সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
কোরবানী ঈদে পশু আমদানির কোনো পরিকল্পনা নেই এপ্রিলের ২৬ দিনে ১৬৮ কোটি ডলার রেমিট্যান্স সত্যি না কি গুজব: ফের বিয়ে করছেন শাকিব খান যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নজিরবিহীন বিক্ষোভ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার সরকারের প্রতিদিনের কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে: ফখরুল গরমে খামারে মরছে মুরগি, কমছে ডিম রোগীর প্রতি চিকিৎসকের অবহেলা বরদাস্ত করা হবে না: স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পার্টি কার চাপে নির্বাচনে এসেছে: ওবায়দুল কাদের বিএনপি গরিবের পাশে দাঁড়ায় আর আ’লীগ সরকারি ত্রাণ চুরি করে : ইশরাক কোনো জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে- শিক্ষামন্ত্রী

আন্তর্জাতিকভাবে দাস বাণিজ্য স্মরণ ও রদ দিবস আজ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২২ আগস্ট, ২০২১

আজ ২৩ আগস্ট আন্তর্জাতিকভাবে দাস বাণিজ্য স্মরণ ও রদ দিবস আজ। ইউনেস্কোর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতি বছর ২৩ আগস্ট আন্তর্জাতিকভাবে দাস বাণিজ্য স্মরণ ও রদ দিবস হিসেবে পালিত হয়। এখন দাস প্রথাকে মানব ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসাবে বলা হয়। তবে এখন দাস প্রথাকে যত অদ্ভুতই মনে হোক না কেন, এক সময় এটিই ছিল স্বাভাবিক। বিত্তশালীদের আভিজাত্যের প্রতীক ছিল দাস। শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর ঘরেও দাস থাকতো। অবশ্য এখন সবাই দাস প্রথাকে অমানবিক মনে করেন। এই দাস প্রথাকে উচ্ছেদ করতে গিয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধ বেঁধে গিয়েছিল। সে যুদ্ধে আব্রাহাম লিংকন জিতেছিলেন এবং দাস প্রথার বিলোপ ঘটাতে পেরেছিলেন।
তবে আধুনিক সমাজে আজ পর্যন্ত সত্যিই কী দাস প্রথার বিলোপ ঘটেছে? সমাজবিদরা বলছেন, দাসপ্রথার রূপান্তর ঘটেছে কিন্তু তা সমাজে আজও বিদ্যমান। এই দাসের বেশির ভাগই ঋণ শোধের জন্য দাসে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী মহাজনদের কাছ থেকে অর্থ ধার নিয়ে পরবর্তী সময়ে অর্থ শোধ দিতে না পারায় দাসে পরিণত হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু আছে যারা কয়েক প্রজন্মের জন্য দাস। তবে পৃথিবীতে বর্তমানে মানুষ পরিবহন মূলত হয়ে থাকে নারী ও শিশুদের যৌন ব্যবসায় খাটানোর জন্য। এটিকে বর্ণনা করা হয় ইতিহাসের সর্ববৃহৎ দাস বাণিজ্য’ হিসেবে। অবৈধ মাদকদ্রব্য পরিবহনে ব্যবহার করার কারণে একই সাথে এটি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অপরাধ ক্ষেত্র।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বললেন, মানুষের সুবিধাবাদী চরিত্রের কারণে দাসপ্রথা সমাজ থেকে নির্মূল হয়নি। হবেই এটা জোর দিয়ে বলাও যাচ্ছে না। যদি সরকার মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে। তাহলে দাসপ্রথা কমে আসার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে দাস রয়েছে। আমরা যাদের কাজের লোক বলি। তারা আমরা ঘুম থেকে ওঠার আগে বিছানা থেকে ওঠে, শুতে যায় আমরা শুতে যাওয়ার পরে। তাদেও কোন কর্ম ঘণ্টা নেই, নেই নির্দিষ্ট বেতন কাঠামো। ছুটি নেই। অনেক বাড়িতে তাদেও ভালোমত খাবার দেয়া হয় না। অনেকে নিজেদের জন্য ভালোটা আর কাজের মানুষদেও জন্য কমদামের চাল বরাদ্দ করেন।