বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী আর নেই সংস্কারে সরকারকে সহযোগিতা করা হবে যেন ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে: সেনাপ্রধান দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতের সাথে বিএনপির বৈঠক টাকা ছাপালে সাময়িক স্বস্তি মিলবে, সমস্যার সমাধান হবে না: গভর্নর নতুন নারী প্রধানমন্ত্রী পেল শ্রীলঙ্কা চকরিয়ায় যৌথবাহিনীর অভিযান চলাকালে সন্ত্রাসী হামলায় সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছরোয়ার নির্জন নিহত মানিকগঞ্জে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক সভা নকলার নবাগত ওসিকে জামায়াতের ফুলেল শুভেচ্ছা পিরোজপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলু’র বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপ্রপ্রচারের অভিযোগ শ্রীমঙ্গলে মিটার টেম্পারিং করে গ্যাস চুরির দায়ে মেরিগোল্ড সিএনজি পাম্প থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন

উমর গৌতমের মাধ্যমে মুসলিম হওয়া ১০০০ ব্যক্তির কোনো অভিযোগ নেই

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২ জুলাই, ২০২১

ভারতের উত্তর প্রদেশের পুলিশ উমর গৌতমকে গ্রেফতার করেছে। তিনি একজন ধর্মান্তরিত মুসলিম, তার আগের নাম ছিল প্রতাপ সিং গৌতম। এছাড়া মুফতি জাহাঙ্গির কাসিমকেও আটক করেছে ভারতের এ প্রদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। ভারতের উত্তর প্রদেশের বিতর্কিত ধর্মান্তরবিরোধী আইনে এ দু’ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের অভিযোগ, তারা জোরপূর্বক এক হাজার হিন্দুকে মুসলিম বানিয়েছে। কিন্তু, মজার বিষয় হলো, হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হওয়া ওই এক হাজার ব্যক্তির মধ্যে কেউই এমন অভিযোগ করেননি যে তাকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। এমনকি হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত ওই মুসলিমরা তার বিরুদ্ধে কখনো কোনো মামলা বা অভিযোগ করেননি। এছাড়া তারা ভারতের কোনো গণমাধ্যমের সামনেও বলেননি যে তাদের জোর করে মুসলিম বানানো হয়েছে।
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খালিদ আখতার বলেন, উত্তর প্রদেশের বিতর্কিত ধর্মান্তরবিরোধী আইনের আওতায় কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই যে কাউকে গ্রেফতার করা যায়। পুলিশ নিজেই গ্রেফতার হওয়া এসব ব্যক্তির ওপর বিভিন্ন অভিযোগ আরোপ করে। এসব কারণে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যেখানে অভিযুক্ত ও গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকেই এটা প্রমাণ করতে হয় যে তিনি নিরাপরাধ।
তিনি আরো বলেন, ‘উত্তর প্রদেশের ধর্মান্তরবিরোধী আইন এমন একটি ব্যবস্থা যে এর মাধ্যমে কোনো প্রমাণ ছাড়াই নির্বিচারে যে কাউকে গ্রেফতার করা ও শাস্তি দেয়া যায়। এটা ব্যক্তির মনে এমন ভয় ঢুকিয়ে দেয় যে ওই ব্যক্তি আর ঠিকভাবে ধর্মপালন করতে পারে না। অথচ, ভারতের সংবিধানের ২৫তম অনুচ্ছেদ অনুসারে, ভারতীয় নাগরিকদের স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করার অধিকার দেয়া হয়েছে।’
এদিকে উমর গৌতম ও জাহাঙ্গির কাসিমের বিরুদ্ধে পুলিশের তদন্তে বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, উত্তর প্রদেশ পুলিশের একটি দল ২৩ জুন তারিখে এ প্রদেশের সাহারানপুর জেলার শিতলা খেদা গ্রামে যান এবং আব্দুল সামাদ নামের এক ব্যক্তিকে খুঁজে পান। এ ব্যক্তি ওই এক হাজার ব্যক্তির মধ্যে একজন যিনি ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলিম হয়েছেন। অভিযোগ ছিল, আব্দুল সামাদকে জোর করে মুসলিম বানানো হয়েছে। কিন্তু, পুলিশ ওউ ঠিকানায় গিয়ে আব্দুল সামাদ নামের কাউকে খুঁজে পাননি বরং এক কট্টর হিন্দু ব্যক্তির সন্ধান পান। ওই কট্টর হিন্দু ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে নিয়ে বইও লিখেছিলেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো এ কট্টর হিন্দু ব্যক্তি কখনোই মুসলিম ধর্ম গ্রহণ করনেনি। ওই হিন্দু ব্যক্তির নাম প্রভিন কুমার। ওই ব্যক্তি এটাও জানতেন যে তার নাম পুলিশের মামলায় এসেছে এমনভাবে যে তাকে জোর করে মুসলিম বানানো হয়েছে।
