করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমে গেছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর কখনও, কোনো কারণে প্রত্যাশিত আয়ু এক ধাক্কায় এতোটা কমেনি। সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমে গেছে দুই বছরের বেশি। ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, চিলিসহ ২৯ দেশের তথ্য নিয়ে এ গবেষণা চালানো হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ দেশেই প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমেছে। ২২টি দেশে ২০২০ সালে প্রত্যাশিত গড় আয়ু ২০১৯ সালের তুলনায় কমে গেছে ছয় মাসের বেশি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, এসব দেশে প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমে আসার বিষয়টি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হিসাবের সঙ্গে সম্পর্কিত। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনসহ লেখক ড. রিধি কাশ্যপ বলেন, করোনাভাইরাস বিভিন্ন দেশে কতটা মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে, সে চিত্রই উঠে এসেছে এই গবেষণার ফলে। ২০১৯ সালের শেষে আবির্ভূত হওয়া করোনা ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, বেশিরভাগ দেশের ক্ষেত্রে নারীদের তুলনায় পুরুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু কমেছে অধিক মাত্রায়। যুক্তরাষ্ট্রের পুরুষদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ২০১৯ সালের চেয়ে ২.২ বছর কমে গেছে, যা এ গবেষণার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
করোনায় মৃতদের অধিকাংশই ডায়াবেটিস-উচ্চ রক্তচাপের রোগী: করোনায় মৃতদের মধ্যে অধিকাংশই ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছিলেন। যা ৬৯ শতাংশের বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান থেকে এমনটি জানা যায়। অধিদপ্তরের মতে, দেশে গত এক সপ্তাহে (ইপিডেমিওলজিক্যাল ৩৮তম সপ্তাহ ২০-২৬ সেপ্টেম্বর) করোনায় ১৮৯ জন রোগীর মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে পুরুষ ৯৩ জন এবং নারী ৯৬ জন। মৃত নারীদের মধ্যে চারজন গর্ভবতী।
অপরদিকে এর আগের সপ্তাহে (ইপিডেমিওলজিক্যাল ৩৭তম সপ্তাহ, ১৩-১৯ সেপ্টেম্বর) মৃতের সংখ্যা ছিল ২৯৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি সপ্তাহে মোট মৃত ১৮৯ জনের মধ্যে ১১০ জন করোনার পাশাপাশি অন্যান্য জটিল রোগে ভুগছিলেন। এছাড়া এর আগের সপ্তাহে মারা যাওয়া ২৯৪ জনের মধ্যে ১৫২ জন ছিলেন জটিল রোগে আক্রান্ত। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৩৮তম সপ্তাহে করোনায় মারা যাওয়াদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ডায়াবেটিস রোগী ছিলেন, যা ৬৯ দশমিক ১ শতাংশ। এর মধ্যে আবার উচ্চ রক্তচাপে ভুগছিলেন ৬৯ দশমিক ১ শতাংশ। এছাড়া বক্ষব্যাধি, হৃদরোগ, কিডনি, লিভার এবং নিউরোলজিক্যাল রোগীও ছিলেন। অপরদিকে ৩৭তম সপ্তাহে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৬৪ দশমিক ৫ এবং ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ।