সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৯ পূর্বাহ্ন

‘ইখলাস’ ইবাদত কবুলের প্রধান শর্ত

হাফেজ মাওলানা মো: রিদওয়ান:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২১

আল্লাহ তায়ালা মানুষ এবং জীনকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। ইবাদত বলতে আমরা অনেকেই মনে করি শুধু নামাজ, রোজা, হজ ও জাকাত এগুলোই ইবাদত। এ ছাড়া আমাদের জীবনের অন্যান্য বিষয় ইবাদত না। আসলে ইসলামের পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকার কারণে ইবাদত শব্দটাকে আমরা খ-িত বা সংক্ষিপ্ত অর্থে ব্যবহার করে থাকি, মূলত মানুষের জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছোট থেকে বড় যত কাজ আছে, সব কিছু আল্লাহর হুকুম নবীর তরিকা অনুযায়ী করাই হলো ইবাদত। এই ইবাদত আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার জন্য অনেক শর্ত আছে। তার মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি শর্ত হলোÑ ‘ইখলাস’। ইখলাছ শব্দের মর্মার্থ হলোÑ একমাত্র আল্লাহ তায়ালার রাজি-খুশির জন্য ইবাদত করা। যেকোনো ইবাদতের ক্ষেত্রে এই ইখলাস আমাদের থাকতে হবে। ইবাদতের মধ্যে ইখলাস না থাকলে সেটা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। ইবাদতের ক্ষেত্রে ইখলাস এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, তার উদাহরণ হলো রূহবিহীন দেহের মতো, রূহ না থাকলে যেমন দেহের কোনো মূল্য থাকে না, ঠিক তেমনি যেই ইবাদতের মধ্যে ইখলাস থাকে না আল্লাহর কাছে সেই ইবাদতের কোনো মূল্য থাকে না। ইখলাসের সাথে ইবাদত করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ
১. ‘তাদেরকে কেবল এই আদেশই করা হয়েছিল যে, তারা দিলকে খালেস করে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে’ (সূরা বায়্যিনাহ, আয়াত-৫)। আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনÑ ২. বলো, আমি একনিষ্ঠভাবে কেবলমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করি’ (সূরা জুমার, আয়াত-১৪)। যিনি সৃষ্টি করেছেন ইবাদত একমাত্র তার জন্যই হতে হবে। ৩. ‘অর্থ আর আমি কেন তাঁর ইবাদত করব না যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন? আর তার কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে’ (সূরা-ইয়াসিন, আয়াত-২২)।
অতএব, ইবাদত করতে হবে একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য, দুনিয়ার কোনো উদ্দেশ্যে ইবাদত করা যাবে না। দুনিয়া বা আখিরাতের আশায় ইবাদত-বন্দেগি করলে তার ফল কী হবে তার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি দুনিয়াতে আমলের বদলা কামনা করবে, তাকে দুনিয়াতেই তা দিয়ে দেবো। আর যে ব্যক্তি পরকালের সওয়াব কামনা করবে, আমি তাকে পরকালে দেবো। আর যারা কৃতজ্ঞ তাদের আমি পুরস্কার দেবো’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-১৪৫)। আলোচ্য আয়াত দ্বারা পরিষ্কার বোঝা যায়, পরকালে সওয়াব এবং প্রতিদান পাওয়ার জন্য বিশুদ্ধ নিয়ত তথা ইখলাস শর্ত। সুতরাং যারা পরকালে প্রতিদান পাওয়ার আশায় ইবাদত-বন্দেগি, দান-সদকা ইত্যাদি করবে, একমাত্র তারাই আখিরাতে সওয়াব ও জান্নাত পাবে। আর যারা দুনিয়ার সুনাম-সুখ্যাতির জন্য ইবাদত-বন্দেগি, দান-সদকা ইত্যাদি করবে তারা দুনিয়াতে শুধু ততটুকু পাবে যতটুকু তার তাকদিরে লেখা আছে, কিন্তু আখিরাতে সে কিছুই পাবে না।
আল কুরআনের বাণীÑ ‘যে ব্যক্তি আখিরাতের ফসল কামনা করে আমি তার জন্য তার ফসলে প্রবৃদ্ধি দান করি। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমি তা থেকে তাকে কিছু মাত্র দিই এবং আখিরাতে তার জন্য কোনো অংশ থাকবে না’ (সূরা শুরা, আয়াত-২০)। এভাবে ইখলাসের প্রতি আদেশ ও উৎসাহিত করে কুরআন ও হাদিসের আরো অনেক বাণী রয়েছে।
ইখলাসের সাথে আমলকারীকে বলে মুখলিস। মুখলিসের জন্য সুসংবাদ, হজরত সাওবান রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা:কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘তোমরা মুখলিসদের সুসংবাদ দাও, কেন না, তারা অন্ধকারে প্রদীপস্বরূপ, তাদের দ্বারা সব ফিতনার অন্ধকার দূর হয়ে যায়’ (বায়হাকি শরিফ, হাদিস নং-৩৪৩)।
ইখলাসের সাথে আমল করার ফজিলত : হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিতÑ রাসূল সা: বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ আমলগুলোকে সুন্দর করে নেয়, তখন তার প্রতিটি আমলের বিনিময়ে ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত সওয়াব লেখা হয়ে থাকে। আর যদি মন্দকাজ করে তাহলে প্রত্যেকটির বিনিময়ে শুধু ততটুকু লিখা হয়ে থাকে যতটুকু সে করে’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৪০)। অতএব, সম্মানিত পাঠক আসুন আমরা দুনিয়ার সামান্য ও সাময়িক কোনো পাওয়ার আশায় ইবাদত না করে, বরং আখিরাতের চিরস্থায়ী শান্তি ও মুক্তির জন্য একমাত্র আল্লাহর রাজি-খুশির উদ্দেশ্যেই ইবাদত করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন, আমীন। লেখক : ইমাম, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল-২ (মহিলা ও শিশু), সেগুনবাগিচা, ঢাকা-১০০০।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com