তবে উত্তর প্রদেশ পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি প্রসান্ত কুমার বলেছেন, পুলিশ ধর্মান্তরের বিষয়টি নিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। গাজিয়াবাদের মাসুরি পুলিশ থানার এক মামলার বিষয়ে তদন্তের সময় তিনি এ অভিযোগের সত্যতা পান। মোহাম্মদ রমজান ওরফে বিপুল বিজয়ভারগিয়া ও তার দুলাভাই মোহাম্মদ কাসিফের বিরুদ্ধে যে মামলা আছে তা তদন্ত করতে গিয়ে এ ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। তারা নিজেদের পরিচয় গোপন করে দাশনা মন্দিরে গিয়েছিলেন ও মন্দিরের পুরোহিত নরসিংআনন্দকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন বলে পুলিশ অভিযোগ করেছে। প্রসান্ত কুমার দাবি করেন, মোহাম্মদ রমজান ও মোহাম্মদ কাসিফের বিরুদ্ধে যে মামলা আছে তা তদন্ত করতে গিয়ে যে তথ্য পাওয়া যায় তার মাধ্যমে উমর গৌতমের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক এক হাজার হিন্দুকে মুসলিম বানানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেখা গেছে যে হিন্দিু থেকে মুসলিম হওয়া ব্যক্তিরা ও অনেক হিন্দু পুলিশের এ দাবিকে প্রত্যাখান করেছে। একইসাথে তারা এটাও বলেছেন যে অনেক গণমাধ্যম মাওলানা উমর গৌতমকে অপরাধী বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত। এছাড়া তারা মাওলানার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ নিয়ে শঙ্কিত।
সৌরভ দ্ত্ত শর্মা যিনি বর্তমানে মুসলিম হয়ে মোহাম্মদ সুফিয়ান নাম ধারণ করেছেন। তিনি মাওলানা উমর গৌতম সম্পর্কে মুসলিম মিররকে বলেন, আমি ২০১৩ সাল থেকে উমর গৌতমের সাথে আছি তিনি কখনোই আমাকে মুসলিম হবার জন্য চাপ দেননি। তাকে ভারতের গণমাধ্যম খারাপভাবে চিত্রিত করছে। এ ব্যাপারটা আমাদের দেশ ভারতের জন্য ভালো নয়। এমন চলতে থাকলে ভারতীয় সামাজে বিদ্যমান ধমীয় সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ আরেকজন ধর্মান্তরিত মুসলিম দিনেশ বলেন, আমি তখনই মাওলানা উমর গৌতমের সাথে সাক্ষাৎ করি যখন আমি বুঝতে পারি যে ইসলাম সত্য ধর্ম। তিনি ওই সময়ই আমাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলেননি। বরং, তিনি আমাকে কিছু ইসলামী বই দেন এবং তা ভালোভাবে পড়তে বলেন। তিনি আমাকে বলেন, তখনই তুমি আমার কাছে আসবে যখন ইসলাম ধর্মের প্রতি তুমি সম্পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট ও তৃপ্ত হবে। শর্মা ও দিনেশের মতো আরো অনেক ধর্মান্তরিত মুসলিম ও বহু হিন্দু মাওলানা উমর গৌতম সম্পর্কে তাদের অভিজ্ঞতার বিষয়ে চমৎকার সব তথ্য দিয়েছেন। তাদের এসব কথার ভিডিও প্রকাশ করেছে মুসলিম মিরর, মিল্লাত টাইমস ও মাকতুব মিডিয়া।
সৌরভ দ্ত্ত শর্মা বলেন, মওলানা উমর গৌতম ও তার সংগঠন ইসলামিক দাওয়া সেন্টার (আইডিএলসি) ইসলামের প্রকৃত সত্য প্রচারে জড়িত। তিনি ও তার সংগঠনের কর্মীরা ইসলাম সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা দূর করার চেষ্টা করেন। এছাড়া আইডিএলসি ধর্মান্তরিত মুসলিমদের নতুন আইনি পরিচয়পত্র দেয়। এসব পরিচয়পত্র ভারতীয় সংবিধান অনুসারে করা হয়। ভারতের সংবিধানে ব্যক্তি ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। সংবিধান অনুসারে ব্যক্তি যে কোনো ধর্ম গ্রহণ করতে পারে। এদিকে পাঁচ বছর আগের এক ভিডিওতে দেখা যায় মাওলানা উমর গৌতম বলছেন, তার সংগঠনের লক্ষ্য এটা নয় যে মানুষ ইসলাম ধর্মে ধমান্তরিত হয়ে মুসলিমদের সংখ্যা বাড়াক। তিনি ও তার সংগঠনের কর্মীরা চান ইসলাম সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা দূর হোক, মানুষ ইসলাম সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করুক। এরপরের সিদ্ধান্ত তাদের হাতে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সালে উমর গৌতম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এরপর তিনি জনগণকে ইসলাম সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা দেয়ার কাজে জড়িত হয়ে পড়েন। মুসলিম হিসেবে তিনি ৩৫ বছর অতিবাহিত করেছেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ বলতে পারেনি যে তিনি কাউকে জোর করে মুসলিম বানিয়েছেন। সূত্র : মুসলিম মিরর




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com