কেউবা করেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা বাঁশ পরিবহন থেকে নামানো ও বাঁধার কাজ। শ্রীপুর উপজেলার পাইকাড়া গ্রামের ইসলাম উদ্দিন বলেন, আমি প্রায় ৩৫ বছর যাবত এই বাঁশের ব্যবসা করে আসছি। অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাঁশের হাট। আকার ভেদে প্রতিটি বাঁশ দেড়শ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বেচা-কেনা হয়। প্রতি মাসে এখান থেকে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকার বাঁশ বিক্রি হয়। নরসিংদী থেকে আসা পাইকার আশরাফ আলী বলেন, গোসিংগা হাট থেকে প্রতি বুধবার ৫০ থেকে ১ লাখ টাকার বাঁশ কিনি। নরসিংদী নিজের আড়ৎ রয়েছে, সেখানে নিয়ে বিক্রি করি। প্রতি হাটে কমপক্ষে ২৫ লাখেরও বেশি টাকার বাঁশ কেনা-বেচা হয় এ হাটে। মাসে প্রায় ১ কোটি টাকার বাঁশ কেনা-বেচা হয় বলেও জানান তিনি। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী খোরশেদ বলেন, আমরা দীর্ঘ দিন যাবত এখান থেকে বাঁশ কিনে নিয়ে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করি। এতে আমাদের ভালো লাভ হয়।- রাইজিংবিডি.কম