শুধু চিনি, মুরগী,সয়াবিন তেলে দামই নয়; বাজারে অধিকাংশ নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলেছে। কয়েকদিন আগেও ৪০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হতো। হঠাৎ করে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা দরে। একইভাবে ১১০ টাকা কেজি দরের ব্রয়লার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচের দাম এখনও ২০০ থেকে ২২০ টাকার বেশি। মোটা চালের দাম এখনও ৫০ টাকা কেজি। আর চিকন চালের দাম ৭০ টাকা কেজি। এভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিপর্যস্ত জনজীবন এবং চাপে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। শুধু নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিই নয়; করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই আমদানি-রফতানি উভয় খাতেই পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়েছে। আবার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় ক্ষতি পোষাতে মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যে মনযোগ দিয়েছে। পণ্য আমাদানি বেড়েছে। এলসি খোলার হিড়িক পড়েছে। একই সঙ্গে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম সর্বোচ্চে উঠেছে। জ্বালানি পণ্যটির বাজার অস্থিতিশীল। এছাড়া বেড়েই চলেছে ডলারের দাম। এতে প্রতিদিনই মান হারাচ্ছে টাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেছেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের পর থেকে বাংলাদেশ খাদ্য বিশেষ করে চাল এবং গমের আমদানি বাড়িয়েছে। এ অর্থবছরে খাদ্য আমদানিতে বাংলাদেশের নির্ভরতা ছিল ৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। গত অর্থবছরে এ আমদানির হার এসে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর ফলে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে সারা বিশ্বের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় মারাত্মক বিঘ্ন ঘটেছে। কার্গো বিমান এ সময় বন্ধ ছিল। এছাড়া মধ্যখানে সুয়েজ খাল বন্ধ থাকার কারণে সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। যার ফলে পৃথিবীব্যাপী খাদ্য ও নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।
বর্তমানে খুচরা বাজারে যে দরে সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে তা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৫৩ টাকা নির্ধারণ করেছে। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। অবশ্য ব্যবসায়ীদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন ও পামঅয়েলের দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। এর আগে ২০১২ সালের মাঝামাঝিতে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ১৩৫ টাকায় উঠেছিল। গত এক দশকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১’শ থেকে ১১৫ টাকার মধ্যে ওঠানামা করলেও গত এক বছর ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দর লাগামহীন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সমুদ্র, আকাশ ও সড়কপথে যথাক্রমে জাহাজ, উড়োজাহাজ ও ট্রাক-টেলরের ভাড়া এবং কনটেইনার, স্ক্যানার, হ্যান্ডলিংসহ বন্দরের আনুষঙ্গিক চার্জসহ সার্বিকভাবে পরিবহন খরচ আগের চেয়ে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রফতানিমুখী ব্যবসায়ীদের মুনাফায় টান পড়েছে। দেশের ভেতরে সড়কপথেও ভাড়া বেড়েছে। ২০১৯ সালে ঢাকা ও এর আশপাশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত একটি কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া ছিল ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এই ভাড়া মোটামুটি কয়েক বছর ধরেই স্থির ছিল। কিন্তু গত দেড় বছরে কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া অন্তত ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এখন ২০ হাজার টাকার কমে এই পথে ট্রাক পাওয়া মুশকিল। করোনাজনিত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ভাড়া বাড়িয়েছেন ট্রাকমালিকেরা। আবার ট্রাকের ঢাকা-চট্টগ্রাম বন্দর-ঢাকা পথে চলতে বড়জোর ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা লাগার কথা। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যজট লাগলে পণ্যবোঝাই ট্রাক-টেলরকে পথে অপেক্ষা করতে হয়। ফলে তখন পাঁচ-সাত দিনও লেগে যায়। এছাড়া পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যাত্রাবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সরকারের বড় বড় প্রকল্পের বিশাল পণ্যের চালান এলে ট্রাক-টেলর ব্যবহৃত হয়। তখন আবার ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে সঙ্কট দেখা দেয়। এই সুযোগে কাভার্ড ভ্যানের ভাড়া ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় ওঠে যায়। এসব সমস্যা সত্ত্বেও বিদেশি ক্রেতা ধরে রাখার স্বার্থে অনেক রফতানিকারক কম মুনাফা করছেন এবং কেউ কেউ লোকসান দিচ্ছেন বলেও শোনা যায়।
