আমরা নানাবিধ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে নির্যাতন ভোগ করতে থাকি। প্রাকৃতিক, মানব রচিত, দুর্ঘটনাজনিত, ভুলভ্রান্তির কুফল, রোগাক্রান্ত হওয়া তারতম্য ভেদে, ব্যবসায়িক ক্ষতি, সম্পদ হারানো ইত্যাদি। বর্তমান কোভিড-১৯ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিন্তু অভূতপূর্ব এবং এর পরিসমাপ্তি একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই জানেন।
বিপর্যয় যে ধরনেরই হোক না কেন, তা নিঃসন্দেহে আমাদের অর্জন। আল্লাহর বাণী, অর্থ : আর যখন আমি মানুষকে রহমতের স্বাদ আস্বাদন করাই, তারা তাতে আনন্দিত হয় এবং তাদের কৃতকর্মের ফলে যদি তাদের কোনো দুদর্শা পায়, তবে তারা হতাশ হয়ে পড়ে (সূরা রুম, আয়াত ৩৬)।
আল্লাহর দয়া পেলে আমরা আনন্দিত হই। সন্তান, সম্পদ, সম্মান, নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব, পরীক্ষায় ভালো ফল, পদোন্নতি, ক্ষমতা ইত্যাদি প্রাপ্তি। পক্ষান্তরে যখন আমাদের হস্তদ্বয়ের অর্জনে কোনো বিপর্যয় বা দুর্দশা আমাদের আক্রমণ করে, তখন আমরা হতাশ, উৎকণ্ঠিত, দিশাহারা, বিনিদ্রা রাত যাপন ইত্যাদির শিকার হয়ে পড়ি। আলোচ্য আয়াতে ‘বিমা কাদ্দামাত আইদিহিম’ বলেছেন আল্লাহ তায়ালা, যার মানে বিপর্যয়ে নিপতিত ব্যক্তিদের কৃতকর্মের ফসল যা আল্লাহর বাণী দ্বারা চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত, অর্থ : স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা (আল্লাহর পথে) ফিরে আসে (সূরা রুম, আয়াত ৪১)।
আয়াতের প্রথমাংশে গভীরভাবে দৃষ্টিপাত করুন, কোভিড-১৯ এর বর্ণনা তথায় আছে কি না। এখানে বলা হয়েছে ‘জলে স্থলে ছড়িয়ে পড়েছে বিপর্যয়’। বিশেষ কোনো স্থানের উল্লেখ নেই। উল্লেখ আছে ‘জলে স্থলে’ তার মানে সারা বিশে^ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। পৃথিবীর তিন ভাগ জল ও এক ভাগ স্থল। এ ভয়াবহ বিপর্যয় আমাদের স্বহস্তের অর্জন যা মানব সমাজের ব্যাপক অকল্যাণ সাধনে তুলনাহীন অবদান রেখেই চলছে। কথা আছেÑ যেমন কর্ম তেমন ফল। সৎকর্ম কল্যাণকর ফল, অসৎ বা নিষিদ্ধ কর্ম অকল্যাণকর ফল উভয়কালে।
আলোচ্য আয়াতে স্পষ্টভাবে আল্লাহ তায়ালা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে, আমরা যেসব বিপদাপদের, বিপর্যয়ের শিকার হই তা আমাদের স্বহস্তের অর্জন বা কর্মফল। অর্থাৎ আমরা পালন করিনি আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা: কর্তৃক নির্দেশিত কাজগুলো এবং বর্জন করিনি নিষিদ্ধ পাপাচার কর্মকা-।
ইসলাম ধর্মের বিধানগুলো যথাযথভাবে পালন নিশ্চিত করে ইহলোকে সুখ-শান্তি ও পারলৌকিক জীবনে জান্নাত লাভ, চিরশান্তির বাসস্থান অর্জন করি। কেন আমরা ভুলে গেছি এ পৃথিবী অস্থায়ী এবং আমাদের পার্থিব জীবন ক্ষণস্থায়ী বলতে গেলে চোখের পলকে যা মহা সমুদ্রের এক ফোঁটা পানির সমানও নয় চিরস্থায়ী জীবনের তুলনায়। কোনো বাবা-মা কি পছন্দ করবে তাদের সন্তান অগ্নিদগ্ধ হোক এবং মাসের পর মাস হাসপাতালের বার্নিং ইউনিটে যন্ত্রণায় চিৎকার বা ছটফট করতে থাকুক। নিশ্চয় না।
যদি এ সত্য আমরা স্বীকার করি, তাহলে কী করে আমরা উদাসীন থাকতে পারি ৬৯ ভাগ অধিক উত্তপ্ত জাহান্নামের অগ্নি শাস্তির অসহনীয় যন্ত্রণা (নরক যন্ত্রণা) থেকে মুক্তি পাওয়ার আল্লাহর প্রদত্ত উপায় বা দেখানো পন্থা হতে?
