জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন কার্যক্রমের দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের কাছেই যাচ্ছে। এ বিষয়টি স্পষ্ট করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে ফের চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর আগে এনআইডি সেবা দেয়ার দায়িত্ব নিজেদের কাছে রাখার যুক্তি দেখিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছিল ইসি। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ইসিকে ফিরতি চিঠি দিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত ২০ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্মসচিব শফিউল আজিম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইসি সচিবকে পাঠানো হয়।
‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্তকরণ’ শিরোনামে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘১৭ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঠানো পত্রের আলোকে সরকার জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম আইনানুগভাবে নির্বাচন কমিশন হতে সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এমতাবস্থায়, নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালনের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’ এর আগে গত ৮ জুন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম নিজেদের কাছে রাখার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দিয়েছিল ইসি। এনআইডির কাজ অন্য বিভাগে গেলে ভোটার তালিকা করা ও তা হালনাগাদ, নির্বাচনসহ বিভিন্ন সমস্যা হবে, এটি সংবিধানবিরোধী বলেও দাবি করে ইসি।
এনআইডি সেবা কার কাছে থাকা উচিৎ? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবার দায়িত্ব দিচ্ছে সরকার। অন্যদিকে এনআইডি কার্যক্রম নিজেদের অধিনেই থাকা উচিৎ বলে মনে করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ নিয়ে দুই পক্ষই নিজেদের যুক্তি দেখাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন উঠছে, কোন সংস্থার অধীনে এনআইডির সেবা কার্যক্রম থাকা দরকার ?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক এবং দি হাঙ্গার প্রজেক্টর বাংলাদশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ও গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্রের সাথে ভোটার তালিকা জড়িত। যা একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের (নির্বাচন কমিশন) অধীনে রয়েছে। এটি তাদের অধীনেই থাকা উচিৎ। এখন নতুন আইন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়া উচিৎ নয়।’ কেন মন্ত্রণালয়ের অধীনে উচিৎ নয় বা গেলে কি প্রভাব পড়তে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘এনআইডির কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে গেলে ভোটার তালিকা তৈরিতে প্রভাব পড়তে পারে। এমনকি ভোটেও প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া এনআইডির অপব্যবহর হতে পারে। সেই সঙ্গে এটি রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হতে পারে।’ ২০০৭ সাল থেকে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন কাজের অংশ হিসেবে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে আসছে ইসি। তারাই এখন জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনের সব কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইসিকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে এই ক্ষমতা দেয়া হয়। বর্তমানে এনআইডি নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগকে এনআইডি কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে গত ১৭ মে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠির অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) পাঠানো হয়েছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইসির কর্মকর্তারা। সম্প্রতি ইসি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচন কমিশনারের কাছে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে এনআইডির দায়িত্ব ইসির কাছে রাখতে পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানায়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেন, এনআইডি কার্যক্রম ইসির হাতে থাকা উচিৎ। কারণ ইসি এটি তৈরি করেছে ভোটার তালিকা তৈরির ভিত্তিতে। ভোটার তালিকা করব আমরা, এনআইডি থাকবে তাদের কাছে এটা কোনোভাবেই হয় না। এতে করে ভোটার তালিকা করতে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য অমূলক দাবি করে সোমবার তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, সব দেশেই তা আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই কাজ করবে। বিদেশে যারা অবস্থান করছে, তাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই পাসপোর্ট দেয়। তাদেরও ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেওয়া হয়। সুতরাং এ ক্ষেত্রে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র আর ভোটার আইডি কার্ড এক বিষয় নয়। পৃথিবীর সব দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবার কাজ করে থাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অথবা অন্য কোনো মন্ত্রণালয়। নির্বাচন কমিশন শুধু ভোটার তালিকা নিয়ে কাজ করে। জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের আশঙ্কা অমূলক। এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকবে।