প্রতিবছর কোরবানির আগে দা-ছুরি নিয়ে কামারবাড়ির দিকে ছুট পড়লেও, এবার মহামারী করোনার ঘা পড়েছে কামারের হাপরেও। সামাজিক দূরত্ব মানার বিধিনিষেধের কারনে এবার আগের কোরবানি মৌসুমের মতো কামারের ব্যস্ততাও নেই। ফলে অন্যবারের মতো তাদের মৌসুমি আয়েও টান পড়েছে। সারাবছর দা-বটি তৈরি করলেও কোরবানির আগে টুং টাং শব্দে কামারদের ব্যস্ততা থাকে চরমে। কামারশালার সামনে দেখা যায় দীর্ঘ জমায়েত। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। ঈদের আর বেশি দিন বাকি না থাকলেও খদ্দেরের তেমন ভিড় নেই বললেই চলে। এমনকি অধিকাংশ কামারশালা থেকে কোরবানির জন্য তৈরি করে রাখা দা-ছুরিও তেমন একটা বিক্রি হয়নি। এই ঈদে মুসলমানরা হাজার হাজার গবাদিপশু কোরবানি দেন। কিন্তু প্রতিবারের মতো টাঙ্গাইলে কামারখন্দের কামারপাড়া সরব হয়ে ওঠেনি। করোনা ও লকডাউনের কারণে এবার দা, চাপাতি ও ছুরির চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে এগুলো তৈরির ফরমাশও তেমন আসছে না। ক্রেতার দেখা নাই। হতাশ হয়ে পড়ছেন কামাররা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর ঈদুল আজহার সময় কোরবানির গবাদিপশুর মাংস কাটার জন্য প্রচুর দা, চাপাতি, কুড়াল ও ছুরি প্রয়োজন হয়। এসব তৈরি করতে কামারেরা বছরের এই সময় থাকেন খুব ব্যস্ত। অথচ এবার করোনা ও লকডাউনের কারণে জেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ অনেক কষ্টে আছে। এ কারণে কোরবানির গরু–ছাগলের গোস্ত কাটার জন্য তাঁরা এসব উপকরণ কিনতে কামারপাড়ায় আসছে না। এ জন্য এখনো জমে ওঠেনি কামারপাড়া। কয়েকজন কামারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সময়টাতে গ্রাহকের অর্ডার নিয়ে ঠিক সময়ে ডেলিভারি দিতে দোকানে বাড়তি কর্মচারী নিয়োগ দিতে হতো। আগেভাগেই কাঁচা লোহা কিনে রাখতে হতো। শাণ দেওয়ার যন্ত্রে ব্যবহারের জন্য মজুদ করতে হতো কয়লা। আর এখন গ্রাহকের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। পুরোনোগুলোতেই শাণ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তারা। এসব কামারের অধিকাংশই পূর্বপুরুষদের হাত ধরে এই পেশায় এসেছেন। বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রাংশের দাপটে কামার শিল্পে চলছে দুর্দিন। তারপরও বাপ-দাদার পেশা টিকিয়ে রেখেছেন অনেকে। কামাররা বলছেন, এক সময় তাদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে। চাইনিজ ছুরিসহ নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী সস্তায় মিলছে দোকানে। ফলে তাদের তৈরি সামগ্রীর প্রতি মানুষ আকর্ষণ হারাচ্ছে।