করোনা মোকাবিলায় দেশে অক্সিজেনের কোনো সংকট নেই। তবে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে অক্সিজেন নিয়ে চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল রোববার (৪ জুলাই) দুপুরে মহামারির পরিস্থিতি বর্ণনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বুলেটিনে এ সব কথা বলা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, অক্সিজেন-সংকটে রোগীর মৃত্যুর যে অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে তা সাংবাদিকদের জানানো হবে। বছরের ২৫তম সপ্তাহের তুলনায় ২৬তম সপ্তাহে রোগী বেড়েছে ৫১ শতাংশ। একই সময়ে মৃত্যু বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। মডার্নার টিকা দেওয়ার বিষয়ে অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, মডার্নার টিকা কীভাবে দেওয়া হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করছে।
করোনার টিকার মিশ্র ডোজ নিয়ে গবেষণা: বিশ্বের কয়েকটি দেশে এখন করোনাভাইরাসের টিকার মিশ্র ডোজ নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশেও এ নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের কাছে এখন সিনোফার্ম, মর্ডানা এবং ফাইজারের ৫৭ লাখ ডোজ টিকা রয়েছে। বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি মাসে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয় অক্সফোর্ড-আ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে। ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে ওই টিকার পূর্বনির্ধারিত ডোজ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেলে বিরাট সঙ্কটে পড়ে সরকারের টিকা কার্যক্রম। সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে চেষ্টা করে টিকা আনার। ওই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সরকারের হাতে এখন চীনের সিনোফার্ম, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না এবং ফাইজারের টিকা রয়েছে।
প্রায় দুই মাসের বিরতির পর সরকার আবারো শুরু করেছে গণটিকা কর্মসূচি। কিন্তু সমস্যা রয়েছে নানা জায়গায়। বাংলাদেশে এমন ১৫ লাখ মানুষ রয়েছেন, যারা অক্সফোর্ড-আ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছিলেন কিন্তু এখনো দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেননি। একই টিকার দুটি ডোজ না দিয়ে বরং দুটি ভিন্ন টিকার দুটি ডোজ দিলে সেটি নিরাপদ এবং বেশি কার্যকর কীনা, তা নিয়ে বিশ্বের নানা স্থানে গবেষণা চলছে। জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল নিজে দুটি ভিন্ন টিকার দুটি ডোজ নিয়েছেন। তাকে প্রথম ডোজ হিসেবে দেয়া হয়েছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা, আার দ্বিতীয় ডোজ মডার্নার। বাংলাদেশে যখন টিকার একটা অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী চিন্তা করছে?
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমীনা শিরীন বলেন স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং আইইডিসিআরের পক্ষে টিকার মিশ্র ডোজ ব্যবহারের গবেষণার জন্য একটা প্রোটোকল পত্র তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। তাহমীনা শিরীন বলেন, একদিকে কোভিশিল্ডের ভ্যাকসিন আসছে না, আবার অন্যান্য জায়গা থেকে আমরা ভ্যাকসিন পাচ্ছি। সেই ক্ষেত্রে আমাদের ‘মিক্স এন্ড ম্যাচ’ করতেই হবে। কারণ একেক সময় একেক রকম ভ্যাকসিন আসবে। তাই এই গবেষণাটা এখন বাংলাদেশের জন্য জরুরি। সেই গবেষণা আমরা করবো এবং তার ফলাফলটা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো’ আইইডিসিআর বলছে, সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা এসেছে কিছু তহবিল উদ্বৃত্ত আছে, সেই অর্থ কাজে লাগানোর জন্য বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গবেষণা প্রোটোকল পত্র জমা দিয়েছে। তবে প্রতিযোগিতামূলক যাচাই-বাছাই এর পর তহবিল পাওয়ার ভিত্তিতে গবেষণা শুরু করা নির্ভর করবে। তবে গবেষণার ফল পাওয়া সময় সাপেক্ষ হবে বলে জানাচ্ছে সংস্থাটি। এদিকে সরকারের টিকা বিষয়ক ন্যাশনাল ইমুনাইজেশন টেকনিক্যাল এক্সপার্ট গ্রুপ বা নাইটেগ টিকার মিশ্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। নাইটেগের সদস্য সচিব ড. বেনজীর আহমেদ দেশের মধ্যে মিশ্র ডোজের গবেষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন দিলে আর কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকবে না বলে মন্তব্য করেছেন।
‘এখানে ২/৩টা বিষয় আছে, প্রথমত এর কার্যকারিতা-দেখা গেল এর কার্যকারিতা ঠিক আছে, তারপর আসে এর ফলে কোনো জটিলতা হচ্ছে কীনা, তৃতীয়ত-এর স্থায়িত্ব কতটুকু! এই তিনটা প্রশ্নের মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত আপনি যখন সাধারণ জনগণকে কিছু দেবেন সেটা নৈতিকভাবে দিতে পারা যায় না।’ এদিকে জুন মাসের শুরুর দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছিল, কোভ্যাক্স কর্মসূচি থেকে ১০ লাখ ৮০০ ডোজ অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকা পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
তবে কবে নাগাদ এ টিকা বাংলাদেশের হাতে আসবে কিংবা কীভাবে বাংলাদেশ এটি সংগ্রহ করতে পারবে, তা নিশ্চিত করা হয়নি। এই বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে আইইডিসিআর বলছে যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তারা তিন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন ২য় ডোজের জন্য।
বয়স্করা টিকা পেলেই কমবে মৃত্যুর হার: একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরুর পর পার হয়ে গেছে পাঁচ মাসের বেশি সময়। এ সময়ের মধ্যে বারে বারে পরিবর্তন হয়েছে আগের পরিকল্পনা। পরিকল্পনা অনুসারে টিকা হাতে না পাওয়াতেই এটা ঘটেছে বলে মনে করছেন টিকাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা; যে কারণে মাঝেমধ্যেই ঘটছে নানা বিশৃঙ্খলা। আর এসবের ফলে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা বয়স্ক বা ষাটোর্ধ্ব বয়স শ্রেণির মানুষ টিকায় পিছিয়ে পড়েছেন। ফলে মৃতের সংখ্যা বাড়ছে।
এ পর্যন্ত দেশে মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশির বয়স ৫১ বছরের ওপরে, যাঁদের মধ্যে আবার ৭০ শতাংশ ষাটোর্ধ্ব। বিশেষজ্ঞরা শধষবৎশধহঃযড়বলছেন, যত বেশি বয়স্ককে টিকা দেওয়া যাবে, ততই মৃত্যু কম থাকবে। কারণ বয়স্ক মানুষ আগে থেকেই নানা রোগের জটিলতায় ভুগতে থাকায় তাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাঁদের যদি টিকা দেওয়া থাকে, তবে মৃতের সংখ্যা কমে আসবে; যেমনটা হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় যুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গোলাম রাহাত খান বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার আগে থেকে কঠোর পরিকল্পনার মাধ্যমে ৮০ বছরের ওপরের বয়সী মানুষকে টিকা দিয়েছে। এরপর ৭০-৬০-৫০ করতে করতে এখন শিশুদেরও টিকা দিচ্ছে। এর সুফল হিসেবে আমরা দেখছি, টিকা দেওয়ার আগে যেভাবে মৃত্যু ছিল এখন তা নেই। দিনে ২৬-২৭ হাজার আক্রান্ত হলেও মৃত্যু ৫০ জনেরও নিচে থাকছে। এর বড় কারণ বয়স্করা আক্রান্ত হলেও তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকি কমে গেছে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার কারণে। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশেও এখন জরুরি ভিত্তিতে সবার আগে বয়স্কদের খুঁজে খুঁজে টিকা দেওয়া উচিত।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, টিকা হাতে না পাওয়ায় এবং নিবন্ধন না করায় বয়স্করা পিছিয়ে পড়েছেন। এখন অবশ্য গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরকারি উদ্যোগে নিবন্ধনের পরিকল্পনা হচ্ছে। শহরে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে এ কাজ সহজ হলেও গ্রামে কিছুটা কঠিন হবে। তাই এখানে নগর স্বাস্থ্য ও সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নিতে হবে। এ ছাড়া এমন ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে বয়স্করা টিকাকেন্দ্রে গেলেই টিকা দিতে পারেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘টিকা পাওয়ার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আমরা এখনো আমাদের আগের পরিকল্পনা ধরেই এগোতে চাই। যেহেতু বয়স্কদের মৃত্যু বেশি, তাই তাঁদের আগে টিকা দেওয়ার টার্গেটও আছে। এ জন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবন্ধন করা এবং তাঁদের টিকা দেওয়ার আওতায় আনার ব্যবস্থাও আগে থেকেই আছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন যেহেতু টিকা আসতে শুরু করেছে, তাই হয়তো আমরা পরিকল্পনা অনুসারে এগোতে পারব। মাসে যদি এক কোটি ডোজও টিকা আসত, তবে এই কাজে সুবিধা হয়। নয়তো কিছু পথ গিয়ে আবার আটকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।’ দেশে টিকা আসার আগে গত বছর ডিসেম্বরেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা ব্যবস্থাপনা কমিটি পরিকল্পনা করেছিল, দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ হিসাবে পর্যায়ক্রমে মোট ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জনকে সরকারিভাবে বিনা মূল্যে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হবে। পাঁচটি ধাপে ৫০ ভাগে এই টিকা দেওয়া পরিকল্পনাও ছিল ওই সময়; যেখানে প্রথমে মোট জনগোষ্ঠীর ৩ শতাংশ হিসাবে ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ৪-৭ শতাংশ হিসাবে এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জনকে, তৃতীয় দফায় ১১-২০ শতাংশ হিসাবে এক কোটি ৭২ লাখ ৮০ হাজার ৯৩৮ জনকে, পরের ধাপে ২১-৪০ শতাংশের মধ্যে তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৭ জন এবং শেষ ভাগে ৪১-৮০ শতাংশের মধ্যে ছয় কোটি ৯১ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৪ জনকে টিকা দেওয়া কথা।
এ ক্ষেত্রে প্রথম আসা টিকা থেকে প্রথম ডোজ প্রথম পর্যায়ের ১৯ ক্যাটাগরির অগ্রাধিকারের শীর্ষে থাকা সম্মুখসারির মানুষকে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এর পরের ধাপেই রাখা হয় ষাটোর্ধ্ব বয়স্ক জনগোষ্ঠীসহ অন্যান্য শ্রেণি-পেশার মানুষকে। অগ্রাধিকারের প্রথমে থাকা ক্যাটাগরির মধ্যে আছেন সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে সরাসরি করোনা রোগীদের সেবায় কাজ করা চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ধাত্রী, ফিজিওথেরাপিস্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, অ্যাম্বুল্যান্সচালক; পরে বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে সরাসরি করোনা রোগীদের সেবায় কাজ করা চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান, ধাত্রী, ফিজিওথেরাপিস্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী ও অ্যাম্বুল্যান্সচালক। এরপর অন্যান্য বিভাগে কর্মরত চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীসহ, মুক্তিযোদ্ধা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মধ্যে যাঁরা সরাসরি করোনাসংশ্লিষ্ট দায়িত্ব পালন করেছেন, সম্মিলিত সেনাবাহিনীর সদস্যরা, বিচার বিভাগ, মন্ত্রণালয়, সচিবালয়, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, সাংবাদিকদের মধ্যে যাঁরা সরাসরি করোনার খবরাখবর সংগ্রহে কাজ করেছেন, সংসদ সদস্য, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত কর্মী, ষাটোর্ধ্ব বয়সের ধর্মীয় নেতা, দাফন ও সৎকারকর্মী, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা, বন্দরের কর্মকর্তা ও কর্মীরা, বিদেশগামী শ্রমিকরা, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী, ব্যাংককর্মীরা, যক্ষ্মা, এইচআইভি ও ক্যান্সার রোগী এবং অন্যান্য জরুরি সেবায় জড়িত ব্যক্তিরা। এ পর্যন্ত প্রথম ফেজের ৫১ লাখ ৮৪ হাজার ২৮২ জনের টিকা দেওয়া শেষ করার কথা ছিল।
