বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০১:২৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
তীব্র গরমে কালীগঞ্জে বেঁকে গেছে রেললাইন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক মেলান্দহ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী দিদার পাশা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে শ্রীপুর পৌরসভার উদ্যোগে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে কর্মশালা রায়পুরায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা ঘোষণা আলী আহমেদের কমলগঞ্জের মিরতিংগা চা বাগানে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা অব্যাহত পলাশবাড়ীতে প্রচন্ড গরমে ঢোল ভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে তরমুজ বিতরণ জুড়ীতে টিলাবাড়ি ক্রয় করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আনারসের পাতার আঁশ থেকে সিল্ক কাপড় তৈরির শিল্পকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে-সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি রাউজানে পথচারীদের মাঝে যুবলীগের ফলমূল ও ছাতা বিতরণ

ধেয়ে আসছে বন্যা: পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৮ আগস্ট, ২০২১

ধেয়ে আসছে বন্যা। যে কোন সময় দেশের ৯ জেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। এছাড়া কিছু কিছু নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরিয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার নি¤œাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে। এছাড়া আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ, ফুলছড়ি এবং মথুরায় বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে গঙ্গা নদীর পানি সমতলে হ্রাস পাচ্ছে যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতলে স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টায় বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতলে হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। পাশাপাশি আগামী ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি সমতলে স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে। এছাড়া দেশের আটটি নদীর পানি ১২টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
গণমাধ্যম ও আবহাওয়া অফিস সূত্রের খবর, ভারত গঙ্গার উজানে ফারাক্কা বাঁধ, তিস্তার উজানে গজলডোবাসহ সবকটি বাঁধ-ব্যারেজ খুলে দিয়েছে। এতে হু হু করে নামছে উজানের ঢল। ফলে পদ্মা, যমুনা, তিস্তা, গড়াইসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পাড়ের এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এসব নদী এলাকাগুলোর চরাঞ্চল, নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটছে। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি যে খারাপের দিকে যাচ্ছে তা বলাই যায়। করোনার কারণে প্রেক্ষাপট বদলেছে, মানতেই হবে অর্থনৈতিক দিক থেকে বেশ নাজুক বর্তমান পরিস্থিতি। এ কারণে এবারের বন্যা নতুন করে মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে আমাদের শঙ্কা।
জাতির জীবনে ঝড়-ঝঞ্ঝা-বন্যা পরিস্থিতি দেশের জন্য নতুন কিছু না, প্রতিবছরই এটি হয়ে থাকে এবং সরকার-জনগণ সবাই মিলে এই পরিস্থিতি মোকাবিলাও করে থাকে সফলতার সঙ্গে। এবারের বন্যার বিষয়ে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আগে থেকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কার্যকর পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে। জনগণকেও হতে হবে সচেতন। তাহলে প্রতিবছরের মতো এবছরও বন্য মোকাবিলা করা অনেকটাই সহজ হবে।
ভাঙনে সর্বস্ব হারাচ্ছে তিস্তাপারের মানুষ: একদিকে বন্যার প্রভাবে তিস্তার ভাঙন রোধে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় সরকার অন্যদিকে নদীতে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা। এ অবস্থায় তিস্তায় কোনো প্রকল্প না থাকলেও নদীতীরের ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে কিছু এলাকা সাময়িক রক্ষা পেলেও বিস্তীর্ণ তিস্তাপারের মানুষ অব্যাহত ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে। তাই অস্থায়ী নয়, দ্রুত ভাঙন রোধে সরকারের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি স্থানীয়দের।
কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে ৪৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে খরস্রোতা তিস্তা নদী। প্রতি বছর এ নদীর দুই পারে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। ভাঙন ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও পরের বছর তা কোনো কাজে আসছে না। চলতি বর্ষা মৌসুমেও নদীর দুই পাড়জুড়ে ভাঙন দেখা দিলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও জনবসতিপূর্ণ এলাকা বাঁচাতে বালিভর্তি জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি বাড়া-কমার সঙ্গে সঙ্গে রাজারহাট উপজেলার চর গতিয়াসাম, বুড়িরহাট, তৈয়বখাঁ, খেতাবখাঁ, ঠুটা পাইকর এবং উলিপুর উপজেলার গোড়াই পিয়ার, দালালপাড়া, হোকডাঙ্গা, ডাক্তারপাড়া, অর্জুনসহ বেশকিছু এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়ে উঠেছে। এসব এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এদিকে সরেজমিনে রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার তৈয়বখাঁ, বুড়িরহাট ও থেতরাই ইউনিয়নের গোড়াই পিয়ারসহ ভাঙনকবলিত কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ঘনবসতিপূর্ণ কয়েকটি স্থানে জরুরি ভিত্তিতে বালিভর্তি জিও ব্যাগ এবং জিও টিউব ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে কিছু এলাকা অস্থায়ী ভিত্তিতে রক্ষা হলেও নদীর তীব্র স্রোতের কারণে অনেক এলাকায় ভাঙন রোধের চেষ্টা কোনো কাজেই আসছে না।
এদিকে সাময়িক ভাঙন ঠেকানো এলাকার মানুষের মনে কিছুটা স্বস্তি মিললেও তাদের দাবি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধ করা হোক। যেসব এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে, সেখানে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি এ জেলার মানুষের।
রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের তৈয়বখাঁ এলাকার বাসিন্দা ফুলবাবু জানান, আমার বাড়ি তিস্তার একেবারেই কিনারে। ভাঙন শুরু হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালির বস্তা ফেলে তা ঠেকিয়ে রেখেছে। এতে আপাতত ভাঙন থেকে রক্ষা পেলেও এ বালির বস্তা হয়তো আগামী বছর থাকবে না, চলে যাবে নদীতে। তখন আবার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারাতে হবে। আমরা চাই মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুত স্থায়ী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা। একই এলাকার পারবতী জানান, এর আগে কয়েকবার ভাঙনের শিকার হয়ে বর্তমানেও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছি। এ তিস্তার ভাঙনে আমরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। আমার বিয়ের উপযুক্ত একটি মেয়ে রয়েছে, অথচ ভাঙনের কারণে মেয়ের বিয়েও দিতে পারছি না। লোকজন মেয়ে দেখতে এসে নদী ভাঙা দেখে চলে যায়।
উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুন গ্রামের বাসিন্দা ও ইউপি সদস্য জিয়া জানান, তিস্তার ভাঙনের কবলে পড়ে গ্রামটির বেশির ভাগ এলাকা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়ার পর কাজ করতে চেয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
তিস্তার বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তিস্তার উজানে ভারতীয় অংশে ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলার কিছু এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে এ মুহূর্তে তিস্তার কোনো প্রকল্প চলমান নেই। তার পরও আমরা যে এলাকাগুলোয় মেজর স্থাপনা রয়েছে, সে এলাকাগুলোতে আমরা জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ডাম্পিং করে ভাঙন রোধ করছি। দু-একটা জায়গায় বড় ভাঙন রয়েছে, সেখানে কাজ করার জন্য আমরা বরাদ্দ চেয়েছি। বরাদ্দ পেলে সেখানে কাজ করে রক্ষা করতে পারব। তবে আমরা আশা করছি তিস্তা নিয়ে মহাপরিকল্পনা বা মেগা প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন। এটা প্রধানমন্ত্রীর সানুগ্রহে যদি অনুমোদন হয়, তাহলে তিস্তাপারের মানুষের নদীভাঙনের দুঃখ থাকবে না। পাশাপাশি খনন হলে নদীও জীবন ফিরে পাবে।
স্থানীয়রা জানায়, সরকারের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে হাজার হাজার হেক্টর অনাবাদি জমি পরিণত হবে আবাদি জমিতে। তিস্তার দুই পার হয়ে উঠবে অর্থনৈতিক অঞ্চল। দুঃখ ঘুচবে নদীপারের মানুষের।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com