প্রথমে মেয়েটির নাম, পরিচয় কিছুই জানা ছিল না বয়স ৬/৭ বছর হতে পারে। প্রায় মাঝে মাঝেই দেখা হয়। দীর্ঘদিন দেখি বিবির পুকুর পাড়, বেলস পার্ক, মুক্তিযোদ্ধা পার্ক বরিশাল শহরের পরিচিত মুখ। দেখতে দেখতেই আলাপ। মেয়েটির কিছু লোক পরিচিত আছেন কিছু ফুল কিনে দেয় সেটা বিক্রি করে চলে। কখনো ফুল বিক্রি বা কুশল বিনিময় করে থাকে জন সাধারণে সাথে। হঠাৎ আজ দেখা এসে বলে “ারযধ ঢ়ষু মরাব সব ধ ংড়সব সড়হবু” রীতিমত আমি অবাক। জানতে চাইলে বলে, বাবা নেই, সমস্যা পরিবারে। তার মা হোটেলে কাজ করে আর বাবা থেকেও নেই খোঁজ খবর নাই, ওর আরো এক বোন আছে অনেক অসুস্থ বোনের চিৎসার জন্য কখনো ফুল কখনো পাপন বিক্রি করে তবে দিন শেষে যে টাকার ফুল ও পাপন বিক্রি করে তা ওর জন্য যথেষ্ট নয়। ২০০ টাকার ফুল ক্রয় করলে অনেক ফুলের পাপড়ি পড়ে যায়। হেঁটে বিক্রি করবে তবে ফুল নিবেন ফুল নিবেন তবে কেহ নেয় না। ও বলে পাপন বেশি মানুষ কিনতে চায় না,তবে অন্য বাচ্চাদের মত না সে, তারপর থেকে কোন আড্ডায় বা পথে দেখা হলে জড়িয়ে ধরে বলে”তুমি কেমন আছো”। ঐ দিনের পর থেকে ওর সাথে দেখা হলে কখনও টাকা চায় নি। ও জানে আমি দেখা হলেই ওকে টাকা দেই। তবে আমি অসুস্থ একটু শুনে ও বলে তুমি ঠিকভাবে বিশ্রাম কর ডাক্তার দেখাও “তোমাদের ত টাকা আছে ভাল চিকিৎসা করতে পারো। আমি তাকে খাবারে খাওয়াতে চাইলাম খাবার নিলো না ও বলে “খাব না কিছু টাকা দিলে বোনের জন্য নিয়ে যেতাম”। বেলস পার্কে শুক্রবার ঘুরতে আসলাম সাথে আমার এক বন্ধু ওকে দুর থেকে দেখেছি। ভাবছি ও এসেই জড়িয়ে ধরবে সেটা হয়ত পাশের মানুষ পছন্দ করবে না। ও আমাকে দেখেই দৌড়াচ্ছিল আমিও ওকে দেখে একটু আরাল হলাম তবে দেখে আমায় চিনতে পারছে আমাকে ধরে বলে-তুমি আমাকে দেখেও অন্য দিকে যেতে চাইলে কেনো, ও বলল-ভাইয়া তোমার সাথে কি আমার টাকার সম্পর্ক? তুমি ত আমার ভাইয়া। দেখো অন্যদের দেখে ত আমি কাছে যাই না। তোমাকে দেখলে আমি তোমার কাছে আসবই। তুমি আর কখনও আমাকে দেখে আরাল হবে না। তোমার কথা বাসায় বলছি একদিন নিয়ে যাব তবে আমাদের বাসা নেই এদিক সেদিক থাকি। আজ আমি তোমাকে চা খাওয়াবো চল। এই কথা শুনে আমি অবাক হলাম আসলেই কিছু মানুষের ভালবাসা গুরুত্ব আসলে আমারা যাদের অবহেলা করি আসলে তাঁরা ও তো মানুষ। পাশের বন্ধুটাও অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে, অনেকেই দাড়িয়ে শুনছিলেন ওর কথা। পুরো সময়টাতে এমন সুন্দর করেই কথা বলছিল। যদি ওদের দায়িত্ব নেয়ার সাধ্য থাকত তবে কাউকেই ফেরাতাম না। এ দায়িত্ব নেয়ার কথা ছিল রাষ্ট্রের। সে সুযোগ ওদের কপালে নেই। এদের মত বাচ্চারা অবহেলিত হতে হতে ক্রাইমে যুক্ত হয়ে যায়, তখন আমরা বিচার করি শাস্তি দেই, আমাদের বাচ্চাদের ওদের সাথে মিশতে দেই না। কেউ কেউ ওদের দিয়ে অবৈধ ব্যবসা করে থাকে। ওদের ভাল মানুষ করে তোলার চেস্টা করি না। যারা সাবলম্বী আছেন তারা যদি নিজ নিজ জায়গা থেকে চেস্টা করে তবে এদেরও দেশের জন্য তৈরি করা যায়। সবার প্রতি আহবান, পাশের এই সুবিধাবঞ্চিত মানুষটাকে এক্টু হলেও ভাল পরামর্শ দিন,একটু সহযোগিতা করুন তবেই কিশোর গ্যাং তৈরি হবে না, না খেয়ে থাকবে না,পকেট মার হবে না। আপনি আমি সবাই নিরাপদে চলতে পারব। জানি না ওর ভবিষ্যৎ কি,এখনো আমরা নিজেকে বৈষম্য বাদে মানুষ ভাবতে পারছি না, ও একটা বাচ্চা ছেলে এভাবে দিন যাপন করছে। আমাদের সমাজে আরেকটু বড় হলে ও বাচবে কি করে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ওর নাম ফাতেমা আক্তার, লাল-সবুজ নামক একটি স্কুলে পড়ে সে। তার মতো অনেক পথশিশু সেখানে পড়ালেখা শেখে। ভবিষ্যতে আরও পড়ালেখা করতে চায় বলে জানায় সে। ওর মতো অসংখ্য শিশু আছে যাদের দিনের শেষে মাথা রাখার জায়গা নেই। তারা জীবন পার করে পার্কে, রাস্তার ধারে, বাস স্টেশনে কিংবা কোনো ঘুঁপচি ঘরে। প্রকৃতি এক নির্দয় খেলা খেলছে তাদের সঙ্গে। এক নিশ্চিত অনিশ্চয়তার ভবিষ্যত তাদের। এ বিশাল ভূখ-ে তাদের বসবাসের জন্য নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। আর বেঁচে থাকার আহারটুকু কখনো রোজগার করতে না পারলে পেটের জ্বালায় ওরা বেছে নেয় ফুল, পানি কিংবা চা বিক্রির কাজ। সমাজের এসব শিশুরা কারো কাছে ‘টোকাই’ আবার কারো কাছে ‘পিচ্চি’ নামে পরিচিত। তবে পথশিশু হিসেবেই বেশি পরিচিত তারা। যদিও তাদের একটি নাম আছে।