সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৯ অপরাহ্ন

সাংগঠনিক ‘সক্রিয়তা’ চায় তৃণমূল আ’লীগ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির কারণে প্রায় দুই বছর সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে পারেনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে দরজায় কড়া নাড়ছে জাতীয় নির্বাচন ও দলটির জাতীয় সম্মেলন। নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন, প্রার্থী বাছাই ও প্রশিক্ষিত এজেন্ট তৈরিসহ নানা কাজ হাতে। আবার জাতীয় সম্মেলনের জন্য দলের জেলা ইউনিটেরও কাউন্সিলর তালিকা লাগবে; যার জন্য ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা শাখায় সম্মেলন করে জেলা ইউনিটের কমিটিও করতে হবে।পাশাপাশি চলমান স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচনেও নজর রাখা লাগছে। সব মিলিয়ে কাজের বড় তালিকা ক্ষমতাসীন দলের হাতে।
এই পরিস্থিতিতে সব কিছু সহজ ও সাবলীলভাবে করতে সক্রিয় সাংগঠনিক কার্যক্রম চায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল। এক্ষেত্রে কেন্দ্রের বড় প্রস্তুতি প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। তৃণমূলের এই আগ্রহকে প্রধান্য দিয়ে কেন্দ্রও এ মাস থেকেই মাঠে নেমে গেছে। কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, অক্টোবরের শুরু থেকে সাংগঠনিক কাজের গতি বাড়বে, সেটি আরও দৃশ্যমান হবে।
দলকে সক্রিয় ও নির্বাচনমুখী করতে প্রকৃতার্থে যারা দলের জন্য নিবেদিত, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে, তৃণমূল নেতাদের মূল্যায়ন করে, হাইব্রিড জামায়াত-বিএনপি মুক্ত থাকে, তাদের হাতে দলের নেতৃত্ব নিরাপদ। আমরা চাই প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের হাতেই দলের নেতৃত্ব আসুক
তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ‘শক্তিশালী, মজবুত, গণমুখি ও জনসমর্থনপুষ্ট সংগঠন বাংলাদেশের কোথাও হয়নি। বৃহত্তর ফরিদপুরের দু’একটি জেলা বাদে নৌকার ঘাঁটি বা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলতে যা বোঝায়, আমরা সেটি করতে পারিনি। আম জনতার জন্য আওয়ামী লীগ করা হয়েছিল, সেটা বৃহত্তর ফরিদপুর ছাড়া কোথাও নেই। কারণ আমাদের এত বেশি প্রশাসন বা আমলাতন্ত্র নির্ভরতা, গণমুখিতার জন্য যে যে উপাত্ত থাকা দরকার সেটা নেই। একটা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যও (মেম্বার) ভোটে হতে চান না। এটা তো গণমুখি রাজনীতির জন্য সহায়ক নয়। কেউ তো ভোটারের কাছেও যান না। আবার যিনি ভোটারের কাছে যান, তাকে প্রশ্ন করা হয়, আমার কাছে কেন এসেছেন? আপনারা নিয়ে নেবেন, অসুবিধে কী? খুবই খারাপ লাগে তখন।’
তারা বলছেন, ‘মানুষের কাছে যাওয়া, মানবিক সম্পর্ক গড়ে তোলা, তাদের মনের মণিকোঠায় স্থান লাভ করাÍএগুলো থেকে আমরা অনেক দূরে চলে গেছি। আমরা কী পরিমাণ হাইব্রিড দিয়ে দেয়াল গড়ে তুলেছি, ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত; থানায় যান, দেখবেন ফৌজাদারি মামলা যা আছে, তার ৯৯ শতাংশ মামলার বাদী আওয়ামী লীগ, বিবাদীও আওয়ামী লীগ। চোখের সামনে বিরোধী দল নেই বলে এটা হয়েছে। আমরা গণসম্পৃক্ততা, গণসংযোগ বাড়াচ্ছি না, সংগঠন করছি না এবং এভাবেই গা ভাসিয়ে দিয়েছি, এটি দুর্ভাগ্যজনক। অথচ বাচ্চা ছেলেও এসে বলে কত ত্যাগ করেছি, কিছুই পাইনি। বয়স দেখলেই বোঝা যায় কী ত্যাগ করেছে সে।’
জেলা পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের মনের দীনতা, জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, ভিশনের সমস্যা, আইকিউয়ের সমস্যাÍএই রোগে আমরা একেবারেই পর্যদুস্ত অবস্থায় আছি। কোনো রাজনৈতিক সচেতনতা নেই, ইতিহাস জানে না, ভূগোলও জানে না। অংকও জানে না। এক লাইন ইংরেজি বললে দুটো ভুল। এই অবস্থার পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব? তবে প্রধানমন্ত্রী তার বিবেচনায় যা করবেন, সেটাই আলহামদুলিল্লাহ বলে গ্রহণ করবো। এছাড়া যাবো কোথায়? যাওয়ার জায়গা তো নেই। আওয়ামী লীগার হিসেবে মরলেও অন্তত জানাজায় কিছু মানুষ বেশি হবে। কর্মী না হই, সমর্থক বা ভোটার হয়ে হলেও থাকবো, তাও এ দল ছাড়বো না। তবে এই বিবেচনা কার কতটুকু আছে?’
