শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

রিমান্ডের অপব্যবহার : ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মূল্যবান মানবজীবন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

পুলিশ বিভাগকে অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে মানবজীবন অত্যন্ত মূল্যবান। কোনো অভিযুক্তকে রিমান্ডে নেওয়ার আগে পুলিশ কর্মকর্তাকে আইনি ও মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রথমে চিন্তা করতে হবে। সমাজ পুলিশ বিভাগের ওপর সর্বোচ্চ আস্থা রাখে। কিন্তু বর্তমান মামলায় মনে হচ্ছে তদন্তকারী কর্মকর্তা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার পাশাপাশি আইন অমান্য করেছেন, যা ফৌজদারি বিচার প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে চলায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে। সম্প্রতি একটি মামলার পর্যবেক্ষণে আদালত এ মন্তব্য করেছেন।
বিশিষ্ট আইন নজীবীরা মনে করেন,বিভিন্ন সময়ে বিরোধী দলের অনেক নেতাকর্মী, এমনকি অনেক আসামির ক্ষেত্রে আইনের তোয়াক্কা না করে রিমান্ডের অপব্যবহার চলছে। আইনজ্ঞরা বলছেন, রিমান্ডের অপব্যবহার রোধে আপিল বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টকে এ বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে। অনেকে আবার সিআরপিসি (ঞযব পড়ফব ড়ভ ঈৎরসরহধষ চৎড়পবফঁৎব) থেকে রিমান্ড তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। রিমান্ডের নামে মানুষের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। ব্রিটিশরা এ আইন করেছিল এ দেশের মানুষকে শায়েস্তা করতে। পাকিস্তানিরাও একই উদ্দেশ্যে আইন করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে সেই আইন কেন থাকবে। তিনি বলেন, ‘সিআরপিসির ১৬৭ ধারায় রিমান্ডের কথা আছে। এটা থাকতে পারে না। আমাদের সব আইনের ওপরে রয়েছে সংবিধান। সংবিধানের ৩৫ অনুচ্ছেদে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে। রিমান্ডের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের রায় হলো, ‘স্বচ্ছ কাঁচের ভেতরে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। বিবাদীপক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতি থাকতে হবে।’
মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ মনে করেন, রিমান্ডের অপব্যবহার রোধে সুপ্রিম কোর্টকে কঠোর হতে হবে। রিমান্ডের অপব্যবহার ঘটতে দেখলে উচ্চ আদালতকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে হস্তক্ষেপ করতে হবে।
মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘রিমান্ডের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের নির্দেশনা মানা তো বাধ্যতামূলক। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, রিমান্ডের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। এ কারণে রিমান্ডের অপব্যবহার অব্যাহত আছে। বিষয়টি তো সবাই বলে আসছেন। হাইকোর্টও বলেছেন। তারপরও থামছে না। আমি মনে করি, রিমান্ডের অপব্যবহার হলে শুধু একটি মামলায় হস্তক্ষেপ করলেন আর ৯০টি মামলায় হস্তক্ষেপ করলেন না, এতে অপব্যবহার কমবে না।’ আপনি পরীমণির ব্যাপারে ব্যবস্থা নিলেন। বাকি ৯০টি মামলায় ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। কিন্তু প্রত্যেকটি নাগরিকেরই মৌলিক অধিকার রয়েছে। রায়ে তো বলা হয়নি এটা শুধু নায়ক-নায়িকার জন্য প্রযোজ্য। এ রায় প্রত্যেক নাগরিকের জন্য। রায় মানতে উচ্চ আদালত কঠোর পদক্ষেপ নিলে রিমান্ডের অপব্যবহার বন্ধ হবে
মনজিল মোরসেদ আরও বলেন, নি¤œ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটরা যারা রিমান্ড দেন তারা তো আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চাকরি করেন। তাদের তো স্বাধীন বলা যাবে না। সরকারের কথা যদি না শোনেন, তাদের নিরাপত্তা কে দেবে বলেন? সুপ্রিম কোর্ট আইনের মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তা দিতে পারত। সে আইন তো হয়নি। তবে একমাত্র ক্ষমতা সুপ্রিম কোর্টের হাতে। সুপ্রিম কোর্ট যদি স্ট্যান্ড নেন, রিমান্ডের অপব্যবহার হতে দেবেন না, তাহলে এর অপব্যবহার বন্ধ হবে।
রিমান্ড : উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় যা আছে:
রিমান্ডে থাকা অবস্থায় আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশি আচরণ সম্পর্কে ২০০৩ সালে সুপ্রিম কোর্ট চারটি দিকনির্দেশনা দেন। সেগুলো হলো- ক. কাঁচের দেয়ালসম্পন্ন একটি কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
খ. জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে অভিযুক্তদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। গ. প্রতিবার রিমান্ডের মেয়াদ তিনদিনের বেশি হবে না। ঘ. কাঁচের দেয়াল নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আসামির আইনজীবী ও আত্মীয়স্বজনদের সামনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে।
১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড ট্রাস্টসহ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা রিমান্ড প্রশ্নে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করে। এটি করা হয় সন্দেহজনক গ্রেফতার সংক্রান্ত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা এবং রিমান্ড সংক্রান্ত ১৬৭ ধারার অপব্যবহার চ্যালেঞ্জ করে। ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ওই দুই ইস্যুতে প্রচলিত আইন সংশোধনের নির্দেশ দেন। এ নির্দেশনা আপিল বিভাগ স্থগিত করেনি। হাইকোর্টের নির্দেশনায় বলা হয়- ১. আটকাদেশ (ডিটেনশন) দেওয়ার জন্য পুলিশ কাউকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করতে পারবে না। ২. কাউকে গ্রেফতার দেখানোর সময় পুলিশ তার পরিচয়পত্র দেখাতে বাধ্য থাকবে। ৩. গ্রেফতারের কারণ একটি পৃথক নথিতে পুলিশকে লিখতে হবে। ৪. গ্রেফতারদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকলে তার কারণ লিখে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারি সনদ আনবে পুলিশ। ৫. গ্রেফতারের তিন ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের কারণ জানাতে হবে পুলিশকে। ৬. বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোনো স্থান থেকে যদি কাউকে আটক করা হয় তাহলে আটক ব্যক্তির নিকটাত্মীয়কে এক ঘণ্টার মধ্যে টেলিফোন বা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে বিষয়টি জানাতে হবে। ৭. আটক ব্যক্তিকে তার পছন্দসই আইনজীবী ও নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে পরামর্শ করতে দিতে হবে। ৮. জিজ্ঞাসাবাদের (রিমান্ড) প্রয়োজন হলে ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে কারাগারের কাচনির্মিত বিশেষ কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। কক্ষের বাইরে তার আইনজীবী ও নিকটাত্মীয় থাকতে পারবেন। ৯. কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া না গেলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে সর্বোচ্চ তিনদিন পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে উপযুক্ত কারণ থাকতে হবে। ১০. জিজ্ঞাসাবাদের আগে ও পরে ওই ব্যক্তির ডাক্তারি পরীক্ষা করতে হবে। ১১. পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ উঠলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল বোর্ড গঠন করবেন। বোর্ড যদি বলে, ওই ব্যক্তির ওপর নির্যাতন করা হয়েছে তাহলে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যবস্থা নিবেন এবং তাকে দ-বিধির ৩৩০ ধারায় অভিযুক্ত করা হবে। ১২. পুলিশ হেফাজতে বা কারাগারে গ্রেফতার ব্যক্তি মারা গেলে সঙ্গে সঙ্গে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেটকে জানাতে হবে।
১৩. পুলিশ বা কারা হেফাজতে কেউ মারা গেলে ম্যাজিস্ট্রেট সঙ্গে সঙ্গে তা তদন্তের ব্যবস্থা করবেন। মৃত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত করা হবে। ময়নাতদন্তে বা তদন্তে যদি মনে হয়, ওই ব্যক্তি কারা বা পুলিশ হেফাজতে মারা গেছে তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট মৃত ব্যক্তির আত্মীয়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তা তদন্তের নির্দেশ দেবেন। এই ১৩ দফা হলো রিমান্ডের ব্যাপারে হাইকোর্টের স্পষ্ট নির্দেশনা। ২০১৬ সালে মামলাটি আপিল বিভাগে যায়। আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। এরপর সরকার রিভিউর জন্য আবেদন করে। কিন্তু আদালত রায় স্থগিত করেননি। এর অর্থ রায়টি বহাল আছে। উচ্চ আদালতের রায় নি¤œ আদালতের জন্য আইন। তারা মানতে বাধ্য। রিমান্ডের অপব্যবহার রোধে আইনজীবীদের আরও শক্ত ও সোচ্চার হতে হবে। সুপ্রিম কোর্টকেও কঠোর হতে হবে। নি¤œ আদালতের বিচারকদের আপিল বিভাগের নির্দেশনা মেনেই রিমান্ড মঞ্জুর করতে হবে
জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, কোনো ব্যক্তিকে রিমান্ডে নেওয়ার ক্ষেত্রে নি¤œ আদালতের বিচারক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আপিল বিভাগের নির্দেশনা অবশ্যই মানা উচিত। এটা মানা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক। রিমান্ডের অপব্যবহার রোধে আইনজীবীদের আরও শক্ত ও সোচ্চার হতে হবে। সুপ্রিম কোর্টকেও কঠোর হতে হবে। নি¤œ আদালতের বিচারকদের আপিল বিভাগের নির্দেশনা মেনেই রিমান্ড মঞ্জুর করতে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com