জেলায় ড্রাগন চাষের দিকে ঝুুঁকছে কৃষকরা। ড্রাগন চাষ করে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। জানা গেছে, ড্রাগন ফণি মনসা প্রজাতির উদ্ভিদ। এর ফুল রাতে ফোটে, তাই একে নাইট কুইনও বলা হয়। জেলার কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ড্রাগন মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ফল। দুই দশক ধরে আমাদের দেশে এ ফল আমদানি করা হতো। থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও চীনেও বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষাবাদ জনপ্রিয়। বাংলাদেশে এর চাষাবাদ শুরু হয় ২০০৭ সালে।
২০১২ সালে নকলা-নালিতাবাড়ীর সংসদ সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীর নির্দেশে জামালপুর হর্টিকালচার সেন্টার নকলায় ৩২০ জন প্রান্তিক কৃষককে ফলের কাটিংকৃত চারা সরবরাহ করা হয়। তাদের প্রশিক্ষণ দেয়াসহ বিনা খরচে প্রয়োজনীয় উপকরণও সরবরাহ করা হয়। ওই প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে বানের্শ্বদী ইউনিয়নের মোজারবাজার, পোলাদেশী, বাওসা, চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের রামপুর, বাছুরআলগা এলাকার ১০ থেকে ১২ জন কৃষক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ও অনেকেই বসতবাড়ির আঙিনা ও অনাবাদি জমিতে গত কয়েক বছর ধরে ড্রাগন চাষ করছেন। এখন এ কৃষকদের চোখে-মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গেছে।
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গৌরিপুর ইউনিয়নের কালাকুড়ার মো. আল-আমিন গত বছর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত লাল বারী-১ জাতের ড্রাগনের খামার শুরু করে। প্রথম অবস্থায় ৪৫০টি চারা রোপণ করে এক বছরের মধ্যে তার বাগানে ফল উৎপন্ন শুরু হয়েছে। তিনি এখন নিয়মিত চারা উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করছেন।
নকলা উপজেলার টালকী ইউনিয়নের মো. আবুল হোসেন ৪০ শতাংশ জমিতে গড়ে তুলেছেন ড্রাগনের খামার। পাশাপাশি করেছেন মাল্টা বাগান। তিনিও প্রায় এক বছর ধরে লাল ড্রাগন বারি-১ চাষ করছেন।
ড্রাগন ভিটামিন সি, মিনারেল ও আঁশসমৃদ্ধ। বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ডায়াবেটিস, প্যারালাইসিস ও হার্টের রোগ প্রতিরোধেও এটি কার্যকর। উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম। নকলার আবুল হোসেন বলেন, ড্রাগন গাছে সামান্য জৈব সার দিলে চলে। রাসায়নিক সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় না কীটনাশকের। মাসে একবার ছত্রাকনাশক ছিটাতে হয়। তবে শীতকালে সন্ধ্যার পর আলোর ব্যবস্থা করতে হয়। চারা রোপণের এক থেকে দেড় বছর পর ফল ধরে। একবার রোপণ করলে টানা ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। পূর্ণ বয়সের একেকটি চারা থেকে প্রতি বছর ২৫ থেকে ৩০ কেজি ফল পাওয়া যায়। এ গাছের রোগবালাই ও মৃত্যুঝুঁকি নেই বললে চলে।
কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে, শেরপুরের মাটি ও আবহাওয়া ড্রাগন চাষের জন্য উপযোগী। ফলে এ অঞ্চলে ড্রাগন চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে জেলার কৃষিতে বৈপ্লবিক উন্নতি ঘটবে।
শেরপুরের খামারবাড়ী উপ-পরিচালক ড. মোহিত কুমার দে বাসসকে বলেন, ড্রাগন চাষের জনপ্রিয়তা কৃষকদের মাঝে বেড়েছে। তার কারণ ড্রাগন চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে আমাদের কর্মকর্তারা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।