শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

কর্মমুখী জীবন ও ইসলাম

ড. মো: আবদুল কাদের:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১

খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। এগুলোর জোগান দিতে মানুষকে বেছে নিতে হয় সম্পদ উপার্জনের নানাবিধ পন্থা। জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষ যেসব পেশা অবলম্বন করে তা হলো- কৃষি, ব্যবসাবাণিজ্য, চাকরি, শিল্প প্রভৃতি। উপার্জনের মাধ্যম ব্যতীত কোনো ব্যক্তির পক্ষেই উপর্যুক্ত মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। মানুষকে মহান আল্লাহ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব করেই ক্ষান্ত হননি; বরং তাদের যাবতীয় মৌলিক অধিকারও সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সে লক্ষ্যে তিনি সব সৃষ্টিকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনিই সেই মহান সত্তা, যিনি পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের (ব্যবহারের জন্য) তৈরি করেছেন’ (সূরা আল বাকারা- ২৯)। তবে এ ক্ষেত্রে তিনি মানুষকে দিয়েছেন পূর্ণ স্বাধীনতা যা তার এখতিয়ারভুক্ত একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। ফলে প্রত্যেকে নিজ নিজ যোগ্যতা, মেধা, শ্রম ও সময়ের যথোপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রয়াস চালায়।
মানবজীবনে অর্থের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি মানুষের জীবন নির্বাহের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে সমাদৃত। ফলে মহান আল্লাহ মানুষের জন্য অর্থনৈতিক বিধানও নির্দেশ করেছেন। মানুষ কিভাবে উপার্জন করবে, কোন পন্থায় তা ব্যয় করবে এবং উপার্জনের ক্ষেত্রে যাবতীয় অর্জনীয় ও বর্জনীয় গুণাবলি সম্পর্কে এর সুস্পষ্ট নির্দেশনা বিদ্যমান। আল্লাহ তায়ালা ফরজ ইবাদত সমাপনান্তে জীবিকা নির্বাহে উপার্জন করার লক্ষ্যে জমিনে ছড়িয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে, আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করবে যাতে তোমরা সফলকাম হও’ (সূরা আল জুমুয়া-১০)।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি রহ: বলেন, ‘যখন নামাজ শেষ হয়ে যাবে, তখন তোমরা ব্যবসায়িক কাজকর্ম ও অন্যান্য পার্থিব প্রয়োজনাদি পূরণে বেরিয়ে পড়ো।’
এখানে উপার্জনের একটি মূলনীতি সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়েছে। আর তা হলো- এমন পন্থা অবলম্বন করতে হবে, যাতে আল্লাহর স্মরণে ব্রত থাকা যায়। অতএব, যেসব পেশায় বা উপার্জনের পন্থায় আল্লাহর স্মরণে বিমুখ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ইসলাম তা অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করেছে। পবিত্র কুরআনে অন্যত্র এ বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়। আর তা হলো- ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যদি কখনো আল্লাহর স্মরণে ব্রত হওয়ার আহ্বান আসে, তাহলে তখন যাবতীয় ব্যবসায়িক কর্ম পরিহার করা সব ঈমানদারের জন্য ওয়াজিব’ (সূরা আল জুমুয়া-৯)।
মানুষ জীবনে যা কিছু ভোগ বা উপভোগ করে, সবই তার রিজিক। হালাল রিজিক ইবাদত কবুলের অন্যতম প্রধান শর্ত। রিজিক হালাল বা পবিত্র এবং বৈধ হওয়ার জন্য দুটি শর্ত রয়েছে। প্রথমত, ব্যবহার্য, ভোগ্য বা উপভোগ্য বস্তু বা বিষয়টি হালাল তথা পবিত্র ও অনুমোদিত হতে হবে। দ্বিতীয়ত, তা প্রাপ্তি বা অর্জনের পথ বা মাধ্যম হালাল বা বৈধ হতে হবে। এ দুইয়ের কোনো একটির ব্যত্যয় ঘটলে ওই রিজিক হালাল বা পবিত্র হবে না।
