বরিশাল বিভাগে বিপুল সম্ভাবনাময় রসালো ফল মাল্টা’র আবাদ ক্রমশ বাড়ছে। গত কয়েক বছরে বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও পটুয়াখালীর বেশ কিছু এলাকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এ ফলের আবাদ ক্রমশ বাড়ছে। পারিবারিক পর্যায়ের বাইরে এখন বাণিজ্যিক ভাবেও বিভিন্ন স্থানে মাল্টা’র আবাদ হচ্ছে। তবে এ অঞ্চলে ভাল জাত ও মানের মাল্টা’র কলম বা চারা সরবরাহ এখনো সহজলভ্য নয়। অথচ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতোমধ্যে ‘বারি মাল্টা-১’ ও ‘বারি মাল্টা-২’ নামের দুটি উন্নতমানের মাল্টা’র জাত উদ্ভাবন করেছে। এ বিষয়ে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন জানান, সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে অন্তত ৩ হাজার হেক্টরে মালটার আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমেই বাণিজ্যিকভাবে এর বিপননও শুরু হয়েছে। বরিশালের মাল্টা এ এলাকা ছাড়িয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানেও বাজারজাত হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদদের মতে ভাল জাতের ও মানের গাছের চারা এবং কলমের সরবারহ নিশ্চিত করতে পারলে বরিশাল বিভাগে খুব দ্রুত এ ফলের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে টেকসই বাজার গড়ে উঠবে।
তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে বরিশাল সদরের কয়েকটি এলাকা ছাড়াও উজিরপুর ও আগৈলঝাড়া এবং পিরোজপুরের নেছারাবাদ, নাজিরপুর সহ ঝালকাঠির সদর উপজেলার বিপুল সংখ্যক গ্রামে মাল্টা’র আবাদ হয়েছে। তবে এ ফলের ভাল মানের কলম কিছুটা দুস্প্রাপ্য হওয়ায় কোন-কোন এলাকায় এর উৎপাদন মানসম্মত হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে সফল কৃষক গুরুদাস ব্যানার্জী জানান, বরিশালে কৃষি স¤প্রসারন অধিদপ্তরের রহমতপুর হর্টিকালচার নার্সারি ভালজাত ও মানের চারা উত্তোলন ও বিক্রি করলেও প্রচারণার অভাবে তা বেশীরভাগ কৃষকেরই অজানা। চলতি বর্ষা মৌসুম শেষ হবার আগেই ঐ নার্সারিতে মাল্টা’র চারা বিক্রি শেষ হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
ভাল মানের চারা রোপন করলে বছরের মাথায় গাছে ফল আসবে। সঠিক বালাই ও সার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারলে প্রতিটি গাছে বছরে প্রায় দুই শতাধিক মাল্টা ধরবে গাছে।
বরিশালের বাজারে এখন দেশী মাল্টা সর্বনি¤œ ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা কৃষক পর্যায়ে পাইকাররা ৬০-৬৫ টাকা দরে কিনছেন। কৃষিবিদদের মতে সঠিক পরিচর্যা করলে প্রতিটি গাছ থেকে মৌসুমে ৪০ কেজি পর্যন্ত মাল্টা পাওয়া সম্ভব। এতে করে জমি তৈরী, চারা সংগ্রহ এবং সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা সহ পরিচর্যার ব্যয় প্রথম ফলন থেকেই তুলে আনা সম্ভব।
এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. তাওফিকুল আলম বলেন, এ ফলের আবাদ স¤প্রসারণে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি কৃষক পর্যায়ে এর অবাদ প্রযুক্তিসহ উন্নতমানের চারা পৌছে দিতে। আমরা চলতি বর্ষা মৌসুমে বিপুল সংখ্যক ‘বারি-১ মাল্টা’র চারা সরবরাহ করেছি। আগামীতে তা আরো বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। তার মতে মাল্টা’র আবাদে বর্তমানের ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে আগামী ১০ বছরের মধ্যে এ ফল আমদানীর প্রয়োজন হবে না।