আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে বলেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়াউর রহমানের অংশগ্রহণ নিয়ে কথা বলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাজী জাফর আহমেদের ৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ কেন শহীদ জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়া নিয়ে কথা বলছে? কারণ তাদের আর কিছু নেই। রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। সেজন্য আজ তারা এসব ইস্যু নিয়ে আসছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এখন যে অবস্থায় বসবাস করছি এটা হচ্ছে একটা মুখোশ। একটা ছদ্মবেশী বাকশাল। সাংবাদিকরা নিজেরাই লিখেন না। কারণ একটু এদিক সেদিক হলেই জামিন অযোগ্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে মামলা হবে। মূল কথা হলো সরকার আসল ইস্যুটা থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্য দিকে নিতে চায়। আমরা দেখছি আমাদের পত্রপত্রিকাগুলো এখন সেই লাইনে চলে গেছে। যেটা ইস্যু না, ‘পরীমণি’, ‘তমুক মণি’ এসব নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, পরীমণির ইস্যুকে কেন্দ্র করে হলেও হাইকোর্ট অন্তত একবার নি¤œ আদালতকে তলব করে জানতে চেয়েছে নিয়ম ব্যতিরেকে কেন রিমান্ড দিয়েছে। কিন্তু আমাদেরকে যখন অন্যায়ভাবে রিমান্ডে নেয়া হয়, আমাদের নেতাদেরকে যখন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয় তখন সে বিষয়ে তারা কথা বলেন না। কারণ তাদের বলার কোনো স্বাধীনতা নেই।
তিনি বলেন, যে দেশের জন্য আমরা রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করেছি সেই বাংলাদেশকে একটি একনায়কতান্ত্রিক, কতৃত্ববাদী ও ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। আমাদের সকল অধিকারগুলোকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। আজকে কৃষক ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। আবার ৫০ টাকা কেজির নিচে মোটা চালও পাওয়া যাচ্ছে না। এই অত্যাচার কী চলতেই থাকবে? না। এরকম চলতে পারে না। ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। সব সময় আমার কাছে মনে হয়- আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না বলেই আজকে দেশের এই অবস্থা।
তিনি বলেন, ৭০ সালে তারা বলেছিল গণতন্ত্র দিবে, আট আনা কেজি চাল খাওয়াবে। তখন তারা বলেছিল, ‘সোনার বাংলা শ্মশান কেন’। এই পোস্টারও তখন ছাপিয়েছিল। এসব বলে ৭০ সালে পাস করেছিল। পরে ৭১ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হলো তখন তারা সব পালিয়েছে এবং আত্মসমর্পণ করলো। এটা ইতিহাস। এ সময় তিনি আরো বলেন, এখানে আমিসহ জাফরুল্লাহ ভাই যারা বসা আছি সবাই মুক্তিযোদ্ধা। আমরা ভারতে গিয়ে আশ্রয়গ্রহণ করে যুদ্ধ করিনি।
ফখরুল বলেন, আজ মানুষকে বাঁচাতে হলে টিকা দরকার। আপনারা কতটুকু টিকা জোগাড় করেছেন। চার শতাংশও যোগাড় করতে পারেননি। কিন্তু প্রতিদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, এই আসছে পাঁচ লাখ, এই আসছে ১০ লাখ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চার ভাগের বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হয়নি। কারণ তারা দুর্নীতির কারণে ব্যর্থ হয়েছেন। তাদের মাথার মধ্যে সবসময় থাকে কোনটিতে কমিশন বেশি পাবো। তিনি বলেন, প্রথম দিকে যখন চীন-রাশিয়া টিকা নিয়ে এলো তখন তাদেরকে বিদায় করে দেয়া হলো। তারা ভারতের টিকার জন্য অতি উৎসাহী হয়ে উঠলো। তাতে আমাদের আপত্তি নেই। আমাদের আপত্তি হলো তিন কোটি টিকার জন্য অ্যাডভান্স করলো কিন্তু মাত্র টিকা দিল ৭০ লাখ। এটা কেন হলো? কারণ একজন ব্যক্তিকে দুর্নীতিতে সাহায্য করার জন্য এ কাজটি করা হলো।
যে পরিমাণ লোক আক্রান্ত হয় সে তুলনায় টেস্ট খুবই সামান্য মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আপনারা লকডাউন দেন, কিন্তু তা পালন করতে পারেন না কেন? যে লোকটা দিন আনে দিন খায়, রিকশাচালক ও দিনমজুর তাকে তো পয়সা দিতে হবে। তা না হলে সে তো অবশ্যই কাজের জন্য বের হবে। তাদের জন্য অর্থনৈতিক যে প্রণোদনা দেয়া দরকার তা আপনারা দেননি। যেটা দিয়েছেন সেটাও লুটের জন্য দিয়েছেন। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে শিল্পপতিদের দিয়েছেন। সাধারণমানুষের জন্য কোনো কাজ করেননি। যেটুকু পৌঁছানোর কথা ছিল সেটাও আপনার দলের লোকেরা খেয়ে ফেলেছে। আপনারা এসব অপকর্ম থেকে মানুষের দৃষ্টি সরাতে চান।
ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের জন্য যিনি অপসহীন সংগ্রাম করলেন তিনি এখনো গৃহবন্দি হয়ে আছেন। আমরা তাকে মুক্ত করতে পারিনি। এটা নিঃসন্দেহ আমাদের, দেশের ও দেশের মানুষের জন্য ব্যর্থতা। এটা আমরা স্বীকার করছি। কিন্তু আমরা কেন পারছি না? কারণ রাষ্ট্র ক্ষমতায় যে দানব বসে আছে সেই দানব সকল বিরোধী শক্তিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখানে আমাদের প্রয়োজন ইস্পাত কঠিন ঐক্য। জনগণের ও সকল রাজনৈতিক দলের। তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করেছিলাম একদিকে, ঐক্যফ্রন্ট আরেক দিকে ২০ দলীয় জোটকে সাথে নিয়ে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা পরিচর্তন নিয়ে আসার। জাফরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন সেখানকার সবচেয়ে বড় সংগঠক। কিন্তু সকল রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে আগের রাতে ভোট ডাকাতি করায় সেখানে আমরা সফল হতে পারিনি। সফল হতে পারিনি বলে কী আমরা পারবো না? আজ অত্যাচার নিপীড়ন, নির্যাতন চলছে এটা কি চলতেই থাকবে? কখনোই না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, কেউ এসে আমাদের গণতন্ত্র দিয়ে যাবে না। কেউ এসে আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করে দিয়ে যাবে না। আমার সার্বোভৌমত্ব রক্ষা করে দিয়ে যাবে না। আমাদের অধিকার আমাদের আদায় করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, পরিবর্তন নিয়ে আসে তরুণরা। এখানে আমরা যারা বসে আছি সবার বয়স হয়েছে। যারা রাস্তায় ভ্যানগার্ড হয়ে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য জীবন দেয় সেই তরুণদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাহলেই আমরা সফল হতে পারবো। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী ও লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।