সব কিছুই তো প্রকারান্তরে দাসপ্রথার কথাই মনে করিয়ে দেয়। আমরা কথাকথিত শিক্ষিত শ্রেণী এ নিয়ে কোন প্রতিবাদ করি না। কারণ তাহলে আমরা সুবিধাবঞ্চিত হবো। তাই এই প্রথা বজায় থাকছে। তাই বলাই যায় দাস প্রথা সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়নি।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দাসদের মুক্ত করে দিলে যে সওয়াব পাওয়া যায়, সে কথা অনেকবারই বলেছেন। তার বিদায় হজের ভাষণেও দাসদের মুক্ত করে দেয়ার আহ্বান ছিল। তার অতি ঘনিষ্ঠ সাহাবা হজরত বেলাল (রা.) ছিলেন একজন হাবশি ক্রীতদাস। তিনি মধুর কণ্ঠে আজান দিতে পারতেন। সুদূর আবিসিনিয়া থেকে ইসলামের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি মক্কায় এসেছিলেন।
কলোনিয়াল দাসপ্রথা শুরু হয় পর্তুগীজ জলদস্যুদের মাধ্যমে, আফ্রিকা থকে দস্যুরা কালোদের ধরে নিয়ে ইউরোপে বিক্রি করত। পরে ইংরেজ ও অন্যান্য ইউরোপীয়রাও এই ব্যবসায় জড়িত হয়। এমন হত যে, হাজার খানেক ক্রীতদাস নিয়ে নৌজাহাজ রওনা দিয়ে ৫০০-এর কম দাস আমেরিকা গিয়ে পৌছাত। জাহাজে ক্রীতদীসদের কাত হয়ে শুতে হত, চিত হয়ে শোয়ার জায়গা ছিল না. নিউ ওয়ার্ল্ড বা আমেরিকা গড়ে ওঠে কালোদের মর্মান্তিক শ্রমে. তারা তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে। দাস ছিল মুনিবের সম্পত্তি, বিনা পারিশ্রমিকে সে দাসকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারতো। সে সময় অনেকেই ঋণের দায় থেকে বাঁচতে দাসত্বকে বরণ করে নিতে বাধ্য হত। দাসের সন্তানও দাস বলে গণ্য হত। যুদ্ধে পরাজিত হয়েও অনেকসময় দাসত্ব বরণ করতে হত। অমানবিকভাবে সারা জীবনখেটে মরতে হত তাদের। এ চক্র থেকে বের হওয়ার কোন সুযোগ ছিল না, যদি না তাদের মুনিব তাদের মুক্তি দেয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী শাসিত বাংলাসহ সারা বিশ্বেই দাস কেনা বেচার জন্য বাজার গড়ে উঠেছিল। এ বাজারে আফ্রিকার নিগ্রোদের চাহিদাই বেশি ছিল। তাদেও জোর করে ধরে আনা হত। আর বিক্রি করা হত ইউরোপের বাজারে।
দাসত্ব বলতে বোঝায় কোনো মানুষকে জোর করে শ্রম দিতে বাধ্য করা এবং এক্ষেত্রে কোনো মানুষকে অন্য মানুষের অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা। কাউকে তার ইচ্ছার পরিবর্তে দাস করা যেতে পারে। এটি হতে পারে তার আটক, জন্ম, ক্রয় করা সময় থেকে। দাসদের অনুমতি ব্যতিরেকে স্থান বা মালিককে ত্যাগ করা, কাজ না করার, বা শ্রমের মজুরী পাবার অধিকার নেই। কিছু সমাজে নিজের দাসকে হত্যা করা আইনসঙ্গত ছিল। দাসত্ববিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যান্টি স্ল্যাভারি ইন্টারন্যাশনাল দাসত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে একে ‘জোরপূর্বক শ্রম দেওয়া’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে এখনো ২ কোটি ৭০ লক্ষ দাস রয়েছে। এই সংখ্যা ইতিহাসের যে-কোনো সময়কার দাসের সংখ্যার তুলনায় বেশি। এমন কী প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাসে আফ্রিকা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনা আফ্রিকান দাসের মোট সংখ্যাও এর প্রায় অর্ধেক। