শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:০৪ পূর্বাহ্ন

আপনাদের দিন ঘনিয়ে এসেছে

শাহ্জাহান সাজু:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২ অক্টোবর, ২০২১

সরকারের উদ্দেশ্যে ফখরুল 
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচন-নির্বাচন খেলা আর হবে না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। আপনাদের দিন ঘনিয়ে এসেছে, দিন শেষ।’ গতকাল শনিবার (২ অক্টোবর) রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সিটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘২০০১ সালের ১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সর্বশেষ নিরপেক্ষ নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনাসভায় সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। সরকারের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মানুষের ভাষা পড়েন, দেয়ালের ভাষা পড়েন। তত্বাবধায়ক সরকারের বিধান করে সরে যান। নিরপেক্ষকালীন সরকার ছাড়া আমরা কোনও নির্বাচনে অংশ নেবো না।’ এসময় তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আসুন, ঐক্যবদ্ধভাবে দানবকে সরিয়ে দেই।’
দেশের গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমাদের দায় আছে, বিএনপিকে এই দায় বহন করতে হবে। সুশৃঙ্খলভাবে মাঠ বোঝাই করবেন, যখন আন্দোলনের ডাক আসবে। তখন রাস্তা বোঝাই করবেন, মাঠ বোঝাই করবেন। আন্দোলন ছাড়া এই দানবকে সরানো যাবে না। সমস্ত জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে হবে।’
খালেদা জিয়া উড়ে এসে জুড়ে বসেননি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নিজের চেহারার দিকে দেখুন। বেগম খালেদা জিয়া উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। জনগণের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। যখনই তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, সিধা পথে। বাঁকা পথে আসেননি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘পেছনের পথ দিয়ে ক্ষমতায় আপনারা আসেন। মঈন-ফখরুদ্দিনের সঙ্গে সন্ধি করে ক্ষমতায় এসেছেন; এ কথা দেশের মানুষ জানে। এখনও তাদের সঙ্গে আঁতাত করেই খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছেন। তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় আট হাজার মাইল দূরে নির্বাসিত অবস্থায় আছেন।’ বিএনপির মহাসচিব অভিযোগ করেন, ‘বাংলাদেশের যারা শত্রু, এইদেশে যারা গণতন্ত্র চায় না। ২০০১ সালের নির্বাচিত সরকারকে কীভাবে ক্ষমতা থেকে নামানো যায়, সব অপচেষ্টা শত্রুরা করেছে।’ হরতালে আওয়ামী লীগের রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারবে না দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনারা বরাবরই সন্ত্রাস করে ক্ষমতায় এসেছেন।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের রাশিয়া সফর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি কিছুদিন আগে রাশিয়া সফর করেছেন। ওই দেশেরও আমাদের মতো অবস্থা। যে থাকে সরকারে, সে হয় প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও পার্থক্য নাই। দিনের বেলায় কীভাবে ভোট চুরি করা যায়, সেটা তিনি দেখে এসেছেন। কিছুদিন পর তার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, এখন ভালো কথা বেরোচ্ছে।’ স্লোগানরত বিএনপির নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছোটখাটো ঘটনা দিয়ে আসল ঘটনাকে চাপ দেওয়া যাবে না। স্লোগান দিয়ে আন্দোলন হয় না। সমস্ত সংগঠনগুলোকে সেইভাবে তৈরি করতে হবে।’
ফখরুল সভায় জানান, আলোচনা সভার প্রধান অতিথি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অত্যন্ত জরুরি কাজে থাকায় আসতে পারেননি। আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরীসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।
পদের জন্য দৌড়াবেন না, নেতাকর্মীদের ফখরুল: শুধু পদের জন্য দৌড়াদৌড়ি না করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, শুধু পদের জন্য দৌড়াবেন না। নতুন কমিটি হচ্ছে তার জন্য মাঠ বোঝাই করে দেবেন না। মাঠ বোঝাই করবেন যখন আন্দোলনের ডাক আসবে। মাঠ বোঝাই করবেন যখন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা মাঠে নামবো। গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য মাঠে নামবো। তখন মাঠ বোঝাই করবেন, রাস্তা বোঝাই করবেন। গতকাল শনিবার (২ অক্টোবর) রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘২০০১ সালের ১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সর্বশেষ নিরপেক্ষ নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি এ কথা বলেন। সভার শুরুতে ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান বক্তব্য দেন। তার বক্তব্য শেষে সেখানে থাকা নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে শুরু করলে মঞ্চের চেয়ার থেকে উঠে আসেন বিএনপি মহাসচিব। ডায়াসে মাইক নিয়ে ক্ষুব্ধকণ্ঠে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তিনি নেতাকর্মীদের ধমক দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ডোন্ট ডু ইট। উত্তর-দক্ষিণ স্লোগান দেবেন না। কোনো স্লোগান হবে না। আজ এটা আলোচনা সভা, জনসভা নয়। প্লিজ, শৃঙ্খলা রক্ষা করো। তরুণদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সভার গুরুত্ব অনুধাবন করো। বিএনপির সভার জায়গাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। শৃঙ্খলা রক্ষা করতে না পারলে সভা করা যাবে না আর। দয়া করে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করো না। আমাদের প্রেস ক্লাবে সভা হওয়ার কথা ছিল, সেখানেও বন্ধ হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সাংবাদিক মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক দিলারা জামান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
বিএনপির আলোচনা সভা জনসভায় রূপান্তরিত: রাজধানী ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে বিএনপি’র আলোচনা সভা জনসভায় রূপান্তরিত হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় আলোচনা সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৯টা থেকে খ- খ- মিছিল নিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন সাংগঠনিক এলাকা থেকে আলোচনা সভাস্থলে আসা শুরু করে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটের হলরুম কয়েক হাজার বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের দ্বারা কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এ সময় হলরুমে জায়গা না হওয়ায় সহস্রাধিক নেতাকর্মী হলরুমের বাইরে অবস্থান নেয়। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা ‘তারেক রহমান’, ‘খালেদা জিয়া’, ‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো, স্বৈরাচারের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’ ইত্যাদি স্লোগানে পুরো ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউট প্রকম্পিত করে তোলে। আলোচনা সভাস্থলে ইতোমধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, সাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বাংলাদেশে সর্বশেষ নিরপেক্ষ ও জনগণের অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই দিবসটিতে নির্বাচনকালীন সময়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আবশ্যকতাকে তুলে ধরার জন্য ১ অক্টোবর প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিএনপির স্থায়ী কমিটি। পরে তা পরিবর্তন করে ইঞ্জিনিয়ার ইনিস্টিউটে আজ শনিবার (২ অক্টোবর) করার সিদ্ধান্ত নেয় দলটি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com