দিগন্তজোড়া রোপা আমন খেত। শরতের হালকা বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানের শীষ। আগাম জাতের রোপা আমন ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় আগাম জাতের ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ফলন দেখে কৃষকরাও খুশি। সরেজমিনে জয়পুরহাট সদর উপজেলার কোমরগ্রাম, বানিয়াপাড়া, ভূতগাড়ি, নারায়ণপাড়া, তেঘর বিশা, দাদরা জন্তি গ্রাম, বেল আমলা, করিমনগর, পুরানাপৈল এলাকায় মাঠে মাঠে আগাম জাতের রোপা আমন ধান পাকতে শুরু করেছে। পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
কৃষকরা জানান, এ বছর প্রতি বিঘায় আগাম জাতের রোপা আমন ধানের উৎপাদন হয়েছে ১৬-১৮ মণ। খরচ হয়েছে ৪-৬ হাজার টাকা। প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৮২০-৯৫০ টাকায়। সে হিসেবে উৎপাদিত ধান বিক্রি করা হচ্ছে ১৩ হাজার টাকার মতো। ফলে সব খরচ বাদ দিয়েও লাভ থাকছে। আমন ধান ঘরে তুলে সেই জমিতে আগাম আলু চাষের সুযোগ পাবেন কৃষকেরা। সদর উপজেলার করিমনগর এলাকার কৃষক হাফিজুর রহমান। তিনি সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করেছেন। এর মধ্যে দেড় বিঘাতে আগাম হাইব্রিড জাতের ধানি গোল্ড, দুই বিঘাতে স্বর্ণ-৫ আর দুই বিঘাতে রঞ্জিত জাতের ধান রোপণ করেছিলেন। তিনি বলেন, জমিতে রোপণকৃত আগাম জাতের ধানি গোল্ড ধান অনেকটাই কাটা শেষ। এই ধান বিঘাপ্রতি ১৭-১৮ মণ পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমান বাজারে এই ধান বিক্রি হচ্ছে ৮২০-৮৩০ টাকা মণ দরে।
এ বছর সাত বিঘার মধ্যে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আগাম জাতের বিনা ধান-১৭ চাষ করেছেন কোমরগ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম। আর বাকি জমিতে অন্য জাতের ধান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আগাম জাতের বিনা ধান-১৭ কাটা-মাড়াই শেষ পর্যায়ে। এই ধান কাটতে মজুরদের বিঘা প্রতি ২ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। ধান কাটা-মাড়াই শেষে ওই জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণ করা হবে।
কৃষক আব্দুল খালেক, মাসুম হোসেন বলেন, মাঠজুড়ে আমন ধান। আমরাও আগাম জাতের আপন ধান রোপণ করেছি। তাই চারদিকে সবুজের মাঝে শুধু আমাদের খেতের ধান সোনালি হয়ে রয়েছে। আগাম জাতের ধান ছাড়া অন্য জমির ধান গাছে শীষ বের হয়নি। অথচ আমাদের ধান পেকে গেছে। সেটি কেটে ঘরে তোলা হচ্ছে। বিনা-১৭ ধানের ফলন ভালো।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় চলতি মৌসুমে ৬৯ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ২ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ বেশি হয়েছে। রোপা আমনের বিভিন্ন জাতের মধ্যে উপশী জাতের ধানচাষের জন্য ৬৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। কিন্তু তা কমিয়ে ৬১ হাজার ৮১২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। ৫ হাজার ৩৬০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের ধানচাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। এটি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। আর স্থানীয় জাতের ধানচাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭০০ হেক্টর জমি। কিন্তু তা ১০০ হেক্টর কমিয়ে ৬০০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের রোপা আমন ধান চাষ হয়েছে। আগাম জাতের ধানের মধ্যে রয়েছে বিনা ধান-১৭, ব্রি ধান-৭৫ ব্রি ধান-৭২, ব্রি ধান-৮০ এবং আগাম হাইব্রিড জাতের মধ্যে রয়েছে ধানি গোল্ড ও এরাইজ-৭০০৬ জাত।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর ঢাকা পোস্টকে বলেন, চলতি রোপা আমন মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে ছিল। এ বছর ধান খেতের রোগ-বালাই খুবই কম হয়েছে। কৃষকরা আগাম জাতের ধান কাটা-মাড়াই শুরু করেছেন। এসব জমিতে তারা আগাম আলু রোপণ করবেন। এ মৌসুমে শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে ধানের ভালো ফলন হবে।