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসাব অনুযায়ী এখনো বিশ্বের ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ জোরপূর্বক শ্রম, দাসত্ব, ও দাসত্ব সংশ্লিষ্ট প্রথার কাছে বন্দী। প্রাচীনকালে এবং মধ্যযুগে সমাজে মানুষ কেনাবেচার একটি প্রথা ছিল । যা দ্বারা বিভিন্ন মুল্যের বিনিময়ে মানুষ কেনা যেত । এই প্রচলিত প্রথাটিকেই দাস প্রথা বলা হয়ে থাকে। দাস অথবা দাসী বর্তমান বাজারের পণ্যের মতই বিক্রি হত। বর্তমানে যেমন পণ্য বেচাকেনার বাজার আছে অতীতেও দাসদাসী বিক্রি অথবা কেনার আলাদা বাজার ছিল । সভ্যতা বিকাশের ধারায় মানবসমাজে উদ্ভব ঘটে দাসপ্রথার। কালের টানে একসময় বিলোপও হয়ে যায়। কিন্তু সভ্যতার গায়ে ক্ষতচিহ্নের মতো রয়ে গেছে এই অমানবিক প্রথার দাগ। দাসপ্রথা বিলুপ্ত হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট বৈশ্বিক তারিখ নেই। একেক দেশে একেক দিন দাসপ্রথাকে বিলোপ করা হয়। প্রাচীন দক্ষিণ এশীয় প-িত কৌটিল্য দাসপ্রথা তুলে দিতে তার সম্রাটকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। সম্ভবত এটাই দাসপ্রথা বিলোপের প্রথম উদ্যোগ। আর সর্বশেষ দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয় ১৯৬৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী ২ ডিসেম্বরকে পালন করা হয় ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর দ্য এবলিউশন অব স্লেভারি’ হিসাবে। এদিন মূলত স্মরণ করা হয় সভ্যতা বিকাশে দাসদের অবদানের কথা, স্মরণ করা হয় গ্লানিময় এক প্রথার কথা।
দাস প্রথার উৎপত্তিকাল: দাসত্বের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা প্রথম সমাজ হলো গ্রিক সভ্যতার সমাজব্যবস্থা। গ্রিক সভ্যতার সূচনা যিশুর জন্মের আনুমানিক দুহাজার বছর আগে মাইনোয়ান যুগে। হোমারের দুই মহাকাব্য ইলিয়াড এবং ওডিসির রচনাকাল আনুমানিক ৭৫০-৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। এই দুই মহাকাব্যে দাসত্ব এবং দাসপ্রথার টুকরো কিছু ছবি পাওয়া যায়। কৃষি এবং শিল্প খাতে শ্রমের চাহিদা মেটানো হতো দাসদের দ্বারা। গ্রিকদের শিল্প যখন সমুদ্র পার হয়ে রফতানি শুরু হয় তখন দাসদের প্রয়োজনীয়তাও বৃদ্ধি পায়। দাস বেচাকেনার জন্য ব্যবসা শুরু হয়। এথেন্সের দাস ব্যবসায়ীরা এশিয়া মাইনর, সিরিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে দাস আমদানি করত। ফিনিসীয় দাস ব্যবসায়ীরা নিজেরাই এথেন্সের বাজারে দাস নিয়ে আসত। সিরিয়া, মিসর, আরব প্রভৃতি দেশের সঙ্গেও এথেন্স এবং অন্য গ্রিক রাষ্ট্রের দাস ব্যবসা শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে এথেন্সের অর্থনীতি পুরোপুরিই দাসশ্রমনির্ভর হয়ে পড়ে। প্রাচীন রোম সভ্যতাতেও ছিল দাসপ্রথার প্রচলন। রোমান সাম্রাজ্যের বিজিত প্রদেশগুলো থেকে রোমে দাস সরবরাহ করতে হতো।
দাস বিদ্রোহ ও একজন স্পার্টাকাস: প্রাচীনকালের অধিকাংশ বড়মাপের দাস বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ১৪০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৭০ অব্দের মধ্যে। অর্থাৎ রোমান সাম্রাজ্যের একটি বিশেষ পর্বে। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে ক্রমাগত বিদ্রোহের ঘটনা ঘটতে থাকে। যেমন : খ্রিস্টপূর্ব ১৩৬-১৩২ সময়কালে সিসিলির প্রথম যুদ্ধ, ১৩৩-১২৯ সময়কালে এশিয়াতে অ্যারিস্টোনিকাসের অভ্যুত্থান, ১০৪ থেকে ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত সিসিলির দ্বিতীয় যুদ্ধ এবং খ্রিস্টপূর্ব ৭৩-৭১ সময়কালে বিখ্যাত স্পার্টাকাসের বিদ্রোহ। এসব বিরাট দাসযুদ্ধ উসকে দিয়েছিল অনেক ছোট সংঘর্ষকে। যেমন- ইতালির বিভিন্ন শহর, অ্যাটিকার খনি অঞ্চল এবং ডেলস দ্বীপে ঘটে যাওয়া নানা অভ্যুত্থান। তবে স্পার্টাকাসের পরাজয়ের পর এ মাপের দাস বিত্রোহ আর ঘটেনি।