নবী-রাসূলগণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ, তাঁরা নিষ্পাপ। তবু আল্লাহ তায়ালা জীবনের জন্য তাদেরকে নির্দেশ করেছেন। কুরআনে এসেছে, ‘হে রাসূলগণ! তোমরা হালাল পবিত্র উত্তম রিজিক খাও আর সৎকর্ম করো’ (সূরা আল মুমিনুন-৫১)। শুধু তাই নয়, বিশ্ববাসীর উদ্দেশে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ হ মুমিনগণ! তোমরা হালাল উত্তম রিজিক আহার করো, যা আমি তোমাদের দিয়েছি’ (সূরা আল বাকারা-১৭২)।
জীবিকা অর্জনের নিমিত্তে বিদেশে পাড়ি জমানোরও নির্দেশ রয়েছে এবং এটিকে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার সমপর্যায়ভুক্ত বলে গণ্য করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ জানেন যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে, কেউ আল্লাহর অনুগ্রহের সন্ধানে দেশ ভ্রমণ করবে এবং কেউ কেউ আল্লাহর পথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে’ (সূরা আল মুজাম্মিল-২০)।
আলোচ্য আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির রহ: বলেন, ‘অর্থাৎ যারা ব্যবসাবাণিজ্য ও রিজিক উপার্জনের বিভিন্ন উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের অন্বেষায় পৃথিবীতে ভ্রমণরত।’
তা ছাড়া ব্যক্তি জীবনে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যাপারে বিশ্বনবী মুহাম্মদ সা: এমনভাবে উৎসাহিত করেছেন যে, ভিক্ষাবৃত্তিকে তিনি নিন্দা করেছেন। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমাদের কারো পক্ষে এক বোঝা লাকড়ি সংগ্রহ করে পিঠে বহন করে নেয়া কারো নিকট চাওয়ার চেয়ে উত্তম। কেউ দিতেও পারে, নাও দিতে পারে’ (সহিহ বুখারি-২০৭৪)।
অতএব উপার্জন করার মনোবৃত্তি ব্যতিরেকে যারা ভিক্ষাবৃত্তিতে প্রবৃত্ত হয় তাদের এ ধরনের পেশাকে অবৈধ সাব্যস্ত করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেন, ‘যে ব্যক্তি সবসময় মানুষের কাছে চেয়ে থাকে, সে কিয়ামতের দিন এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার চেহারায় কোনো গোশত থাকবে না’ (সহিহ বুখারি-১৪৭৪)।
ইসলাম মানবতার ধর্ম। দুস্থ মানবতার সেবায় দান করার রীতি ইসলামে চালু আছে। তবে ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে ইসলাম অনুমোদন দেয়নি। বরং একে বারবার নিরুৎসাহিত করেছে, যা নিষেধের পর্যায় পৌঁছে গেছে।
উপার্জনের ক্ষেত্রে ইসলাম নিজ হাতে উপার্জন করাকে সর্বোত্তম উপার্জন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এ মর্মে হাদিসে এসেছে- রাফে ইবনে খাদিজা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূল সা:কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, সর্বোত্তম উপার্জন কোনটি? জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির নিজস্ব শ্রমলব্ধ উপার্জন ও সততার ভিত্তিতে ক্রয়-বিক্রয়।’
নবী-রাসূলদের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাঁরা নিজ হাতে কর্ম সম্পাদনকে বেশি পছন্দ করতেন। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সা:-এর জীবনে প্রাথমিক সময়ে ছাগল চড়ানো ও পরবর্তীতে খাদিজা রাদিয়াল্লাহু আনহার ব্যবসায়িক দায়িত্ব পালনের বর্ণনা পাওয়া যায়, যা নিজ হাতে জীবিকা নির্বাহে উৎকৃষ্ট প্রমাণ বহন করে। লেখক: অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com