রাজধানীসহ দেশব্যাপী বরগুনার বিষখালী নদীর ইলিশের ব্যাপক চাহিদা। বরিশাল অঞ্চলে বিষখালীর ইলিশ এমনিতেই বিখ্যাত। এ নদীর ইলিশ আকারে বড় ও হৃষ্টপুষ্ট। এ ছাড়া স্বাদে অতুলনীয়। বাজারে এ ইলিশের চাহিদা বেশি, দামও অন্য নদী ও সাগরের ইলিশের তুলনায় একটু বেশি। এ কারণে বিষখালীর ইলিশ বিক্রেতারা ক্রেতাদের আলাদা করে ডেকে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেন।
স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ী ইউনুস মিয়া জানান, অনেক বছর ধরে তিনি বিষখালীর পাড়ে ইলিশের ব্যবসা করেন। প্রতিবছরই এ নদীতে বড় সাইজের ইলিশ ধরা পড়ে। গত বছর ৩ কেজি ৭শ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ ধরা পড়েছিল। এবার এখন পর্যন্ত ৩ কেজির ইলিশের দেখা মিলেছেনা। রাজধানীসহ দেশব্যপী বিষখালীর ইলিশের প্রচুর চাহিদা, যা তারা জোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ক্রেতারা আগেই জানতে চান, বিষখালীর ইলিশ আছে কিনা।
ইলিশ বিক্রেতা নাসির মিয়া জানান, বর্তমানে আধা কেজি থেকে ৯শ গ্রাম সাইজের প্রতিকেজি ইলিশ ৬শ থেকে সাড়ে ৭শ টাকা। এক কেজি সাইজের ইলিশ ১২শ টাকা। এরপর প্রতি ১শ গ্রামে ১শ টাকা করে বাড়ে। ১৩শ গ্রাম ওজন হলে ১৩শ টাকা কেজি, ১৪শ গ্রামের দাম ১৪শ টাকা। তবে দেড় কেজি থেকে দুই কেজি পর্যন্ত ইলিশ ১৫শ টাকা করে কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বিষখালী দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঝালকাঠি ও বরগুনা জেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে। নদীটির দৈর্ঘ্য ১০৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৭৬০ মিটার এবং প্রকৃতি সর্পিলাকার। এটি ঝালকাঠি সদরের গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নে সুগন্ধা নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে রাজাপুর, কাঁঠালিয়া ও বেতাগী উপজেলা অতিক্রম করে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পাথরঘাটা ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে।
ইলিশ গবেষক ও মৎস্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশের ইকো-ফিশ প্রকল্পের দলনেতা আবদুল ওহাব জানান, স্বাদ ও আকারে বিষখালীর ইলিশের সুখ্যাতি আছে। বিষখালীতে স্রোতের তোড় কম থাকায় মিঠাপানি থাকে। এ নদীর গড় গভীরতা ৩০ ফুট। ফলে ইলিশ এখানে দীর্ঘদিন অবস্থান করে ও ঠিকমতো খাবার খেতে পায়। এ কারণে বিষখালীর ইলিশ আকারে হৃষ্টপুষ্ট ও স্বাদ বেশি। ইলিশের দুই ভান্ডার বঙ্গোপসাগর ও পদ্মা-মেঘনার ইলিশ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। বিষখালীর ইলিশ নিয়ে গবেষণা হলে আরেকটি নতুন বৈশিষ্ট্যের ইলিশের ভান্ডারের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে।
বাংলাদেশ ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বিষখালীতে ইলিশের অভয়াশ্রম গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ বিষয়ক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমানের মতে, নদী ভেদে ইলিশের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। স্বাদের পার্থক্যটি হয় পরিবেশ ও খাদ্যের কারণে। মিঠা পানির পরিবেশ এবং খাদ্যের মান ভালো থাকায় বিষখালীর ইলিশ স্বাদে ভিন্ন। এরা প্রজনন মৌসুমে নদীতে আসার পর খাদ্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশগত আনুকূল্য পেলে সেখানেই অবস্থান নেয়। প্রয়োজনীয় খাদ্য পেলে ইলিশ স্বাদ ও আকারে বেড়ে যায়। তিনি জানান, ইলিশ প্রধানত প্রাকৃতিক খাদ্যকণা প্লাঙ্কটন খায়। নদীর ধারে চলতে থাকলে ইলিশের খাদ্য গ্রহণ অনেকটাই কমতে থাকে। ইলিশের মাইগ্রেশন সময় শরীরের জমা চর্বির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় শক্তি নিয়ে থাকে।
তিনি জানান, “আমরা বিষখালীর ইলিশ নিয়ে ভবিষ্যতে আরও গবেষণা চালাব। এ কথা বলা যায় যে, বিষখালী ইলিশের প্রজনন ও বসবাসের জন্য উত্তম। বিষখালীর ইলিশ নিয়ে গবেষণা হলে আরেকটি নতুন বৈশিষ্ট্যের ইলিশ স¤পর্কে জানতে পারবে মানুষ।”