এমনিতেই করোনা সংক্রমণে প্রায় দুই বছর ধরে বাধাগ্রস্ত দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে থেকে সামগ্রিক কার্যক্রম। মানুষের আয় না বাড়লেও পণ্যমূল্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি দেখা দিয়েছে। অর্থনীতিতে জোগানের তুলনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণত মূল্যস্ফীতি হয়ে থাকে। বিশেষ করে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, পণ্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বেড়ে যাওয়ার ফলে মুল্যস্ফীতি দেখা যায়। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের আমদানি নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ার ফলে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। আর সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়াই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার কারণ।
এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফরমের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, করোনার কারণে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে মাত্র ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। ছোট ও মাঝারি শিল্প খাত ভালো নেই। আয় ও মজুরি কমায় মানুষের ভোগ কমেছে। খাদ্যব্যয় কমিয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ। ফলে পিছিয়ে পড়াদের সঙ্গে আরও মানুষ যুক্ত হওয়ার চাপ বাড়ছে। এছাড়া রেমিট্যান্সের ঊর্ধ্বগতিতে এক ধরনের ভাঙন ধরেছে। আর উৎপাদন ব্যয়-মূল্যস্ফীতি বাড়ায় চাপে পড়বে নি¤œমধ্যবিত্ত। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রেমিট্যান্সের জাদু শেষ হতে চলেছে। বিদেশে মানুষ কম গেছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে। এ কারণে কর্মসংস্থান ও ভোগের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ড. দেবপ্রিয় বলেন, পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য আর্থিক ও খাদ্য সহায়তায় বরাদ্দ কম। এই বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এছাড়া অর্থনীতির গতি স্বাভাবিক রাখতে পিছিয়ে পড়াদের গণটিকা কর্মসূচির আওতায় আনতে বেসরকারি সংস্থাকে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য অনুয়ায়ী, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে পাঁচ দশমিক ৫৪ শতাংশ। যা জুলাই মাসে ছিল পাঁচ দশমিক ৩৬ শতাংশ। জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। এর মধ্যে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে পাঁচ দশমিক ১৬ শতাংশ। আর খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ছয় দশমিক ১৩ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী চলা করোনা মহামারির মধ্যে দেশগুলোর অর্থনীতি তীব্র চাপের মধ্যে পড়েছে। উৎপাদন কমে যাওয়াসহ নানা উপসর্গে ভুগছে বিশ্ব অর্থনীতি। তবে এশিয়া থেকে আমেরিকা এমনকি ইউরোপের দেশগুলো এখন ধুঁকছে উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। মূলত: বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যসহ নানা ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে বলে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে কমপক্ষে আট ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে সরবরাহ চেইনের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়ে বেড়ে যেতে পারে বিভিন্ন পণ্যের দাম। ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। আর টাকার প্রবাহ ও পণ্যের দাম বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতির হার বাড়তে পারে। এছাড়া কমতে পারে আমদানি, রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহে প্রবৃদ্ধির হার।
সূত্র মতে, করোনা-পরবর্তীকালে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ফলে দেশের অর্থনীতির পালে বা ব্যবসা-বাণিজ্যে হাওয়া লাগবে এটাই স্বাভাবিক। যদিও দেশে ব্যাংক ঋণ, জমির প্রাপ্যতা নিয়ে সমস্যাসহ বিভিন্ন কারণে ব্যবসা করতে নেমে অনেককেই বিপাকে পড়তে হচ্ছে। নানামুখী সমস্যার কারণে তাই দেশে ব্যবসার পরিবেশ সূচকে ১০টির মধ্যে ৬টি সূচকেই বাংলাদেশের অবস্থা নড়বড়ে। তবে ৪টি সূচকে উন্নতির দিকে। ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ৬১। বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ যে ভালো নয়, বিশ্বব্যাংকের পর এবার দেশীয় দুটি প্রতিষ্ঠানের জরিপেও একই চিত্র উঠে এসেছে ‘বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স’ (বিবিএক্স) নামের জরিপে। এটি পরিচালনা করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এবং পলিসি চেঞ্জ বাংলাদেশ।
