গত ১৫ দিনে খোলা বাজারে চালের দাম বেড়েছে। ঝিনাইদহ থেকে একটি সূত্র জানায়, গত দুই সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে চালের দাম কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে আট টাকা। অথচ মিলাররা বলছেন এই সময়ে তাদের বিক্রি কমেছে ৭০ শতাংশ। দাম কমেছে মোটা-চিকন ভেদে কেজিতে দুই টাকা। রয়েছে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) আতংক। প্রশ্ন উঠছে, মিলার পর্যায়ে দাম কমা, বিক্রি কম ও এলসি আতংক থাকলেও খুচরায় দাম না কমে বাড়ছে কেন। সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর নেই মিলারদের কাছে। আবার খুচরা বিক্রেতারা বলছেন পাইকারদের কাছ থেকে তাদের কেনা বেশি তাই দামও বেশি।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত ১৫ দিনে খোলা বাজারে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে গড়ে দুই টাকা থেকে আট টাকা। একই সময়ে মিলার পর্যায়ে কমেছে কেজিতে দুই টাকা। তাদের বিক্রিও ৭০ শতাংশ কমেছে বলে দাবি। আবার খুচরা বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারদের কাছ থেকে তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। পাইকাররা দুষছেন মিলারদের। অভিযোগ রয়েছে, মিলাররা বেশি লাভের জন্য সিন্ডিকেট করে। একই সঙ্গে সরকারের চাল আমদানির প্রচেষ্টা ব্যাহত করতে তারা নানান প্রচেষ্টায় চালায়। মিলার-পাইকার পর্যায়ে কেনাবেচা যাই হোক খুচরায় দাম বাড়লে সেটার প্রভাব সরাসরি পড়ে সাধারণ মানুষের উপর। চাল উৎপাদনে দেশে অন্যতম স্থান দখল করে থাকা ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় ১৫টি অটো রাইস মিল এবং পাঁচ শতাধিক হাস্কিং মিল রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ডাকবাংলা ত্রিমোহনী এলাকায় রয়েছে সবচেয়ে বেশি মিল। এসব মিল থেকেই জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টন চাল যায় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। মিলারদের অভিযোগ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বাজারদর নিয়ন্ত্রণে এলসির মাধ্যমে চাল আমদানি করা হবে- এমন আতংকে বিভিন্ন এলাকার বড় বড় মোকাম মালিকরা আসছেন না চাল কিনতে। ফলে বিক্রি কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ।
শহরের পুরাতন হাট খোলা বাজারে চাল কিনতে আসা সোনা মিয়া একটি অন লাইন নিউজ পোর্টালকে বলেন, ছয় সদস্যের পরিবারে দিনে প্রায় দেড় কেজি চাল লাগে। দু’একদিন পরপরই চাল কিনতে হয়। কিন্তু বাজারে এলেই মাথায় হাত। করোনার সময় আমাদের রোজগার না বাড়লেও চালের দাম বাড়ছেই। এভাবে চললে আমরা তো না খেয়ে মরবো। এসব বিবেচনা করে সরকারের কাছে চালের দাম কমানোর বিষয়ে জোরালো দাবি জানান তিনি।
ডাকবাংলা এলাকার অন্যতম ব্যবসায়ী মিল মালিক আক্তার হোসেন ভাণ্ডারী একটি অন লাইন নিউজ পোর্টালকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরেই ব্যবসা অত্যন্ত মন্দা যাচ্ছে। বেচা-বিক্রি অনেক কম। অনেকের ঘরেই বেশি দামে কেনা ধান মজুত আছে। এরপর যদি এলসির চাল দেশে ঢোকে তাহলে আমাদের ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হবে। বিক্রি কম থাকার পরও দাম না কমে বাড়ছে কেন প্রশ্ন করলে তিনি খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন বলে এড়িয়ে যান। জেলা চালকল মিল মালিক সমিতির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, করোনার মধ্যে ব্যবসা এমনিতে মন্দা যাচ্ছে। তার উপর চালের বিক্রি কম। অনেকেই বেশি দামে ধান কিনে রেখেছে। এভাবে যদি চলতে থাকে তাহলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির শেষ থাকবে না। এলসির বিষয়টি সরকারকে বিবেচনার দাবি জানাই। বেশি দামে ধান কিনলে চাল উৎপাদন খরচ স্বাভাবিকভাবেই বেশি হবে। জেলা শহরের মডার্ন মোড় এলাকার চাল বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, পাইকারি বাজারে চাল কিনতে গেলেই কয়েকদিন পরপর কেজিতে কয়েক টাকা করে বেশি দিয়ে কিনতে হয়। কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে মিলাররা বেশি দাম নিচ্ছে। যে কারণে ভোক্তা পর্যায়ে আমাদের বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হয়। দু’এক টাকা লাভ না করলে আমাদেরও তো সংসার চলবে না। অপর চাল বিক্রেতা শাহীন বিশ্বাস বলেন, বর্তমানে দাম বেড়ে মোটা চাল ৫০ টাকা, কাজল লতা ৫২ টাকা, মিনিকেট ৬০ টাকা, বাসমতি চাল ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম বাড়ার হার গড়ে দুই টাকা থেকে আট টাকা।