করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৩ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে; যা আগামী ৫ আগস্ট দিনগত রাত ১২টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধে সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ থাকবে। তবে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের দাবি, এতে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক খাত বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়লেও তারা করোনা মোকাবিলায় সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। গার্মেন্টস মালিকরা বলছেন, তারা আগামী ৫ আগস্টের আগে কারখানা খুলতে চান না। এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই সময় কারখানা বন্ধ থাকলে গার্মেন্ট খাত ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে, এটা সত্য। কিন্তু করোনা মোকাবিলায় সরকারের সিদ্ধান্ত আমরা মানতে চাই। তারা বলেন, গার্মেন্টস খাত লকডাউনের আওতামুক্ত রাখার ব্যাপারে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠিও দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্ত হলো, আগামী ৫ আগস্টের আগে কারখানা খোলা যাবে না। আমরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে চাই না।
এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, গার্মেন্টস খাতের ক্ষতির চেয়ে মানুষের জীবন আগে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত সব গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ থাকবে। আমরাও ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখবো। রফতানিমুখী গার্মেন্ট কারখানাগুলো ১ আগস্ট থেকে খুলে দেওয়ার একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হলেও করোনা যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমরা এখন আর সেই পরিস্থিতিতে কেউ নেই। তিনি উল্লেখ করেন, সরকার যখন কারখানা খুলতে বলবে, আমরা তখন কারখানা খুলে দেবো।
এদিকে মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) করোনা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ বহাল থাকবে। এ সময় শিল্পকারখানা বন্ধ রয়েছে। বিধিনিষেধ চলাকালে শিল্প-কারখানা খুলবে না। শিল্প-কারখানা খোলা সংক্রান্ত ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ৫ আগস্টের আগে শিল্প-কারখানা খোলা যায় কিনা সে বিষয়ে শিল্পপতিসহ অনেকেই সরকারকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু এই অনুরোধ সম্ভবত রাখতে পারছি না। এর আগে সোমবার (২৬ জুলাই) মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে দেশে তৈরি পোশাক কারখানা খুলে দেওয়ার বিষয়ে কোনও চিন্তাভাবনা এখন পর্যন্ত সরকারের নেই। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে শিল্প-কারখানা খোলার প্রমাণ পেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে গত ১৩ জুলাই দুপুরে বিধিনিষেধ সংক্রান্ত জারি করা প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, বিধিনিষেধে সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে। যদিও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই পোশাক (গার্মেন্টস) কারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা সরকারের বিভিন্ন মহলে দাবি জানিয়ে আসছিলেন। গার্মেন্ট কারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও চিঠি দেন।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, পোশাক শিল্পের শ্রমিকেরা নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে কাজ করেন। দিনের অধিকাংশ সময় (মধ্যাহ্ন বিরতিসহ ১১ ঘণ্টা) কর্মক্ষেত্রে সুশৃঙ্খল ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে থাকেন তারা। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ঈদের ছুটিসহ ১৮-২০ দিন কারখানা বন্ধ থাকলে গ্রীষ্ম, বড়দিন ও শীতের ক্রয়াদেশ হাতছাড়া হয়ে যাবে। পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ নেতাদের প্রত্যাশা ছিল, করোনা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলে ১ আগস্ট থেকে কারখানা খোলার সুযোগ দেবে সরকার। এমন বার্তা নিজেদের সংগঠনের মধ্যেও ছড়িয়ে দিয়েছেন তারা। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ৫ আগস্টের আগে কারখানা খুলবেন না বলে জানিয়েছেন তারা। প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে চলতি বছরের এপ্রিলে সরকার বিধিনিষেধ দিলেও রফতানিমুখী পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার সুযোগ পায়। সর্বশেষ গত ২৮ জুন শুরু হওয়া সীমিত পরিসরের ও পরে ১ জুলাই থেকে চলমান কঠোর বিধিনিষেধেও পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকারখানা চালু থাকে। তবে গত ১৩ জুলাই জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২৩ জুলাই ভোর থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধে সব ধরনের শিল্পকারখানা বন্ধ থাকবে।
উল্লেখ্য, করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরের রফতানি আয়ে আগের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে মোট ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের (৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন) পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ। মোট রফতানি আয়ের ৮১ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।