কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় লক্ষ্মীপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মাল্টা চাষ। যদিও কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশে মাল্টা ছিল একটি বিদেশি ফল। কিছু পাহাড়ি এলাকায় অল্প পরিমানে মাল্টা চাষ হলেও বেশিরভাগই আসতো বিদেশ থেকে। তবে দিন বদলে গেছে। আমদানির পাশাপাশি এখন দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে উন্নত প্রজাতির মাল্টা। আর মাল্টা চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন লক্ষ্মীপুরে চররুহিতা এলাকার ফলচাষি আজম উদ্দিন। তার পাশাপাশি মাল্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন আরো অনেকে। তবে কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, চাষীদের মাল্টা চাষের জন্য বিভিন্ন পরাপর্শ দিচ্ছেন। খরচ কম হওয়ায় দিনদিন মাল্টা চাষের দিকে ঝুকছেন চাষীরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, মাত্র কয়েক বছর আগে বিদেশ থেকে এসে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা এলাকা অল্পকিছু জমি লিজ নিয়ে মাল্টা চাষ শুরু করেন আজম উদ্দিন। এরপর মাল্টা চাষ লাভবান হওয়ায় এখন ৯ একর জমিতে মাল্টা চাষ করছেন তিনি। পেয়েছে সারাদেশে পরিচিতি। বিদেশি এ ফলের দেশীয় চাহিদা মেটাতে অতীতে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে এ জেলায় উৎপাদিত মাল্টা এখন রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার চাহিদা পূরণ করছে। দোকানে বিদেশি ফলের সঙ্গে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এফলটিও বিক্রি হচ্ছে। উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ শুরু করেন আজম উদ্দিন। ২০১৬ সালে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররুহিতা গ্রামে ৯ একর জমিতে গড়ে তোলেন মাল্টার বাগান। বারি মাল্টা-১ জাতের চারা দিয়ে চাষ শুরু করেন। বর্তমানে বাগানে রয়েছে প্রায় এক হাজারের বেশি মাল্টা গাছ। বারি মাল্টা-১ ছাড়াও তার বাগানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের মাল্টা। আর প্রতি কেজি মাল্টা পাইকারী বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। দাম ভালো পাওয়ায় খুশি চাষীরা। এ বাগানের গাছে গাছে ঝুলে রয়েছে রসালো মাল্টা, যা দেখতেই অনেক মানুষ ভীড় জমাচ্ছেন প্রতিদিন। আগে দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে কিছু কিছু মাল্টা চাষ হলেও তা দেশে ব্যাপকতা পায়নি। লক্ষ্মীপুরের মাল্টা চাষিদের বিশ্বাস- এবার দেশের মাল্টাই বাজারে রাজত্ব করবে বলে আশা করেন চাষীরা। মাল্টা চাষী আজম উদ্দিন ও মোকতার হোসেন জানান, তাজা,বিষমুক্ত,সুমিষ্ট লেবু জাতীয় এফলটির কদর বিদেশ থেকে আনা মাল্টার সঙ্গে বেশ পাল্লা দিয়েই বিক্রি হচ্চে এখানকার মাল্টা। ক্রেতা-দোকানির কাছে আমদানি করা হলদে রঙের চেয়ে এ জেলার সবুজ মাল্টার কদর বেশি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এ ফল রপ্তানি করা হয়। ভালো দাম পাওয়ায় এবং অন্য ফসলের চেয়ে মাল্টা চাষে খরচ কম হওয়ায় দিনদিন ঝুঁকছে এখানকার চাষীরা। দিনরাত ১৫/২০জন শ্রমিক বাগানোর পরিচর্যার কাজ করছেন। পাশাপাশি নতুন করে তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থান। যদি প্রতিটি এলাকায় মাল্টা চাষ করা যায়। তাহলে আরো বহুলোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে জানান শ্রমিকরা। লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন বলে, চাষীদের মাল্টা চাষের জন্য বিভিন্ন পরাপর্শ দিচ্ছেন। খরচ কম হওয়ায় দিনদিন মাল্টা চাষের দিকে ঝুকছেন চাষীরা। এখানকার মাল্টা জেলার চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। অন্য ফসলের চেয়ে মাল্টা চাষের জন্য চাষীদের আগ্রহ বাড়ানো জন্য পরামর্শ কৃষি বিভাগের।