সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫০ অপরাহ্ন

বিজয়নগরে যাত্রীবাহী নৌকার সাথে বালি বোঝাই ট্রলারের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত নিহত উদ্ধার ২২, আটক ৫

শফিকুর রহমান শাহীন বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) :
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১
যাত্রীবাহী নৌকার সাথে বালি বোঝাই ট্রলারের সংঘর্ষে দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধার তৎপরতা চলছে -ছবি শফিকুর রহমান শাহীন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলায় যাত্রীবাহী নৌকার সাথে বালি বোঝাই ট্রলারের সংঘর্ষে দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানি হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত ২২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী সন্দেহে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এতে বহু হতাহতের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুক্রবার ২৭ আগষ্ট ২০২১ ইং উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের চম্পকনগর বাজার নৌকাঘাট থেকে যাত্রীবাহী নৌকা বিকেল প্রায় সাড়ে ৪ টায় ৬০/৭০ জন যাত্রী নিয়ে আনন্দবাজার ঘাট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়, নৌকাটি উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের তিতাস নদীর লইস্কা বিলে আসলে বিপরীত দিক থেকে বালি বোঝাই ২ টি ট্রলার নৌকাটিতে ধাক্কা দিলে ঘটনা স্থলেই নৌকাটি উল্টে যায়। ডুবে যাওয়া যাত্রীবাহী নৌকার যাত্রীদের আত্মচিৎকারে এলাকার জনসাধারণ তাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসে, দূর্ঘটনার খবর পেয়ে বিজয়নগর ও সদর থানার পুলিশ এবং সদর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন উদ্ধারে এগিয়ে আসে। লাশ উদ্ধার করে সারি বেঁধে রাখে ও আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করে। প্রত্যক্ষদর্শী আলী আক্তার রিজভী ও মো: রাফি বলেন, বিজয়নগরের চম্পকনগর নৌকাঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে যাত্রীবাহী নৌকাটি জেলা শহরের আনন্দবাজার ঘাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়,পথিমধ্যে তিতাস নদীর লইস্কা বিল এলাকায় বিপরীত দিকে থেকে আসা বালি বোঝাই ২ টি ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়, এতে যাত্রীবাহী নৌকাটি ডুবে যায়। সাঁতারকেটে কোনরকমে জীবন রক্ষা করে। কিছুক্ষণের মধ্যে চোখের সামনে ৪ থেকে ৫ জনের লাশ পানির নীচ থেকে ভেসে উঠে। রাফি আরো বলেন, নৌকার ভিতরে ও উপরের অনেক মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছে। জেলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খান ও জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। জলা প্রশাসক হায়াত উদ-দৌলা খান জানান, এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে একটি তদন্ত টিম করা হয়েছে, যারা নিহত হয়েছে তাদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হচ্ছে এবং আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে, দূর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফায়ার সার্ভিসের সহকারি পরিচালক কুমিল্লা আক্তারুজ্জামান ও উপসহকারি পরিচালক ব্রাহ্মণবাড়িয়া মো: তৌফিকুল ইসলাম জানান, উদ্ধার কাজ এখনও অব্যাহত রয়েছে। নিহতদের পরিচয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর শহরের পৈরতলা এলাকার আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম(৫৫) ও ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজল বেগম(৪০), দাতিয়ারা এলাকার মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মিম(১২), উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের সাদেরকপুর গ্রামের মুরাদ হোসেনের ছেলে তানভীর(৮), চিলোকুট গ্রামের আব্দুল্লাহ মিয়ার শিশু কন্যা তাকুয়া(৮), নরসিংসার গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম(৭) ও ভাটপাড়া গ্রামের ঝারু মিয়ার মেয়ে শারমিন(১৮), সদরের উত্তর পৈরতলার হারিছ মিয়ার মেয়ে নাশরা(৩)। উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামের জহিরুল হকের ছেলে আরিফ বিল্লাহ(২০), বেড়াগাঁও গ্রামের মৃত মালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম(৬০), জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম(৪৭) ও তার মেয়ে মুন্নি(১০), আব্দুল হাসিমের স্ত্রী কমলা বেগম(৫২), জজ মিয়ার মেয়ে মুন্নি আক্তার(১০),মালু সিয়ার স্ত্রী রীনা খাতুন(৬০) নূরপুর গ্রামের মৃত রাজ্জাক মিয়ার স্ত্রী মিনারা বেগম(৫০), আদমপুর গ্রামের অখিল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জনী বিশ্বাস (৩০) ও পরিমল বিশ্বাসের মেয়ে তিথিবা বিশ্বাস(২) এবং ময়মনসিংহের খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝর্ণা বেগম(৪৫)। বিজয়নগর থানার ওসি মির্জা মো: হাসান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান এ পর্যন্ত ২২ টি মরদেহ উদ্ধার হয়েছে, বেশিরভাগ নারী ও শিশু, মরদেহ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রাতেই বিনা ময়না তদন্তে স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়, ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল ও ডুবুরিরা উদ্ধার কাজ করছে, পুলিশ বালি বোঝাই ২ টি ট্রলার আটক করেছে, ট্রলারের নাম,ইয়া রাসুলউল উল্লা ও এম ভি রউফ, এ পর্যন্ত ৫ জনকে আটক করা হয়েছে তাহারা হলেন, ১/ খোকন(২২) পিতা- কাশেম মিয়া, ২/ রাসেল, পিতা- করিম মিয়া, ৩/ জমির মিয়া, পিতা- হাজী আলী আফজল ৪/ ইয়া রাসুলউল উল্লা বালি ট্রলারের মালিক সোলেমান মিয়া, উভয়েই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার পনিশ্বর গ্রামের, ৫/ চম্পকনগর নৌকা ঘাট পরিচালক মো: মিষ্টু মিয়া।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com