ক্ষমা মহৎ গুণ। এর বিপরীতে প্রতিশোধপরায়ণতা একটি মানবীয় দুর্বলতা। এটি মানুষের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে না। কারো ওপর প্রতিশোধ নেওয়া বা কাউকে ঘায়েল বা পরাভূত করতে পারাটাই বীর হওয়ার লক্ষণ নয়, বীর হলো ওই ব্যক্তি, যে নিজেকে ক্রোধের সময় সংবরণ করতে পারে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রকৃত বীর সে নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং সেই আসল বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। (বুখারি, হাদিস : ৬১১৪)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর সেই বান্দাদের প্রশংসা করেছেন, যারা রাগের সময় প্রতিশোধ না নিয়ে মানুষকে ক্ষমা করে দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা কবিরা গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে বেঁচে থাকে এবং যখন রাগান্বিত হয় তখন তারা ক্ষমা করে দেয়। (সুরা আশ শুরা, আয়াত : ৩৭)
এটা খাঁটি মুমিনদের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। তারা ক্রোধের সময় নিজেদের হারিয়ে ফেলে না; বরং তখনো ক্ষমা ও অনুকম্পা তাদের মধ্যে প্রবল থাকে। ফলে ক্ষমা করে দেয়। তারা রূঢ় স্বভাবের হয় না; বরং নম্র স্বভাব ও ধীর মেজাজের মানুষ হয়। তাদের স্বভাব প্রতিশোধপরায়ণ হয় না। তারা আল্লাহর বান্দাদের সঙ্গে ক্ষমার আচরণ করে এবং কোনো কারণে ক্রোধান্বিত হলেও তা হজম করে। এটি মানুষের সর্বোত্তম গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনেও এই গুণগুলোকে অত্যন্ত প্রশংসার যোগ্য বলে ঘোষণা করেছে। এবং মহান আল্লাহ এই মহৎ গুণের অধিকারীদের তাঁর প্রিয় বান্দা বলে ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে, যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আর আল্লাহ মুহসিনদের ভালোবাসেন। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)
এ কারণে রাসুল (সা.) তাঁর সাহাবিদের রাগ নিয়ন্ত্রণের প্রতি অধিক উৎসাহ দিতেন। এক সাহাবি রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলেন, আমাকে এমন একটি কথা বলুন, যা আমার কাজে আসবে, আর তা সংক্ষেপে বলুন, যাতে আমি তা আয়ত্ত করতে পারি। তখন রাসুল (সা.) তাকে বলেন, রাগ করো না। সাহাবি বারবার একই প্রশ্ন করলেন আর রাসুল (সা.)ও একই জবাব দেন। (বুখারি, হাদিস : ৬১১৬)
রাসুল (সা.) নিজেও কখনো ব্যক্তিগত আক্রোশের বশবর্তী হয়ে কারো ওপর প্রতিশোধ নেননি। আয়েশা (রা.) বলেন, নবী (সা.) নিজের ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘন করা হলে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য প্রতিশোধ নিতেন। (বুখারি, হাদিস : ৩৬৫০)
রাগ ও প্রতিশোধপরায়ণতা মানুষকে সম্মানী করে না; বরং এগুলো মানুষকে সর্ব মহলে নিন্দিত করে। কারণ এই অভ্যাসগুলো তাদের আপন মানুষদেরও তাদের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। এই অভ্যাসগুলো তাদের এতটাই অন্ধ করে দেয় যে তারা অকারণে নিজের অজান্তেই নিজের আপন মানুষদেরও ক্ষতি করে বসে।
এ জন্য প্রতিটি মুমিনেরই এই অভ্যাসগুলো ত্যাগ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। ক্ষমাশীল হতে হবে। আল্লাহর জন্য বিনয়ী হতে হবে। ইনশাআল্লাহ, এর বিনিময়ে মহান আল্লাহ তাদের সম্মানী করবেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা কোনো বান্দাকে ক্ষমার বিনিময়ে শুধু সম্মানই বৃদ্ধি করে দেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয় আল্লাহ তাকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩২৫)