আল্লাহর বাণী ‘আপনার যে কল্যাণ হয়, তা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে আর আপনার যে অকল্যাণ হয়, সেটা হয় আপনার নিজের কারণে। আর আমি আপনাকে পাঠিয়েছি মানুষের প্রতি আমার পয়গামের বাহক হিসেবে। আর আল্লাহ সব বিষয়ে যথেষ্ট, সব বিষয়ই তাঁর সম্মুখে উপস্থিত’ (সূরা : নিসা,
আয়াত ৭৯)।
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহর স্পষ্ট ঘোষণা আমাদের কল্যাণগুলো নিশ্চিতভাবে আল্লাহর তরফ থেকে তাঁর ৯৯ ভাগ ধারণকৃত দয়ার ফসল। তিনি সন্দেহাতীতভাবে আমাদের কল্যাণকামী, কখনোই অকল্যাণকামী নয়। তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন জনকল্যাণ সাধনের জন্য, কখনো অকল্যাণ সাধনের জন্য নয়। আল্লাহর বাণী, অর্থ : তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে (সূরা : আল ইমরান, আয়াত ১১০)।
অপর দিকে আমাদের অকল্যাণগুলো আমাদেরই কৃতকর্মের ফল। উদাহরণস্বরূপÑ জ্ঞানীগণের বাণীÑ লোভে পাপ পাপে মৃত্যু, অহঙ্কার পতনের মূল, সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ (মাদকাসক্তদের ব্যাপকতা), হারামে আরাম নেই। (ইংরেজি) এক্সেস অব এভরিথিং ইজ ভেরি ব্যাড। যে কোনো বস্তুর আধিক্য বা বাড়াবাড়ি খুবই খারাপ। যেমনÑ সম্পদ, অর্থ, ক্ষমতা, ভোগ-বিলাস, কর্তৃত্ব-নেতৃত্ব ইত্যাদি প্রদর্শনী (ইংরেজি) এজ ইউ সো সো ইউ রিপ।
হে পরম করুণাময় আল্লাহ তায়ালা! দয়া করে আমাদের ক্ষমা করুন আমরা যেন চরম পরম ও প্রকাশ্য শত্রু ইবলিস শয়তান থেকে আত্মরক্ষা করে সিরাতুল মুসতাকিম, সিরাতুল্লামিনা আন আ’মতা আলাইহিগণের পথিক হতে পারি এবং ফলে জান্নাতবাসী হয়ে আপনার আপ্যায়ন লাভ করে মহা সফলতা (ফাওজান আজিমা) অর্জন করতে পারি। আপনি সীমাহীন শক্তিধর, ক্ষমতাশালী, যখন যা ইচ্ছা তৎক্ষণাত ‘কুন’ বলে তাই করতে পারেন। আপনি সীমাহীন দয়ালু, দয়াবান, সীমাহীন ক্ষমাশীল ও ক্ষমাপ্রিয়। দয়া করে আমাদিগকে দয়া করুন, ক্ষমা করুন আমাদের পাপগুলো। আমীন।
লেখক: সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস অব বাংলাদেশ ও ম্যানেজিং পার্টনার, আজিজ হালিম খায়ের চৌধুরী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টস