রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

করোনাকালে শিক্ষক থেকে গাছ বিক্রেতা হযরত আলী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১

করোনাকালে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জীবনে কষ্ট কী জিনিস, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন শত শত মানুষ। বেসরকারি ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্ভরদের কষ্টটা আরও বেশি। তেমনই একজন মানুষ হযরত আলী। করোনা তাকে স্কুলশিক্ষক থেকে গাছ বিক্রেতা বানিয়েছে। হয়রত আলী জানায়, মহামারির কারণে তার নিজের প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি বন্ধ। প্রায় দুই বছর হতে চলেছে। কিন্তু সংসার পেট তো বন্ধ নেই। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়েছে। বাধ্য হয়ে ডাস্টার-মার্কার, বইখাতা ছেড়ে তিনি গড়ে তোলেন নার্সারি। এখন সড়কের পাশে গাছ বিক্রি করছেন। কিন্তু শিক্ষক থেকে গাছ বিক্রেতার পরিচয় একটু হলেও পীড়াদায়ক। রংপুর নগরের সার্কিট হাউস সড়ক ধরে কটকিপাড়া। সেই সড়কের পাশে রয়েছে রিসালাত ছাদবাগান নামের একটি নার্সারি। এটি হয়রত আলীর বদলে যাওয়ার গল্পঘর। প্রতি দিন এই নার্সারিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ কিনতে আসছেন বৃক্ষপ্রেমীরা। দেশি-বিদেশি শত শত গাছের চারায় ভরা রিসালাত ছাগবাগানই এখন হযরত আলীর আয়ের উৎস। শুরুতে আয় তেমন না হলেও এখন মাস শেষে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা পান। তা দিয়েই সংসার চলছে।
তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৫ সালে নগরের রামপুরা এলাকায় ফাতাহ কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেখানে শিক্ষার্থী ছিল প্রায় ২০০। করোনা পরিস্থিতিতে অন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো তার প্রতিষ্ঠানটিতেও তালা ঝুঁলছে। ওই সময়ে তিনি বেকার হয়ে পড়েন। দেখা দেয় আর্থিক সংকট। স্নাতক পড়ুয়া এক মেয়ে, গৃহিণী স্ত্রীসহ তিন সদস্যের পরিবারে বাড়তে থাকে টানাপোড়ন। এ সময় হতাশ হযরত আলী তার স্কুল প্রাঙ্গণে লাগানো গাছগুলো বিক্রি করে দেন। গাছ বিক্রির সামান্য টাকায় কী করবেন? নাকি অন্য কোনো পেশায় জড়াবেন—নানা কিছু ভাবতে ভাবতে নার্সারি গড়া তোলার চিন্তা মাথায় চেপে বসে। বেকার থাকার চেয়ে গাছের চারা রোপণ করে তা বিক্রির বিষয়টি তার মনে ধরে। পরে পরিস্থিতি গড়ে তোলেন নার্সারি। এখন সেই নার্সারি জুড়েই তার ভালো থাকার স্বপ্ন।
হযরত আলী বলেন, ‘কোনোরকমে সংসার চালিয়ে নিচ্ছি। মধ্যবিত্ত জীবনে টিকে থাকতে অনেক কিছুই করতে হয়। নিজে কিছু করার আনন্দটাও উপভোগ্য। কিন্তু যাদের কোনো কিছু করার অর্থ সামর্থ্য নেই, তাদের নিয়ে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। কেউ তো তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন না।’ তিনি জানান, ‘অনেক স্কুলশিক্ষক অনাহারে আছেন। বাসাভাড়া দিতে পারছেন না। সন্তানদের মুখের দিকে তাকাতে পারছেন না। অতিকষ্টে জীবনযাপন করছেন। দেশের কিন্ডারগার্টেনগুলোর প্রায় ৩ লাখ শিক্ষক-শিক্ষিকার অবস্থা একই। অথচ এমপিওভুক্ত স্কুল-কলেজের শিক্ষকেরা বেতন-ভাতা সবই পাচ্ছেন।’
নর্থবেঙ্গল কিন্ডর গার্টেন অ্যান্ড প্রি-ক্যাডেট স্কুল সোসাইটির রংপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বলেন, রংপুরে হযরত আলীর মতো অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছেন। অনেক শিক্ষক অটোবাইক চালাচ্ছেন। কেউ আবার ভ্যানে করে শাক-সবজি, ফলমূল বিক্রি করেছেন। অনেকে দোকানে ও পার্লারে চুক্তিভিত্তিক কাজ নিয়েছেন। সংগঠনটির সভাপতি গোলাম সাজ্জাদ হায়দার জানান, রংপুর জেলায় প্রায় ৭০০ কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সাড়ে আট হাজারের বেশি শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। করোনাকালে তাদের বেশির ভাগ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের সহায়তা বা প্রণোদনা পাননি তারা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com