রাজধানীর মিরপুরের পল্লবী এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর উদ্ধার হওয়া তিন বান্ধবীকে শনিবার আদালতে পাঠানো হবে। বর্তমানে তারা তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আছেন। শনিবার আদালতে তাদের জবানবন্দির উপর নির্ভর করবে ওই মামলায় গ্রেফতার চার আসামির ভবিষ্যৎ। যদি তাদের জাপান যাওয়ার প্রলোভনের সাথে ওই আসামিদের সম্পৃক্ততার কথা জানান ভিকটিমরা, তবে আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন ও মানবপাচার আইনে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। কিন্তু ভিকটিমরা যদি তাদের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ না তুলেন তাহলে জামিন পাবেন গ্রেফতার চার আসামি।
গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন পল্লবী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পারভেজ। তিনি বলেছেন, ৩০ সেপ্টেম্বর পল্লবী থেকে নিখোঁজ হওয়া তিন কলেজছাত্রীকে ৬ অক্টোবর র্যাব উদ্ধার করার পর তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়। শনিবার আদালতে পাঠানো হবে। আদালতে তাদের জবানবন্দির পর পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হতে পারে ওই তিন বান্ধবীকে।
ওসি পারভেজ আরো জানান, প্রাথমিকভাবে মামলায় গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বা চার্জশিট দেয়ার ক্ষেত্রে ভিকটিমদের আদালতে জবানবন্দি উপর নির্ভর করবে। নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবার দাবি করেছিল, বিদেশে নেয়ার প্রলোভনে তাদের নিয়ে গেছে একটি নারী পাচারকারী চক্র। এ জন্য তারা বাসা থেকে অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়েছে। এ ঘটনায় নিসার মা মাহমুদা আক্তার পল্লবী থানায় অপহরণ মামলা করেন। মামলার পর এক তরুণীসহ চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার চারজনের মধ্যে দুজন সহদোর। এ ছাড়া তাদের মধ্যে এক তরুণীও রয়েছেন। গ্রেফতার দুই ভাই হলেন- তরিকুল্লাহ (১৯) ও তার বড় ভাই রকিবুল্লাহ (২০)। বাকি দুজনের বয়স ১৮ বছর। বর্তমানে তারা কারাগারে আছেন।
অবশ্য ৬ অক্টোবর তাদেরকে উদ্ধারের পর সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ জানায়, ওই তিন ছাত্রী করোনার কারণে দীর্ঘদিন কলেজ বন্ধ থাকায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। দিন দিন লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এর ফলে তাদের পরিবার পড়াশোনা ও ধর্মীয় বিধান মেনে চলার জন্য চাপ দিত। অতিরিক্ত পারিবারিক বিধিনিষেধের কারণে বিরক্ত হয়ে পড়ে ওই ছাত্রীরা। তাদের শিকারোক্তির বরাত দিয়ে র্যাব আরো জানায়, ওই তিন ছাত্রী স্বেচ্ছায় বাড়ি ছাড়েন। তারা চুল কেটে ছোট করে ছদ্মবেশ ধারণ করে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছিলেন। তারা কক্সবাজারও গিয়েছিলেন।
র্যাব ৪-এর উপঅধিনায়ক মেজর রবি খান গণমাধ্যমকে বলেন, ওই তিন ছাত্রী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তাদের শনাক্ত করতে কাজ করছিলাম। তাদের (তিন ছাত্রী) অবস্থান শনাক্ত করার পর র্যাবের একটি দল কক্সবাজারে যায়। সেখানে র্যাব সদস্যরা তাদের (তিন ছাত্রী) অনুসরণ করে। ৫ অক্টোবর তারা কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হলে আমাদের সদস্যরাও তাদের অনুসরণ করে ঢাকায় আসেন। মিরপুরে প্রবেশ করার সময় ৬ অক্টোবর সকালে তাদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়। ওই দিন বিকেলে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই তিন ছাত্রীর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন র্যাব-৪-এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক। মোজাম্মেল হক জানান, এই তিন ছাত্রী কক্সবাজার হয়ে জাপান যেতে চেয়েছিলেন। তারা মূলত উচ্চাভিলাষী জীবনযাপন পছন্দ করতেন। দীর্ঘদিন বাসায় আবদ্ধ থাকার সময় তারা পশ্চিমা সংস্কৃতি, বিশেষ করে জাপানি সংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন।
তারা অধিক পরিমাণে জাপানি সিনেমা-সিরিয়াল, সাংস্কৃতিক প্রোগ্রাম দেখে দেখে দেশটির ভাষা কিছুটা আয়ত্তও করেছিলেন। ‘তারা দেশ ছেড়ে স্বাধীন জীবনযাপন ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করার কারণ হিসেবে জাপানি সংস্কৃতিতে নারী পুরুষের সমঅধিকার, স্বাধীনতা, দত্তক নেয়ার সুযোগ ও অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক বিধিনিষেধ না থাকার কারণের কথা উল্লেখ করেছে র্যাবের কাছে।’
পরিবারের কাউকে কিছু না বলে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টার দিকে সবাই নিজ নিজ বাসা থেকে কলেজ ব্যাগসহ কলেজ ড্রেস পরে বের হয়ে নিখোঁজ হন ওই তিন বান্ধবী।
ওই তিন ছাত্রী হলেন- কাজী দিলখুশ জান্নাত নিসা, কানিজ ফাতেমা ও স্নেহা আক্তার। তারা সবাই দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এর মধ্যে নিসা মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউট, স্নেহা পল্লবী ডিগ্রি কলেজ ও কানিজ দুয়ারিপাড়া কলেজের শিক্ষার্থী। রাজধানীর পল্লবীর কলেজপড়ুয়া এই তিন বান্ধবী ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে বাসা থেকে টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও শিক্ষাসনদ নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন। সাত দিন পর মিরপুরের বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে ৬ অক্টোবর ভোরে তাদেরকে উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।