তবে উন্নত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে বাংলাদেশকে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতির চাপের কারণে অনেক দেশ ক্রমবর্ধমান পণ্য ও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি হচ্ছে। বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে। যা স্বল্প আয়ের লোকদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। করোনার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় মানুষের চলাচল কমেছে। এতে তাদের কাজের ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হয়েছে। কমেছে আয়। ক্রয়ক্ষমতা কমায় উৎপাদিত পণ্যও কিনেছে কম। সব মিলে এ চক্রে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা চাহিদা অনুযায়ী টাকার প্রবাহ বাড়াবে। এদিকে সামনে জাতীয় নির্বাচন। তাই সরকার উভয় সঙ্কটে পড়েছে।
এদিকে বিগত দেড় বছরেরও কম সময়ে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম সর্বোচ্চে উঠেছে। করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই জ্বালানি পণ্যটির বাজার অস্থিতিশীল। বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে বর্তমানে বাজারের অস্থিতিশীলতা চরম আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব অর্থনীতি করোনা মহামারি সামলে উঠার সাথে সাথে বিশ্ববাজারে বাড়ছে এলএনজির চাহিদা। সেই সাথে আসন্ন শীতের মৌসুমের কারণে চাহিদা প্রকট আকার ধারণ করেছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় বাড়ছে না পণ্যটি উৎপাদন ও সরবরাহ। এ কারণে এলএনজির বাজারদর এখন ঊর্ধ্বগামী। চলতি সপ্তাহে এক এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম বেড়েছে ৩৪ ডলার। গত বছরে এলএনজির দাম ছিল ২ ডলারেরও নিচে। অপরদিকে চলতি বছর ইউরোপের বাজারে জ্বালানি পণ্যটির মূল্য ৩০০ শতাংশ বেড়েছে। এলএনজি আমদানির ৯৪ ভাগই এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোতে যায়। এছাড়া বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত গ্যাসের এক-তৃতীয়াংশই ব্যবহার করে এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোতে। তবে বর্তমানে এসব দেশে এলএনজির মজুদ বেশ কম। গ্যাস ক্রয় করতে ক্রেতারা হিমশিম খাচ্ছে।
এছাড়া বেড়েই চলেছে ডলারের দাম। এতে প্রতিদিনই মান হারাচ্ছে টাকা। গত বৃহস্পতিবারও ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় ১০ পয়সা। গত বৃহস্পতিবার আন্ত ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ৮৫ টাকা ৫৭ পয়সা। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রায় প্রতিদিনই ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা হলেও দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এদিকে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাবে খোলাবাজারে চড়েছে ডলারের দাম। খোলাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে এখন খরচ হচ্ছে ৮৯ টাকারও কিছু বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানি আয়ে ধীরগতি ও রেমিট্যান্সপ্রবাহের নি¤œমুখিতার মধ্যে আমদানিতে গতি আসায় অনেক ব্যাংকে দেখা দিয়েছে ডলারের সঙ্কট। ফলে কিছুদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে ডলারের দাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, করোনার আতঙ্ক কাটিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হওয়ায় এখন আমদানি বেশ বাড়ছে। আবার বিলম্বে পরিশোধ শর্তে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়েছিল, সেগুলোর এখন পেমেন্ট করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে ডলারের চাহিদা বেড়েছে। এতে দামও বাড়ছে।
জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমদানি বাড়ায় ডলারের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত অর্থবছরে প্রচুর রেমিট্যান্স আসায় ডলারের সরবরাহ বেড়ে গিয়েছিল। চলতি অর্থবছরে তেমনটি থাকবে বলে মনে হয় না। ইতোমধ্যে তার লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্স বাড়েনি। গত আগস্ট মাসেও আগের তুলনায় কমেছে। সেপ্টেম্বরেও কমেছে। অন্যদিকে আমদানি অনেক বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, সবমিলিয়ে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। আর চাহিদা বাড়লে যে কোনো পণ্যের দাম যেমন বাড়ে; ডলারের দামও তেমনি বাড়ছে। এটাই স্বাভাবিক।
ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। সেসব দেশের মানুষ আগের মতো পণ্য কেনা শুরু করেছে। দেশের পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হয়ে আসছে। তাই পণ্য আমদানির ঋণপত্র বা এলসি খোলার হিড়িক পড়েছে। গত আগস্টে ৭১৮ কোটি ৪০ লাখ (৭ দশমিক ১৮ বিলিয়ন) ডলারের এলসি খুলেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ৫০ পয়সা) টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ ৬১ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই এক মাসে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে এত বিশাল অঙ্কের বিদেশি মুদ্রা খরচ দেখা যায়নি।