বৃষ্টি তথা আবহাওয়া বাধা হয়ে না দাঁড়ালে হয়তো আগামী ২৬ জুনই নির্ধারিত হয়ে যাবে প্রিমিয়ার লিগের ভাগ্য। শনিবার সন্ধ্যার আগে পড়ন্ত বিকেলেই জানা যাবে ২০২০-২০২১ প্রিমিয়ার লিগের চ্যাম্পিয়ন কে?
জাতীয় দলের ক্রিকেটার দুই দলে প্রায় সমান। হাতের আঙুলে ব্যথা পেয়ে সুপার লিগের মাঝামাঝি সরে দাঁড়ানো মুশফিকুর রহীমকে ধরলে বর্তমান ও পুরনো মিলে আবাহনীতে জাতীয় ক্রিকেটার প্রায় ১০ জন। তারা হলেন-লিটন দাস, নাইম শেখ, নাজমুল হোসেন শান্ত, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, আরাফাত সানি ও তাইজুল ইসলাম।
প্রাইম ব্যাংকে বর্তমান আর সাবেক জাতীয় ক্রিকেটারও কম নয়। প্রায় আবাহনীর কাছাকাছি। হাঁটুর ইনজুরির কারণে প্রথম লেগ শেষে বিশ্রামে চলে যাওয়া ব্যাটিং স্তম্ভ তামিম ইকবালসহ প্রাইম ব্যাংকেও আছেন ৯ জাতীয় ক্রিকেটার। তারা হলেন-এনামুল হক বিজয়, মোহাম্মদ মিঠুন, রকিবুল হাসান, অলক কাপালি, রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম ও নাঈম হাসান।
এদিকে শুধু জাতীয় দলের ক্রিকেটারের সংখ্যায় প্রায় সমান সমানই নয়, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও আবাহনী আর প্রাইম ব্যাংকের ক্রিকেটারদের মধ্যে হচ্ছে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। রান তোলা ও উইকেট শিকারে দুই দলের পারফরমারদের লড়াই ‘সেয়ানে সেয়ানে’।
ব্যাটিং, পেস বোলিং আর স্পিন-তিন ডিপার্টমেন্টেই সাফল্যে অন্য সব দলের চেয়ে তুলনামূলক এগিয়ে আবাহনী ও প্রাইম ব্যাংকের পারফরমাররা। রান তোলা ও পেস বোলিংয়ে সেরা ১০-১২ জনে দুই দলের আছেন তিনজন করে পারফরমার।
যেমন-লিগে টপ স্কোরারদের তালিকার ৪ নম্বর জায়গাটি আবাহনীর নাইম শেখের। এ বাঁহাতি টপ অর্ডারের মোট রান ১৫ ম্যাচে ৩৭৫। সর্বোচ্চ ৭০। গড় ৩১.২৫। স্ট্রাইকরেট ১২৪.১৭।
রান তোলায় ঠিক নাইমের পেছনে আছেন প্রাইম ব্যাংকের রনি তালুকদার। তার সংগ্রহ ৩৬৬। হাফসেঞ্চুরি তিনটি। স্ট্রাইকরেট ১৩৬.০৫।
এছাড়া প্রাইম ব্যাংক আর আবাহনীর আরও ক’জন ব্যাটসম্যান আছেন সেরা দশে। প্রাইম ব্যাংকের মোহাম্মদ মিঠুন আছেন রান তোলায় সাত নম্বরে। তার সংগ্রহ ৩৫৫ রান। ফিফটি তিনটি। স্ট্রাইকরেট ১৩০.৫১।
আর টপ স্কোরার লিস্টের নয় নম্বরে আবাহনীর তরুণ আক্রমণাত্মক ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার। তার রান ৩৫২। ১৪৪.৮৫ স্ট্রাইকরেটে দুটি ফিফটি নামের পাশে ময়মনসিংহের এ ২২ বয়সী ওপেনারের। এছাড়া সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকার ১২ নম্বরে আবাহনীর নাজমুল হোসেন শান্ত (১৪ ইনিংসে ৩১২, অর্ধশতক দুটি)।
হাঁটুর ইনজুরির কারণে সুপার লিগ খেলেননি। তাই এখন একটু পিছিয়ে, ১৫ নম্বরে। অন্যথায় রান তোলায় হয়তো অনেক ওপরে থাকতেন প্রাইম ব্যাংক তথা দেশের এক নম্বর ওপেনার তামিম ইকবাল (১১ ম্যাচে ছিল ৩০৬ রান)। আর সেরা ১০ ও ১৫‘তে না থাকলেও আবাহনীর নিয়মিত অধিনায়ক মুশফিক ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে ১৩ ম্যাচে করেছিলেন ২৬৭ রান।
উইকেট প্রাপ্তিতে সবার ওপরে প্রাইম দোলেশ্বরের পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি (২৫ উইকেট)। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি আবাহনীর পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। তার ঝুলিতে জমা পড়েছে ২২ উইকেট। আর ঠিক সাইফউদ্দিনের ঘাড়েই নিঃশ্বাস ফেলছেন প্রাইম ব্যাংকের তরুণ পেসার শরিফুল ইসলাম। তার উইকেট সংখ্যা ২১।
শরিফুল, মোস্তাফিজ আর রুবেল-তিন দ্রুতগতির বোলারে সাজানো প্রাইম ব্যাংকের পেস আক্রমণ বেশ ধারালো। পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ। বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ১৩ ম্যাচে ১৬ উইকেট দখল করে নবম স্থানে। তার ঠিক পিছনেই ১০ ম্যাচে ১৫ উইকেট শিকারি রুবেল হোসেন।
আবাহনীর পেসারদের কেউ উইকেট প্রাপ্তিতে শীর্ষ দশে না থাকলেও বাঁহাতি পেসার মেহেদি হাসান রানা ১৬ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে ১১ নম্বর। আরে পেসার তানজিম হাসান সাকিবেরও উইকেট ১৬টি (১৩ ম্যাচে)।
তবে একটা অদ্ভুত বিষয় আছে। প্রাইম ব্যাংক ও আবাহনীর কোনো স্পিনারই উইকেট প্রাপ্তিতে শীর্ষ দশে নেই। প্রাইম ব্যাংকের দুই অফস্পিনার নাহিদুল ইসলাম (১৫ ম্যাচে ১৪ উইকেট) ১৯ নম্বরে। অপর অফস্পিনার নাঈম হাসান (১৪ ম্যাচে ১২ উইকেট) আরও পেছনে।
আবাহনীর স্পিনাররা আরও পিছিয়ে। বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি (১৫ ম্যাচে ১২ উইকেট) দীর্ঘ অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দলকে ব্রেক থ্রু উপহার দিচ্ছেন প্রায়ই। কিন্তু উইকেট শিকারে তিনি সেরা বোলারদের তালিকায় ১৫ জনেও নেই।
এখন দেখা যাক, অঘোষিত ফাইনালে কোন দলের ব্যাটিং, পেস আর স্পিন বোলিং ক্লিক করে! ব্যাটে কিংবা বলে ম্যাচ নির্ধারণী ভূমিকা কারা রাখেন, সেটাই দেখার।