দ্বিতীয় ধাপের মোট জনগোষ্ঠীর ৭ শতাংশের আওতায় প্রথমেই এক কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৭ জন সব ধরনের ষাটোর্ধ্ব জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকারে রাখা হয়েছিল। অর্থাৎ দেশে টিকা দেওয়া শুরুর দ্বিতীয় মাস থেকেই এই বয়স্ক বা সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকা মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা রাখা হয়। এর পরে বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক, গণমাধ্যমের বাদ পড়া কর্মী, পার্বত্য অঞ্চল ও দুর্গম অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসিন্দা, পরিবহন শ্রমিক, হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ফার্মেসির কর্মী, গার্মেন্টকর্মীদের রাখা হয়েছিল। ওই পরিকল্পনার পরের ধাপে মোট তিন কোটি ৪৫ লাখ ৬১ হাজার ৮৭৭ জনকে টিকা দেওয়ার কথা। এরপর শিক্ষকদের ভেতর থেকে বাদ পড়া বাকিরা, প্রসূতি নারী, সরকারি অন্যান্য কর্মচারী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর আরো সদস্য, আমদানি-রপ্তানিসংক্রান্ত জনবল, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার অন্যান্য কর্মচারী, অন্যান্য আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মী, আমদানি-রপ্তানিতে জড়িত বাকি কর্মী, বেসরকারি কর্মী, কারাবন্দি ও কারারক্ষী, বস্তিবাসী ও ভাসমান মানুষ, কৃষি ও খাদ্য খাতের কর্মী, আবাসিক কর্মী, গৃহহীন, অন্যান্য কারখানার কর্মী, বাকি থাকা পরিবহন শ্রমিক, এরপর ৫০-৫৪ বছরের জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষ এবং অন্যান্য জরুরি ব্যবস্থাপনায় জড়িতরা। সব শেষ ধাপে তরুণ জনগোষ্ঠী এবং শিশু ও স্কুলগামীরা টিকা পাওয়ার কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা পরিকল্পনায় যুক্ত একাধিক সূত্র জানায়, প্রথমত দেশে টিকা আসার পর নিবন্ধনকারী কম হওয়ায় হঠাৎ করেই বয়সসীমা ৫৫ বছর থেকে একটানে ৪০ বছরে নামিয়ে ফেলা এবং পরে পরিকল্পনামতো টিকা আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সব কিছু ওলটপালট হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৪০ বছরে নামানোর ফলে টিকা গ্রহণকারীর সংখ্যা বেড়ে গেলেও তাতে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ কম।
ঠিক কতসংখ্যক ষাটোর্ধ্ব মানুষ এখন পর্যন্ত টিকা দিয়েছেন তার কোনো গোছানো হিসাব নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে। তারা শুধু চল্লিশোর্ধ্ব ও ফ্রন্টলাইনার হিসাবে টিকার পরিসংখ্যান রাখছে। তবে ওই পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনায় যুক্ত এক সূত্র জানায়, পর্যবেক্ষণ অনুসারে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত যাঁরা টিকা নিয়েছেন তাঁদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশের মতো রয়েছেন বিভিন্ন ক্যাটাগরির অনূর্ধ্ব ৫৫ বছর বয়সীরা। বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে অর্ধেকের মতো রয়েছেন ৫৫-৬০ বছরের এবং বাকিরা হলেন ষাটোর্ধ্ব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, সঠিকভাবে মনিটর করতে না পারায় এবং পরিকল্পনায় অটুট থাকতে না পারায় অগ্রাধিকারভিত্তিক সাজানো ছক ভেঙে শুরু থেকেই ৪০ বছরের বেশি বয়সের সুযোগ নিয়ে অগ্রাধিকারের বাইরের বহু মানুষ টিকা নিয়েছেন। একদিকে নিবন্ধনের জটিলতা, অন্যদিকে নানা অপপ্রচার এবং অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের সঙ্গে হুড়াহুড়িতে টিকতে না পেরে ষাটোর্ধ্ব মানুষ পিছিয়ে পড়েছেন।
সর্বশেষ হিসাব অনুসারে, এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার মাত্র আড়াই শতাংশ মানুষ টিকা পেয়েছেন। অন্যদিকে এখন পর্যন্ত টিকার জন্য উপযুক্ত মোট তিন কোটি ৯৫ লাখ মানুষের (৪০+ ও ফ্রন্টলাইনার) মধ্যে মাত্র ১৮ শতাংশ বা সাড়ে ৭২ লাখ মানুষ টিকার নিবন্ধন করেছেন। এই নিবন্ধনকারীদের মধ্যে ৮০ শতাংশ প্রথম ডোজ ও ৭৩ শতাংশ দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন।