জেলায় এ প্রথম বাণিজ্যিকভাবে গ্রীস্মকালীন হাইব্রিড টমেটোর চাষ শুরু হয়েছে। যা ইতোমধ্যে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট কতৃক উদ্ভাবিত বারি হাইব্রিড ৮, ১০ ও ১১ জাত চাষ করে অনেক কৃষকই লাভবান হচ্ছেন। স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কমপিটিটিভনেস প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের বীনামূল্যে বীজ, কলম ও সার প্রদান করা হয়েছে। দেয়া হয়েছে কৃষকদের প্রশিক্ষণ। বর্তমানে ২৫০ জন কৃষক এর সাথে জড়িত। আগামী দিনে গ্রীস্মকালীন টমোটোর চাষ আরো সম্প্রসারণের পরিকল্পনার কথা জানায় কৃষি অফিস।
কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১১ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড টমেটোর চাষ হয়েছে। যা গত মৌসুমে ছিলো মাত্র ১ দশমিক ৫ হেক্টর জমি। এছাড়া নির্ধারিত জমি থেকে হেক্টরপ্রতি ২৫ মেট্রিকটন টমেটো উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। যদিও সর্বোচ্চ হেক্টরপ্রতি ৩৫ মেট্রিকটন টমেটো উৎপাদন সম্ভব। বর্তমানে টমোটোর বাজার মূল্য ভালো থাকায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ সহকারী উদ্বিদ সংরক্ষণ অফিসার মো: হুমায়ুন কবির জানান, গত কিছুদিন যাবত মাঠ থেকে টমেটো তোলা শুরু হয়েছে। বর্তমানে বাজারে টমেটোর কেজি ১০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। সেক্ষেত্রে পাইকারী মূল্য ৯০ টাকা ধরা হলে ১১ হেক্টর জমি থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকার টমেটো বিক্রি করা সম্ভব হবে। মূলত এ সময়ে টমেটো চাষে বর্ষার পানি প্রধান শত্রু। তাই গাছের উপরে অচ্ছাদন দেয়া থাকে।
তিনি জানান, আগামী অক্টোবর মাস পর্যন্ত টমোটো পাওয়া যাবে এসব গাছ থেকে। জেলার মোট টমেটো চাষের মধ্যে সদর উপজেলায় হয়েছে ৩ হেক্টর, দৌলতখানে ১ দশমিক ৫ হেক্টর, লালমোহনে ২ হেক্টর, চরফ্যাসনে ৪ হেক্টর ও মনপুরায় দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।
কৃষকরা জানান, চারা রেপণের সাারণত ৪৫ দিনের মধ্যে গাছে ফলন আসে। জুলাই মাসে তারা চারা রোপণ করেছেন। ইতোমধ্যে একবার ফসল তোলা হয়েছে। মোট তিন থেকে চারবার ফসল তোলা যায়। অনেক কৃষকই এ সময়ে টমোটো চাষের আগ্রাহ দেখাচ্ছে।
জেলার সবচে বেশি টমোটোর আবাদ হয়েছে চরফ্যাসন উপজেলায়। এ উপজেলার আমিনাবাদ ইউনিয়নের হালিমাবাদ গ্রামের কৃষক আক্তার মহাজন জানান, তিনি বারি-৮, ১০ ও ১১ জাতের টমোটো ১৬ শতাংশ জমিতে চাষ করেছেন। কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার ও ছাউনি করার অর্থ পেয়েছেন। বর্তমানে গাছে ভালো ফলন এসেছে। তার এখানে প্রায় ৩ হাজার গাছ রয়েছে। আশা করছেন গড়ে প্রতিগাছে আড়াই থেকে ৩ কেজি টমেটো পাবেন।
একই ইউনিয়নের কুলসুমবাগ গ্রামের কৃষক আব্দুর জব্বার, মো: হাদি ও মো: ফারুক জানান, তারাও গ্রীস্মকালীন টমোটোর চাষ করেছেন। সম্পূর্ণ নতুন জাত হওয়াতে প্রথম দিকে একটু শংকার মধ্যে ছিলেন তারা। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে তারা সফল হবেন। কারণ ফলন ভালো হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তারা টমেটো বিক্রি করবেন। বাজার মূল্যে বেশি থাকায় অধিক লাভের আশা তাদের। এছাড়া কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহায়তা পাচ্ছেন বলেও জানান তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবু মো: এনায়েতউল্লাহ বলেন, জেলায় এ সময়ে টমোটো চাষ প্রথমদিকে আমাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জ ছিলো। কিন্তু বর্তমানে ফলন ভালো হওয়ায় সফলতার দিকে যাচ্ছি আমরা। এ জন্য কৃষকরাই প্রশংসার দাবি রাখে। শীতকালীন সময়ে টমোটোর চাষ অধিক হলেও দাম কম থাকে। তাই গ্রীস্মকালীন হাইব্রিড জাতটা কম হলেও লাভ বেশি।
তিনি বলেন, যদিও বেশ কিছুদিন ধরে এখানে টানা বৃষ্টিপাত হচ্ছে। যা টমোটোর জন্য ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। সে জন্য আচ্ছাদন ভালো করে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। গাছে পানি যাতে না লাগে, সে ব্যাপারে কৃষকদের সতর্ক করা হচ্ছে বার বার। আগামী দিনে আরো ব্যাপক আকারে টমোটোর আবাদ করার কথা জানান তিনি।