স্পার্টাকাস, ইতিহাসের অনন্য নায়ক। প্রাচীন রোমের এই দাস বিদ্রোহী সম্পর্কে ফরাসি চিন্তাবিদ ভলতেয়ার বলেছেন ‘তার যুদ্ধ ইতিহাসের সবচেয়ে ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধÍ হয়তো ইতিহাসের একমাত্র ন্যায়সঙ্গত যুদ্ধ।’ ইতিহাসে তার প্রিয় চরিত্র কে? কন্যার এই প্রশ্নের জবাবে মহামতি কার্ল মার্কস উত্তর দিয়েছিলেন ‘স্পার্টাকাস’। স্পার্টাকাস ছিলেন একজন গ্লাডিয়েটর। গ্লাডিয়েটরদের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে পালিয়ে বিদ্রোহ করেছিলেন স্পার্টাকাস। স্পার্টাকাসের দেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্পার্টাকাসকে নিয়ে অসাধারণ একটি উপন্যাস লিখেছেন মার্কিন লেখক হাওয়ার্ড ফার্স্ট। স্পার্টাকাসকে নিয়ে হলিউডে চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। আধুনিককালে দাসপ্রথাবিরোধী বিদ্রোহের তাৎপর্যময় দৃষ্টান্ত হাইতির দাস বিদ্রোহ। হাইতির দাস বিদ্রোহ (১৭৯১-১৮০৩) পৃথিবীব্যাপী দাসপ্রথাবিরোধী আন্দোলনকে শক্তি জুগিয়েছিল। ইতিহাসবিদ সিএলআর জেমস হাইতির দাস বিদ্রোহ সম্পর্কে বলেছেন, ‘ইতিহাসের একমাত্র সফল দাস বিদ্রোহ।’ হাইতির দাস বিদ্রোহ ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লব দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। হাইতির দাস বিদ্রোহ শুরু হয় ১৭৯১ সালের ২২ আগস্ট। ১৮০৪ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম হয় স্বাধীন হাইতির। ফ্রাঙ্কলিন নাইটসের মতে, আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সবচেয়ে নিশ্ছিদ্র বা সর্বাত্মক একটি দৃষ্টান্ত হলো হাইতির বিপ্লব। পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে হাইতির এই বিপ্লব দাসপ্রথাবিরোধী আন্দোলনকে নতুন গতি এনে দেয়। হাইতি বিপ্লবের প্রভাব পড়ে ব্রিটেনেও। ১৮০৮ সালে ব্রিটিশ সরকার তাদের আটলান্টিক জোড়া দাস ব্যবসা বন্ধ কওে দেয়। আর ব্রিটেনে দাস ব্যবস্থার অবসান ঘটে ১৮৩৪ থেকে ১৮৩৮ সালের মধ্যে। ফ্রান্সে দাস প্রথার বিলোপ হয় ১৮৪৮ সালে।
আমেরিকার দক্ষিণাংশের ১১টি রাজ্যের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল দাসশ্রম। ১৮৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দাসের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪ মিলিয়ন। আমেরিকার উত্তরাংশে দাসপ্রথাবিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠে সমাজ সংস্কারক উইলিয়াম গ্যারিসন, ‘আংকল টমস কেবিন’ এর লেখক হ্যারিয়েট বিচার স্টো প্রমুখের নেতৃত্বে। ১৮৬০ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হন আব্রাহাম লিংকন। লিংকন আমেরিকার পশ্চিমাংশে দাসপ্রথা প্রসারের বিরোধিতা করেন। ১৮৬১ সালের ১২ এপ্রিল শুরু হয় আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ। ১৮৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট লিংকন ‘দাসপ্রথাবিরোধী ঘোষণা’ জারির মাধ্যমে আমেরিকার দক্ষিণাংশের কনফেডারেট রাজ্যগুলোর দাসদের দাসত্ব মোচন করেন। ১৮৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর মাধ্যমে দেশ থেকে দাসপ্রথা বিলোপ করা হয়।
পৃথিবীর কয়েকটি দেশে দাসপ্রথা বিলোপের সময়কাল ঃ সুইডেন ১৮৪৬, আর্জেন্টিনা ১৮৫৩, মেক্সিকো ১৮২৯, ডেনমার্ক ১৮৪৮, কিউবা ১৮৮৬, ব্রাজিল ১৮৮৮, মাদাগাস্কার ১৮৯৬, চীন ১৯১০, আফগানিস্তান ১৯২৩, ইরাক ১৯২৪, ইরান ১৯২৮, মিয়ানমার ১৯২৯, সৌদি আরব ১৯৬২, সংযুক্ত আরব আমিরাত ১৯৬৩, নেপাল ১৯২৬।- (তথ্য সূত্র আসিফুর রহমান সাগরের লেখা থেকে, ইত্তেফাক অন লাইনের সৌজন্যে)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com