শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

কোন কোন প্রণোদনা প্যাকেজের শর্ত বাস্তবসম্মত নয়

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২ অক্টোবর, ২০২১

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী কোন কোন প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন হার হতাশাব্যঞ্জক। দুইটি প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন ৫ শতাংশের নিচে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কিছু প্যাকেজের অর্থ ছাড়ে এমন সব শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে, যা বাস্তবসম্মত নয়। তাই এসব প্যাকেজ বাস্তবায়নের গতি এতটা ধীর। করোনা মহামারীর ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার মোট ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। সব মিলিয়ে এসব প্যাকেজে অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকার নয়টি প্যাকেজের বাস্তবায়ন হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে। এক বছরের বেশি সময়ে এসব প্যাকেজের সার্বিক বাস্তবায়ন হার প্রায় ৮০ শতাংশ। যদিও ৭ হাজার কোটি টাকার দুটি প্যাকেজের বাস্তবায়ন হার ৫ শতাংশেরও কম। গত জুলাই পর্যন্ত প্যাকেজ বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকসংশ্লিষ্ট নয়টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ অর্থের মধ্যে গত জুলাই পর্যন্ত গ্রাহককে ৮২ হাজার ৩৮২ কোটি ৭০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। সে হিসেবে সাত প্যাকেজের গড় বাস্তবায়ন হার দাঁড়ায় ৭৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। তবে ৭ হাজার কোটি টাকার দুই প্যাকেজ বাস্তবায়ন হার খুবই শ্লথ। দুটি প্যাকেজ থেকে অর্থ বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ৩৪২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ এ দুটি প্যাকেজের গড় বাস্তবায়ন হার ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ।

বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়া প্যাকেজ দুটির অন্যতম ‘প্রাক-জাহাজীকরণ ঋণ পুনঃঅর্থায়ন কর্মসূচি’। রফতানিমুখী শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণসহায়তা দিতে এ প্যাকেজে রাখা হয় ৫ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের ১৩ এপ্রিল থেকে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়। ৩১টি ব্যাংক পুনঃঅর্থায়ন নিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এ বছরের জুলাই পর্যন্ত এ প্যাকেজ থেকে দেয়া হয়েছে ৩১৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর ৪ হাজার ৬৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা পড়ে আছে। অর্থাৎ প্যাকেজটির বাস্তবায়ন হার হচ্ছে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ প্যাকেজ থেকে নেয়া ঋণের মেয়াদ এক বছর। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলো নেবে ৩ শতাংশ সুদে, আর ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে নেবে ৫ শতাংশ সুদ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এ প্যাকেজের অর্থ বিতরণে বাংলাদেশ ব্যাংক যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, তাতে বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই। এর অর্থ ছাড়ে যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে, তা পূরণ করে রফতানিকারকদের অর্থ নেয়া সম্ভব নয়। তাই এ প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রজ্ঞাপন পরিবর্তন করতে হবে।
এছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তা করতে ২ হাজার কোটি টাকার ‘এসএমই খাতের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম’ প্যাকেজ ঘোষণা করে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক এ প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে গত বছরের ২৭ জুলাই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এরপর গত জুলাই পর্যন্ত গ্যারান্টি সুবিধার জন্য ২৭৪টি আবেদন জমা পড়ে। এসব আবেদনের বিপরীতে জুলাই পর্যন্ত এ প্যাকেজ থেকে খরচ হয়েছে মাত্র ২৯ কোটি ৪ লাখ টাকা। পড়ে আছে ১ হাজার ৯৭০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত এক বছরে এ প্যাকেজের বাস্তবায়ন অগ্রগতি মাত্র ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
তবে এ দুটি প্যাকেজ ছাড়া অন্যগুলোর বাস্তবায়ন হার বেশ ভালো। রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীদের গত বছরের এপ্রিল-জুন সময়ের বেতন-মজুরি দিতে ঘোষণা করা হয়েছিল ‘রফতানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্য বিশেষ তহবিল’ প্যাকেজটি। ৫ হাজার কোটি টাকার এ প্যাকেজের সার্ভিস চার্জ ২ শতাংশ। কারখানার মালিকরা এ ঋণ নিয়ে বেতন-মজুরি দিয়েছেন। যদিও জুনের বেতন-মজুরি দেয়ার আগেই অর্থ শেষ হয়ে যায়। পরে দুই দফায় এ তহবিলে প্রথমে ২ হাজার ৫০০ কোটি ও পরে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
প্যাকেজের আওতায় রফতানিমুখী শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা দিতে রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) সুবিধা ৩৫০ কোটি থেকে ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা হয়। ফলে অতিরিক্ত যোগ হয় ১৫০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। পরে অর্থ আরো বাড়িয়ে বাংলাদেশী মুদ্রায় প্যাকেজের আকার করা হয় ২১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। ৫৬টি ব্যাংকের মাধ্যমে এ প্যাকেজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ প্যাকেজ থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত ৭ হাজার ৫২৫ জন গ্রাহককে ২১ হাজার ৯০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এ প্যাকেজের বাস্তবায়ন হার ৯৯ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত বৃহৎ শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্বল্প সুদে চলতি মূলধন হিসেবে ৩৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এ প্যাকেজ থেকে জুলাই পর্যন্ত ৩ হাজার ২৯৩ জন গ্রাহককে ৩২ হাজার ৬০৬ কোটি ২২ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। এ প্যাকেজের বাস্তবায়ন হার ৯৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। একই প্যাকেজের আওতায় অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এবং বাংলাদেশ হাই-টেক পার্কে অবস্থিত ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ শ্রেণীর শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৭ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু এ বরাদ্দ থেকে মাত্র ১২২ কোটি ৩৬ লাখ টাকার ঋণ দেয়া হয়েছে। এসব জায়গায় অবস্থিত ‘এ’ শ্রেণীর প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরি বিদেশী মালিকানাধীন, ‘বি’ শ্রেণীর প্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশী-দেশী যৌথ মালিকানার ও ‘সি’ শ্রেণীর প্রতিষ্ঠানগুলো দেশী মালিকানার।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ২০২০ সালের এপ্রিল-মে মাসের স্থগিতকৃত ঋণের সুদের বিপরীতে সরকার আংশিক সুদ দেয়া বাবদ ২ হাজার কোটি টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করে। বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংক থেকে ৭২ লাখ ৮২ হাজার ২৫৩ জন গ্রাহকের অনুকূলে জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ৩৯০ কোটি ৯ লাখ টাকার সুদ ভর্তুকি দেয়া হয়েছে। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বল্প সুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসেবে দেয়ার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার একটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এ প্যাকেজ থেকে গত জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ১২১ জন উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৫ হাজার ৪২৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এ প্যাকেজের বাস্তবায়ন হার প্রায় ৭৭ শতাংশ।
অন্য একটি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় স্বল্প সুদে কৃষকদের ঋণ দেয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়। এ তহবিল থেকে গত জুলাই পর্যন্ত ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭০ জন কৃষক বা কৃষি ফার্মের অনুকূলে ৪ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। সে হিসাবে এ প্যাকেজের বাস্তবায়ন হার ৮৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। এছাড়া নি¤œ আয়ের পেশাজীবী কৃষক বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ভিন্ন প্যাকেজে ৩ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়। এ তহবিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ৩ লাখ ৭১ হাজার ৮৫২ জন্য কৃষক বা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকে ২ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। সে হিসেবে এ প্যাকেজের বাস্তবায়ন হার ৭২ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, সার্বিকভাবে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক সন্তুষ্ট। তবে বেশ কিছুদিন রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকা ও অন্যান্য প্যাকেজ থেকে ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় ঋণ পেয়েছে। তাই কয়েকটা প্যাকেজের প্রতি ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম, দুয়েকটা প্যাকেজ বাস্তবায়নের গতি ধীর।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com