কয়েক বছর ধরেই বোরোনির্ভরতা ও ভুট্টা আবাদ বৃদ্ধির কারণে আমন আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জেলার কৃষকরা। তবে যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর জেলার কৃষকদের জন্য সুসংবাদ দিচ্ছে ব্রি ধান৭৫। আমনের আগাম জাতটি ১০৫ দিনেই ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা। ফলন দেবে হেক্টরপ্রতি পাঁচ টনের বেশি। এ ধান আবাদের পর গম, মসুর, সরিষা, ভুট্টা এবং অন্যান্য শীতকালীন ফসল চাষের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জানা গেছে, ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত সিরিয়াল সিস্টেম ইনিশিয়েটিভ ফর সাউথ এশিয়া (সিএসআইএসএ ওওও) প্রকল্পের অধীনে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের রাইস ফার্মিং সিস্টেমস বিভাগ আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) সহযোগিতায় ঝিনাইদহ জেলার ফুলহরি গ্রামে কৃষক মো. লিয়াকত আলীর জমিতে এ মাঠ পরীক্ষা বাস্তবায়ন করেছে। ব্রি’র ট্রায়াল প্লটে এরই মধ্যে ধান কাটা শুরু করেছে। মাঠ পরীক্ষার ফলাফলের তথ্যে দেখা গেছে, ২০ দিনের চারা ব্যবহার করে ১০৫ দিনেই ব্রি ধান৭৫ কাটা যায় এবং ফলন হেক্টরপ্রতি পাঁচ টনের বেশি হয়েছে। ২০ জুন থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এ ধানের বীজতলা বপন করা হয়।সিএসআইএসএ প্রকল্পের মাধ্যমে তিন বছর ধরে এ জাতের সম্প্রসারণ, বাজার উন্নয়ন, সংযোগ এবং ব্র্যান্ড সৃষ্টির জন্য কাজ করছে। যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর জেলায় এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে জাতটি চাষাবাদ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ জাতের ধানের চাল আকারে লম্বা ও চিকন। এছাড়া রান্নার সময় এবং পরে ধানটি থেকে হালকা ঘ্রাণ বের হয়। ধানটি লম্বা ও চিকন হওয়ার কারণে কৃষকরা এ জাতের ধান বেশি মূল্যে বিক্রি করতে পারছেন। ফলে তারা এ জাতটি চাষ করতে আরো বেশি আগ্রহী হচ্ছেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, এ জাতের উচ্চফলনশীলতার সম্ভাবনার পাশাপাশি চাষের স্বল্প মেয়াদকাল কৃষকদের জন্য একটি নতুন জাত চাষের দুয়ার খুলে দেবে। ফলে কৃষকরা তাড়াতাড়ি ফসল কেটে বেশি মূল্য পাওয়ার পাশাপাশি পরবর্তী রবিশস্য সময়মতো রোপণ করতে পারবেন। জাতটি সারা দেশে শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধি করে কৃষকদের জন্য সুসংবাদ বয়ে আনবে।
পরীক্ষামূলক চাষকারী কৃষক মো. লিয়াকত আলী বলেন, আমাদের অঞ্চলে বোরো ও ভুট্টার আবাদের নির্ভরতা বেশি। তবে স্বল্পমেয়াদে আমন জাতের ধানের ফলন ও পরিচর্যার প্রক্রিয়া বেশ ভালো। এটি ধানের পাশাপাশি খড়ের উচ্চমূল্য পেতেও অনেক সাহায্য করছে। আবার ধানের দাম বেশ ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের অঞ্চলের কৃষকরা ধানটির আবাদে আরো আগ্রহী হবেন।
জানা গেছে, প্রকল্প থেকে স্থানীয় বীজ কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও কাজ করছে। কৃষকদের নেতৃত্ব দিচ্ছে, যাতে এর বীজ স্থানীয় পর্যায়ে পাওয়া যায়। তিনটি অটো রাইস মিলের সঙ্গেও কাজ চলমান। আমনের ফসল কাটার পর তারা এ চালকে প্রিমিয়াম রাইস ব্রি ধান৭৫ নামে ব্র্যান্ডিং করতে সম্মত হয়েছে। নভেম্বরের শুরুতে, ভোক্তারা বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এ জাতের চাল কিনতে পারবেন।
এ বিষয়ে ব্রি’র রাইস ফার্মিং সিস্টেমস বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আমিনা খাতুন বলেন, ব্রি জাতটির সর্বোচ্চ ফলনের জন্য ২০ জুলাই থেকে ২০ আগস্টের মধ্যে ধান বপনের সুপারিশ করে থাকে। তবে জুনের শেষে বা জুলাইয়ের প্রথম দিকে বপন করে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ধান কাটার পরও বেশ ভালো ফলন পাওয়া গিয়েছে। জাতটি অন্যান্য উচ্চফলনশীল দীর্ঘমেয়াদি জাতের তুলনায় আগাম উচ্চফলন দিতে পারে এবং আগাম পরিপক্বতার কারণে কৃষকরা সহজে এবং সময়মতো মসুর ডাল, সরিষা, ভুট্টা বা অন্যান্য উচ্চমূল্যের শীতকালীন ফসল চাষ করতে পারেন। ফলে এটি জাতীয় শস্য নিবিড়তা বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।