জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলা বিল বর্তমানে লাল আর সাদা শাপলার অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে দর্শনার্থীরা। বরিশাল নগরী থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে উজিরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল সাতলা ইউনিয়নের উত্তর সাতলা গ্রাম। স্থানীয়ভাবে এ এলাকাটি শাপলা রাজ্য হিসাবে পরিচিত। গ্রামের নামেই বিলের নাম ‘সাতলা বিল’।
সরোজমিনে দেখা গেছে, লাল-সবুজে বির্স্তীর্ণ এ সাতলা বিলটি দূর থেকেই চোখ পড়ে পর্যটকদের। কাছে গেলে ধীরে ধীরে সবুজের পটভূমিতে লালের অস্তিত্ব আরো গাঢ় হয়ে খো দেয় বাহারি সৌন্দর্য। সূর্যের আভাকেও যেন হার মানিয়েছে। সাতলা বিলের পানিতে লতা পাতা গুল্ম ভরা শত সহ¯্র লাল ও সাদা শাপলা। এ যেন প্রকৃতির বুকে আঁকা এক নকশিকাঁথা।
প্রতি বছর বর্ষার শুরুতেই ফুটতে শুরু করে শাপলা ফুল। প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এখানে শাপলার সিজন। প্রায় ১০ হাজার একর জলা ভূমির মধ্যে জন্ম নেওয়া লাল, নীল ও সাদা রঙের কোটি কোটি শাপলা এক নজর দেখার জন্য সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা বয়সের হাজারো পর্যটকদের ভিড় থাকে। পর্যটকদের আনাগোনায় দিন দিন মুখরিত হয়ে উঠছে ‘শাপলার রাজ্য’ খ্যাত সাতলা বিল এলাকা।
উজিরপুর উপজেলার সাতলা বিলের লাল শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটক আসে বহু দূর-দূরান্ত থেকে। এ বিলে ভ্রমণের জন্য রয়েছে ছোট আকারের নৌকা। সূর্যের উদয়ক্ষণে সূর্যরশ্মি পড়া মাত্রই যেন মন পাগল করা এক সৌন্দর্যের লীলাভূমিতে পরিণত হয় সাতলা বিল।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, শুধু সৌন্দর্যই নয়, সুস্বাদু খাবার হিসেবেও শাপলার বেশ কদর রয়েছে। ওই এলাকার গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল মানুষগুলো বিলের পানিতে জীবন সংগ্রামের আয়ের পথ হিসাবে বেছে নিয়েছেন শাপলা তোলাকে। সকালে সূর্য উঠার সাথে সাথে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে বিলে নেমে পড়ে শাপলা তোলার জন্য এ এলাকার খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ । পানির মধ্য থেকে শাপলাগুলো তুলে এনে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে শত শত পরিবার। প্রায় ২’শ বছর ধরে সাতলার বিলগুলোতে শাপলা জন্ম হচ্ছে। ওই এলাকার প্রায় ৫০ ভাগ অদিবাসী শাপলার চাষ ও বিপণন কাজের সাথে জড়িত রয়েছে।
এক সময় শাপলার তেমন কোনো চাহিদা না থাকায় পানিতে জন্মে পানিতেই মরে পচে যেত। দিনে দিনে শাপলার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় তা বাজারে বিক্রি করতে শুরু করে দিন মজুররা। এখন প্রায় সারা বছর ধরেই শাপলা পাওয়া যায়। বিশেষ করে এ অঞ্চলের মানুষ খাদ্যের তালিকায় শাপলাকে প্রাধান্য দিচ্ছে। সাতলার বুক জুড়ে শাপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে বর্তমানে ভিড় করছে পর্যটকরা।
শাপলা তুলে বিক্রি করা দিন মজুর সাকাওয়াত হোসেন জানান, শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে চলছে তার সংসার। প্রতিদিন ৪’শ থেকে ৫’শ টাকা আয় হয় তার। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিনোদন ও প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের কাছে নানা সামগ্রী বিক্রি করে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।
শাহজাহান পেশায় একজন কৃষক, তিনি বর্তমানে দর্শনার্থীদের নিয়ে বিলে নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তিনি বলেন, উজিরপুর উপজেলার সাতলা ও আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বিস্তীর্র্ণ এলাকা নিয়ে এ শাপলার বিল। বিলের সঠিক আয়তন জানা নেই কারও।
সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা দশর্নার্থী সুমন, রাসেল, আলম ও পাপিয়া জানান, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে তারা এতদূর ছুটে এসেছেন। শাপলা বিলের সৌন্দর্য অবগাহনে তারা পুলকিত ও মুগ্ধ।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, সাতলার শাপলা বিল নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। এরমধ্যে সাতলাকে পর্যটন কেন্দ্র করার বিষয়ে পর্যটন করর্পোরেশনকে লিখিত ভাবে অভিহিত করা হয়েছে। অতিসত্ত্বর সেখানে পানি, বাথরুমের ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, স্থানীয় ভাবে রেস্ট হাউস করার চেষ্টা চলছে। পর্যটকরা যেন ঘুরে ফ্রেশ হতে পারেন এ বিষয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তবে সেখানে সরকারি জমি না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। অচিরেই এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে ও সকলের প্রচেষ্টায় পযর্টন কেন্দ্র গড়ে উঠবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ও বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম বলেন, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি ‘সাতলা বিল’ দিনে দিনে পর্যটন এলাকায় পরিণত হচ্ছে। এ সাতলা বিলকে পরিপূর্ণতায় রূপ দিতে আমাদের নানা মুখী পরিকল্পনা রয়েছে। অচিরেই ‘সাতলা বিল’-এর এ সমস্যগুলো সমাধান করা হবে।