সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৯ অপরাহ্ন

চরম তাপমাত্রায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরের তালিকায় শীর্ষে ঢাকা 

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২১

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিতে হবে

বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শহরগুলোয় জনসংখ্যাও বাড়ছে, সেই সঙ্গে পৃথিবীর শহরগুলোয় তাপমাত্রাও চরমভাবে বাড়ছে। আর এই চরম উষ্ণতার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরের তালিকায় ঢাকা রয়েছে সবার শীর্ষে। সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় আশঙ্কাজনক এ তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাপী চালানো ওই গবেষণায় দেখা গেছে, চরম উষ্ণতার কারণে মানুষের মধ্যে অসুস্থতা ও মৃত্যু বাড়ছে, যার ফলে বাংলাদেশের মানুষের কর্মক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস-এ গত সোমবার গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটা, ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনা এবং ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একদল গবেষক যৌথভাবে গবেষণাটি করেছেন।
চরম তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকাতেও ওপরের দিকে ঠাঁই হয়েছে বাংলাদেশের। এ তালিকায় শীর্ষস্থানে ভারত, এর পরেই রয়েছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর ঢাকা প্রসঙ্গে ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৮৩ সালে এই শহরে জনসংখ্যা ৪০ লাখ থাকলেও এখন দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ বসবাস করে। গবেষণায় বলা হয়েছে, শহরগুলোতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু অনেক জায়গায় জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির কারণে সেখানকার তাপমাত্রা চরম হয়ে উঠছে। বিশেষ করে, গত কয়েক দশকে লাখ লাখ মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসায় সেখানে দ্রুত জনসংখ্যার বৃদ্ধি হয়েছে, সেই সঙ্গে বেড়েছে তাপমাত্রা। গবেষণায় ১৯৮৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৩ হাজারের বেশি শহরের দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকেরা। এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে একই সময়ে শহরগুলোর মোট জনসংখ্যার তথ্য। গবেষকেরা বলছেন, শহরের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে সেটিকে ‘চরম উষ্ণ’ বলা যায়। গবেষণায় দ্রুত উষ্ণতা বেড়েছে, বিশ্বের এমন ২৫টি দেশের কত মানুষ উষ্ণায়নের কারণে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছেন, তার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ তালিকায় শীর্ষে থাকা ভারতে উষ্ণায়নের কারণে ১১০ কোটি ৪০ লাখ মানুষ কর্মক্ষমতা হ্রাসের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশে ১৬ কোটি ৬০ লাখ মানুষ এই ঝুঁকিতে রয়েছেন। তবে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ৩৭ শতাংশ ভূমিকা রেখেছে। বাকি ৬৩ শতাংশ ঘটেছে স্থানীয় কারণ। ১৪ কোটি ৩১ লাখ মানুষ কর্মক্ষমতা হারানোর ঝুঁকিতে থাকায় তালিকায় পাকিস্তান তৃতীয়, ১১ কোটি ৭৫ লাখ মানুষের ঝুঁকির কারণে চীন চতুর্থ এবং ৬ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ঝুঁকিতে থাকায় নাইজেরিয়া পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
৮৪ শতাংশই রাজধানী ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামমুখী: দেশের অভ্যন্তরে যেসব অভিবাসন হয় তার ৮৪ শতাংশই রাজধানী ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামমুখী। যেসব পরিবারের অকৃষি খাত থেকে আয় বেশি থাকে, সেসব পরিবারে অভিবাসন কম হয়। তবে যেসব জেলা থেকে অভিবাসন বাড়ছে, সেখানে অনাবাদি জমি ও পতিত জমি বাড়ছে। ফলে গ্রামীণ পর্যায়ে শিল্পায়ন ও অকৃষি খাতের বিকাশে পদক্ষেপ প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান আয়োজিত ‘বিআইডিএস ফোর্টনাইটলি সেমিনার-২০২১: লোকাল ননফার্ম অপরচুনিটিস অ্যান্ড মাইগ্রেশন ডিসিশনস: এভিডেন্স ফ্রম বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. কাজী ইকবাল বলেন, কাজের জন্য দেশের ভেতরে যে মাইগ্রেশন হয়, তার মধ্যে ৮৪ দশমিক ৩ শতাংশই ঢাকা ও চট্টগ্রামে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে নীতিগত পরিবর্তন আনতে হবে। সেকেন্ডারি টাউন করা যেতে পারে জানিয়ে ড. কাজী ইকবাল বলেন, গ্রামের আশপাশে আরেকটা শহর, ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব করতে পারলে মানুষ শহরমুখী হবে না। কোন ধরনের ইন্ডাস্ট্রি কোথায় থাকলে দেশের ইকোনমিক গ্রোথ ও ডেভেলপমেন্ট হবে, সেটা নিয়ে সরকারের স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের আয় ১ ডলার কমলে অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ফলে অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি বিবেচনায় নিতে হবে। পরিবারগুলোর অকৃষি খাতের আয় ৫৮ শতাংশ। সেখানে পৌরসভা এলাকার পরিবারগুলোর অকৃষি খাতের আয় ৮৪ শতাংশ। অন্যদিকে গ্রামের মানুষের অকৃষি খাতের আয় প্রায় ৪৯ শতাংশ। যেসব ইউনিয়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-কারখানা গড়ে উঠেছে, সেখানকার পরিবারগুলোয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি দ্রুত হচ্ছে। এসব অঞ্চল থেকে কাজের সন্ধানে এসব পরিবারের কেউ অন্য অঞ্চলে যাচ্ছে কম। এজন্য শিল্প-কলকারখানা বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি ইউনিয়ন পর্যায়ে শিল্প-কারখানার অবকাঠামোগত উন্নয়ন করতে হবে। অনেক ইউনিয়নে এসএমই থাকায় সেখানকার মানুষের আয় বাড়ছে। তাই তারা কাজের জন্য অন্য জেলায় যাচ্ছেন না। এজন্য স্থানীয়ভাবে অকৃষি খাতে কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে। চ্যানেল আইয়ের পরিচালক (বার্তা) শাইখ সিরাজ বলেন, উন্নয়ন পরিকল্পনায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গুরুত্বের পাশাপাশি খাদ্য উৎপাদন ও কৃষকের রক্ষার গুরুত্ব দিতে হবে। গ্রামে ননফার্ম বা অকৃষি খাতের বিকাশ ঘটলে খাদ্য কোথায় উৎপাদন হবে, সেটির সংকুলান কীভাবে হবে সে বিষয়ে যথেষ্ট পদক্ষেপ থাকতে হবে। তা না হলে অর্থ থাকবে কিন্তু খাদ্য পাওয়া মুশকিল হবে। তাই আধুনিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক কৃষিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাহলে কাজের জন্য শহরমুখী প্রবণতা কমবে।
শাইখ সিরাজ তার বক্তব্যে আরো বলেন, শিল্প-কলকারখানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যে নিয়ম-নীতিগুলোর কথা বলা আছে, সেগুলো তো কেউ মানে না। গ্রামের ভেতরে কারখানা গড়ে তোলা হলে সেটি আরো বড় ধরনের বিপর্যয় হবে। অনেক মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি জাপানে কৃষিতে স্মার্ট ফার্মিংয়ে বিনিয়োগ করেছে। সরকারসহ সবার সে বিষয়টিতেই বেশি মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।
সীমিত সম্পদ, অসীম চাহিদাÍএমন বাস্তবতা মেনে কৃষি ও অকৃষি দুটোকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন বিআইডিএসের মহাপরিচালক। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, এসএমই ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট করায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের অনেক পরিবারে আয় বেড়েছে। এর মানে ইউনিয়ন বা উপজেলা পর্যায়ে যদি শিল্প হাব করতে পারি, তাহলে কাজের জন্য জেলার বাইরে যাওয়ার প্রবণতা কমে আসবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com