যশোর সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শফিউল আলমের বিরুদ্ধে সরকারি বরাদ্দ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তিনি পশুর জন্যে ঘাস লাগানোর বরাদ্দের অর্থও খেয়ে ফেলেছেন। যা নিয়ে খোদ প্রাণিসম্পদ বিভাগে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ অন্যান্য দুর্নীতিরও। প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প-এলডিডিপির আওতায় প্রতিটি উপজেলা প্রাণিসম্পদ ক্যাম্পাসে ঘাস লাগানোর জন্যে ১৫ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। প্রতি বছর এই বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০২০-২১ অর্থ বছরে বরাদ্দের পুরোটাই খেয়ে ফেলেছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শফিউল আলম। তিনি অফিস ক্যাম্পাসে কোনো ঘাস লাগাননি। একই কাজ করেন ২০২১-২২ অর্থ বছরেও। এবারও ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করে এলডিডিপি প্রকল্প। প্রকল্প থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বরাদ্দের ১৫ হাজার টাকার মধ্যে জমি চাষ ও প্রস্তুতকরণ বাবদ এক হাজার টাকা, ঘাসের কাটিং বাবদ পাঁচশ’ টাকা, গোবর সার পাঁচশ’, রাসায়নিক সার পাঁচশ’, বেড়া নির্মাণ (পিলার ও কাঁটাতার) নয় হাজার, সরঞ্জামাদি এক হাজার, সাইনবোর্ড পাঁচশ, সেচ ও পরিচর্যা এক হাজার পাঁচশ’ এবং রেজিস্ট্রার ও অন্যান্য বাবদ পাঁচশ’ টাকা খরচ করতে হবে। কিন্তু এসবের কেয়ার করেন না উপজেলা কর্মকর্তা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শফিউল আলম। তিনি এবারের বরাদ্দও আত্মসাৎ করেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করলে তড়িঘড়ি করে অফিসের প্রবেশ মুখে অল্পকিছু ঘাসের কাটিং পুঁতে আত্মসাৎ করা অর্থ জায়েজ করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। অথচ অন্যান্য উপজেলা ক্যাম্পাসে লাগানো ঘাস ইতিমধ্যে পশুর খাবার উপযোগী হয়ে গেছে। সূত্র জানিয়েছে, সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পিছনে ব্যাপক পরিমাণ জায়গা থাকার পরও শফিউল আলম ইচ্ছে করে প্রধান ফটকের পাশে ঘাসের কাটিং পুঁতে দায় সেরেছেন। ঘাস লাগানো নিয়ে অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে শফিউল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘গত বছর কোনো বরাদ্দ আসেনি। এ বছর আসার সাথে সাথে ঘাসের কাটিং লাগিয়েছি।’ যদিও শফিউল আলমের এই দাবি নাকচ করে দিয়েছেন অন্তত চারজন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। তারা বলেছেন, পরপর দুই বছর ঘাস লাগানোর বরাদ্দ এসেছে। দুইবারই তাদের ক্যাম্পাসে ঘাস লাগানো হয়েছে এবং সেই ঘাস কেটে পশুকে খাওয়ানো হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, ঘাস লাগানোর পর পিলার ও কাঁটাতার দিয়ে বেড়া দেয়া বাবদ নয় হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে। অথচ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাঁশ ও নেট দিয়ে বেড়া দিয়েছেন। যাতে দুই-তিন হাজার টাকার বেশি খরচ হয়নি। বাকি টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে সূত্রের দাবি। কেবল বেড়া বাবদ বরাদ্দের অর্থ না, অন্যান্য খাত থেকে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে ফোন করা হয় এলডিডিপি প্রকল্প পরিচালক আব্দুর রহিমের কাছে। তিনি লাইন কেটে দেন। এরপর ফোন দেয়া হয় চিফ টেকনিক্যাল কোঅর্ডিনেটর ডক্টর গোলাম রাব্বানীর কাছে। ফোন কেটে দেন তিনিও। সর্বশেষ, উপ প্রকল্প পরিচালক ডাক্তার এসএম নুরুল আমীনকে ফোন করলে তিনি বলেন,‘উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ক্যাম্পাসে ঘাস লাগানো প্রদর্শনী প্লটের জন্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ওই বরাদ্দ তছরুপের ঘটনা ঘটলে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’