তিনি বলেন, ‘এত কিছুর পরও আমরা সুযোগ পেলে পদ বেচবো। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত, জেলা পর্যায়ে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ বিক্রির সুযোগ কারও নেই। নেত্রী ছাড়া এ দুই পদে কেউ কাউকে বসাতে পারে না। তার নিচে যা আছে, আপা যাকেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে দেবেন, পরের পদ কমবেশি বেচাকেনা করবো আমরা।’
আমি হতদরিদ্র মানুষের কাছে আমাদের (আওয়ামী লীগ) বাণী পৌঁছানোর পক্ষে, সংগঠনকে মজবুত করার পক্ষে। যথাসময়ে সংগঠন না গোছানো গেলে আমরা হাইব্রিডদের পকেটে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন এবং বিলীন হয়ে যাবো
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, ‘দলকে সক্রিয় ও নির্বাচনমুখী করতে প্রকৃতার্থে যারা দলের জন্য নিবেদিত, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে, তৃণমূল নেতাদের মূল্যায়ন করে, হাইব্রিড জামায়াত-বিএনপি মুক্ত থাকে, তাদের হাতে দলের নেতৃত্ব নিরাপদ। আমরা চাই প্রকৃত আওয়ামী লীগারদের হাতেই দলের নেতৃত্ব আসুক।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো একটি অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে এ পর্যায়ে এসেছি। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে এই সংগঠনে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। আমরা চাই যে, একেবারেই তৃণমূলের কাছে আওয়ামী লীগটা ফিরে আসুক। আওয়ামী লীগের যারা গ্রামের সাধারণ কর্মী, যারা সমাজপ্রধান, অথবা তৃণমূলে ওয়ার্ড পর্যায়ে যারা নেতৃত্বে আছেন, তাদের সম্মান, মর্যাদাটুকু বাড়ুক।’
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাবেক এমপি খোন্দকার আজিজুল হক আরজু বলেন, ‘আমি হতদরিদ্র মানুষের কাছে আমাদের (আওয়ামী লীগ) বাণী পৌঁছানোর পক্ষে, সংগঠনকে মজবুত করার পক্ষে। যথাসময়ে সংগঠন না গোছানো গেলে আমরা হাইব্রিডদের পকেটে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন এবং বিলীন হয়ে যাবো। প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন,‘আমি ২০২৩ এর নভেম্বরে নির্বাচন করবো, সেটি ক্রেডিবল হতে হবে।’ উনার ওই কথার আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণ করে, সেটি মাথায় নিয়ে সংগঠনের জন্য যারা অপরিহার্য তাদের বাছাই করা উচিত।’
আরজু বলেন, ‘এমন লোক যদি হন, যিনি দল ও সরকারে অপরিহার্য, তিনি দলের পদ পাবেন, এমপি-মন্ত্রীও হবেন, কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু এমন লোক যদি হন খালি ডিও (চাহিদাপত্র) লিখে খাবেন, তাহলে তাকে এমপিই করে দেন। দলের নেতৃত্বটা অন্ততপক্ষে যার সত্যিকারের সাংগঠনিক জ্ঞানগরিমা আছে, যে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, সংগঠনের প্রতি যার দরদ আছে এবং যে আদর্শে বলিয়ান, তাকে দেন।’
আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে দল গোছানো অতীব জরুরি। বিশেষ করে তৃণমূল সংগঠন শক্তিশালী করা দরকার। সেজন্য সব জায়গায় গতিশীল নেতৃত্ব প্রয়োজন। এজন্য সব জেলা ও উপজেলা ইউনিটে কমিটি করা জরুরি। আর নেতা নির্বাচনে যেন মাঠের কর্মীদের গুরুত্ব দেওয়া হয়। অবশ্য নেত্রী যাকে দেবেন, আমরা তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো
রাজবাড়ি জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়, সাবেক ছাত্রনেতা শেখ সোহেল রানা টিপু বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে দল গোছানো অতীব জরুরি। বিশেষ করে তৃণমূল সংগঠন শক্তিশালী করা দরকার। সেজন্য সব জায়গায় গতিশীল নেতৃত্ব প্রয়োজন। এজন্য সব জেলা ও উপজেলা ইউনিটে কমিটি করা জরুরি। আর নেতা নির্বাচনে যেন মাঠের কর্মীদের গুরুত্ব দেওয়া হয়। অবশ্য নেত্রী যাকে দেবেন, আমরা তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই প্রকৃতপক্ষে যারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, সাংগঠনিক দক্ষতা, মানুষের সঙ্গে মেশার যোগ্যতা, দেশপ্রেম ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ যাদের মধ্যে আছে, তারা নেতৃত্বে আসুন। ছাত্রলীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ সহযোগী সংগঠন করে এসেছেন, পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ও সংগঠন করে রাজনৈতিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ; এমন লোকেরা যেন নেতৃত্বে আসতে পারেন।’
তৃণমূলের এই চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কাজ করছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। তারা বলছেন, দলকে গতিশীল ও নির্বাচনমুখী করতে গত কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সভানেত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। অক্টোবর থেকে এটি আরও গতিশীল হবে। আমাদের সাংগঠনিক ইউনিটগুলো সব সময় সক্রিয় আছে। করোনায় তারা মানুষের পাশে ছিল। তবে সাংগঠনিক কার্যক্রম বা কমিটি হয়তো সেভাবে করা যায়নি। শিগগিরই মেয়াদোত্তীর্ণ শাখার কমিটি গঠনের মাধ্যমে সংগঠন ঢেলে সাজানো হবে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে দ্রুত সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হবে
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘করোনার কারণে কেন্দ্রে আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম যথারীতি চালাতে পারিনি। এখন করোনা কমে আসছে, আমাদের কর্যক্রমও শুরু হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় সম্মেলন হবে, ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের এ কাজগুলো (সম্মেলন ও সংগঠন গতিশীল করা) শেষ করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে সব জায়গায় সম্মেলনসহ নানা কার্যক্রম হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটি এ ব্যাপারে খুব তৎপর। কেন্দ্রীয় নেতা যারা আছেন, যাদের যেখানে দায়িত্ব, তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন।’
দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, ‘আমাদের সাংগঠনিক ইউনিটগুলো সব সময় সক্রিয় আছে। করোনায় তারা মানুষের পাশে ছিল। তবে সাংগঠনিক কার্যক্রম বা কমিটি হয়তো সেভাবে করা যায়নি। শিগগিরই মেয়াদোত্তীর্ণ শাখার কমিটি গঠনের মাধ্যমে সংগঠন ঢেলে সাজানো হবে। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে দ্রুত সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হবে।’ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি সদা প্রস্তুত রাজনৈতিক দল। সময়ের প্রয়োজনে যখন যে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, আওয়ামী লীগ তখনই তা করে আসছে। দীর্ঘ পুরাতন একটি রাজনৈতিক দল সব সময়ই তারুণ্যের মত সজীব ও প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা। সব সময়ই চলমান প্রজন্মকে ধারণ করে আওয়ামী লীগ অভীষ্ঠ লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার ধকল সামলে তৃণমূল গোছানোর কাজ শুরু হয়েছে। এর গতি আরও বাড়তে পারে অক্টোবর থেকে।’-জাগোনিউজ২৪.কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com